ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন

মোঃ আলফাত হোসেনঃ বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন।বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
জীববৈচিত্র্য ভরা এ বনের রয়েছে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
তবে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন সঙ্কটাপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ,শিকার,গাছকাটা, সচেতনতার অভাব এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে বনের মূল্যবান প্রাণি ও সম্পদ।বিশ্বে বিরল প্রজাতির বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসভূমি এই সুন্দরবনে। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪.২ শতাংশ এবং মোট বনাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ জুড়ে থাকা এ বনের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। মূল্যবান প্রানীজ, জলজ ও বনজ সম্পদ মিলে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের আঁধার।এই সুন্দরবন শুধু জীব বৈচিত্রের উৎস নয়, একই সাথে বন সংলগ্ন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকার উৎস হিসাবে অবদান রাখছে। দেশের অন্তত ৪০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কাঠ, মধু, মৎস, অন্যান্য বনজ সম্পদ আহরনের মাধ্যমে ৫-৬ লাখ মানুষ প্রায় সারা বছর জীবিকার জন্য সরাসরি সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল।বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশু-পাখি ও জীবজন্তুঘেরা এ বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃৃত। সুন্দরবনে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে নানান সামুদ্রিক স্রোতধারা, স্বাদুপানির বিশাল জল ও জনাকীর্ণ অঞ্চল। সামুদ্রিক সৈকত, বহু নদী মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, স্বাদু ও লোনা পানির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকায় জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতায় ভরে উঠেছে সুন্দরবন। বাংলাদেশ ও ভারতের নিরবচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে অবস্থিত বিরল জীববৈচিত্র্য ও নৈসর্গিক প্রাকৃতিক লীলাভূমি সুন্দরবনকে ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্বঐতিহ্য ঘোষণা করে। সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের আধার নয়, বরং এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা। মানুষের বেঁচে থাকার এক অনন্য মৌলিক উপাদান অক্সিজেন, যার অন্যতম ভাণ্ডার সুন্দরবন। নানার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাবের হতে উপকূলীয় এলাকার রক্ষা সুন্দরবন প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। নানার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ফলে বিশ্বে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনকে ঘিরে অর্থনীতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়া দূষিত হচ্ছে সেখানকার পানি, বায়ু ও মাটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের আগ্রাসনে গত ২০ বছরে ঘন বনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। মানুষের ক্রমবর্ধমান ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বন, বৃক্ষ ও বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না নির্বিচারে প্রাণ ও প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ।
পৃথিবীর মোট বনভূমির উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে আছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সামুদ্রিক জোয়ারভাটায় প্লাবিত, পলি, পুষ্টি উপাদান, জৈব পদার্থ এবং জীবজন্তুর সমন্বয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ বনভূমি। সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩৩ বর্গকিলোমিটারজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে। ১০২টি দেশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনের অস্তিত্ব, যার মধ্যে বিশ্বে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত। যা বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার ২৩০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৩০ বর্গ কি.মি। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন, যা দেশের মোট আয়তনের ৪ শতাংশ এবং মোট বনভূমি ৪০ শতাংশ। জোয়ারভাটায় ঢেউ খেলানো অসংখ্য নদীর মোহনা অবস্থিত সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে জলাকীর্ণ অঞ্চল। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমির মৃত্তিকা ও বাস্তুসংস্থান অনন্য, যার ফলে এটি নানা ধরনের উদ্ভিদ চমৎকার সমারোহ ও বিন্যাস এবং বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বন বিড়াল, সজারু, উদবিড়াল এবং বন্যশূকরসহ প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত সন্ধানপ্রাপ্ত ৫০টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরবনে আছে ৩৫টি। সুন্দরবনের উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন প্রভৃতি। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর প্রশস্ত এই ম্যানগ্রোভ বনভূমি বিপন্ন সব জীবজন্তু ও উদ্ভিদের বাসস্থান। প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম সুন্দরবন রক্ষা সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।জীববৈচিত্র্য ও নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের গুরুত্ব বলাবাহুল্য। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড চুষে নেয়। বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবন ৬৬২ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকে রাখে। সুন্দরবনের প্রতিরোধ ও উৎপাদন মূলক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধি ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ বনাঞ্চল সমুদ্র থেকে উঠে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো মোকাবিলা করে। গত একশ বছরের মধ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৫০৮টি সাইক্লোনের উৎপত্তি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ সাইক্লোন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে। এসব প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার মানুষ, কৃষি ও অন্যান্য সম্পদ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে সুন্দরবনের ঘন সবুজ বেষ্টনী। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়া, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় হাজার হাজার বাওয়ালি, মৌয়াল ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। কাঠের ওপর নির্ভরশীল শিল্পের কাঁচামালের এক বিশাল অংশ জোগান দিয়ে আসছে সুন্দরবন। এছাড়া বিশ্বঐতিহ্য অংশ হওয়া প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসে, যা থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সুন্দরবন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা জীবন-জীবিকার তাড়নায় অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বন বিভাগ সূত্র মতে গত ১৯ বছরে প্রায় ২২ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। যার ফলে সুন্দরবনের প্রায় ৭২ একর বনাঞ্চল আগুনে পুড়েছে। সত্তরের দশকে ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে উজান থেকে অভিন্ন নদ-নদীর পানি না দেওয়ায় সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ কমে আসে, এতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ৪০ শতাংশ কমে যাওয়া অধিকাংশ নদ-নদী জৌলুস হারিয়েছে। সুন্দরবনের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাশাপাশি বেড়েছে নদ-নদীর পানি ও মাটি দূষণের পরিমাণ। সুন্দরবনের উপকূলীয় ভূমিকে বিকল্প ব্যবহারযোগ্য ভূমি হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে ২০০টি মতো শিল্পকারখানা। ফলে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে ভারী নৌযান। নিয়মিত ভারী নৌযান চলাচল এবং দূষণের ফলে অগণিত অণুজীব, উদ্ভিদ, প্রাণী ও বননির্ভর জীবনসংস্কৃতির ও বাস্তুসংস্থান বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। মাটিতে লবণাক্ততা ও দূষণ বাড়ায় সুন্দরবনে প্রায় ৭০ শতাংশজুড়ে থাকা সুন্দরী গাছ মারা যাচ্ছে। ক্রমেই সুন্দরী গাছ উজাড় হওয়ায় গত ২৫ বছরে ঘন বনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সুন্দরবন যুগ যুগ ধরে বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। যেখানে রয়েছে ৩১ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায়ী বন্যপ্রাণী। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছকাটা ও সচেতনতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বন্যপ্রাণী চোরাচালানের কারণে অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যপ্রাণীর কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ভালো নেই সুন্দবনের রাজা বাঘ। এক দশকে বাঘ কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এক সময় এ বনে ৪০০ প্রজাতির পাখি বাস করলেও কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে ২৭০ প্রজাতিতে।সৃষ্টির শুরু থেকেই শিকার, বসতি স্থাপন, শিল্পের প্রসার, খাদ্যের সংস্থানসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ বার বার প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। মানুষের অধিক চাপ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে সুন্দরবনের পরিমাণ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন, অর্থনীতি ও পর্যটন প্রভৃতির অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কিত। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের জন্য আটটি হুমকি চিহ্নিত করে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এবং সুন্দরবন রক্ষায় এসব হুমকি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নির্দেশ দেন। সুন্দরবনের পানিতে লবণাক্ততা ও দূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি, একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে নদী খনন, বন্যপ্রাণী শিকার, মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমিক্ষয় ও ভাঙন, অবকাঠামো নির্মাণ ও বনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বনটিকে হুমকিতে ফেলেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্রস্থল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শ্বাসমূলীয় বনটি রক্ষায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব ধরনের শিল্পকারখান নির্মাণ ও নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে এবং অপরিকল্পিত বন নিধন,বন্যপ্রাণী হত্যা ও মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)