কালিগঞ্জে শ্মশানঘাট এলাকায় সীমান্ত নদী ইছামতীর বেড়িবাঁধে ধ্বস

রঘুনাথ খাঁঃ সীমান্ত নদী ইছামতির সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের শুইলপুর শ্মশানঘাট নামকস্থানে তিন নং পোল্ডারে ৩০ মিটার বেড়িবাঁধে ধ্বস নেমেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে২৪০ মিটার জুড়ে । শুক্রবার দুপুরে এ ভাঙন ও ফাটল দেখা দেওয়ায় ওই এলাকার মানুষজন বাঁধ ভেঙে ভাড়াসিমলা ও নলতা ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শুইলপুর গ্রামের কিনু গাজীর ছেলে দিনমজুর আকবর আলী গাজী জানান, বসন্তপুর খাদ্য গুদাম থেকে শুইলপুর হয়ে খাঞ্জিয়া বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ইছামতী নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা। এ সীমান্তের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার বোলতলা ও মাহমুদপুর। কয়েক বছর আগে থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার পাশে নদীতে সরকারিভাবে বালি কাটতে অনুমতি দেওয়ায় বসন্তপুর খাদ্য গুদামের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও খাঞ্জিয়া এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। যার প্রভাবে সীমান্তবর্তী কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জনের কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অপরদিকে ভারতের পারে চর জেগে ওঠায় বাংলাদেশের মানচিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাঙনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের ৩০ মিটার জুড়ে নদীতে ধ্বসে যায়। ধ্বসের প্রভাবে ২৪০ মিটার জুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টির কারণে এ ধ্বস সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করে বলেন, আবারো টানা বৃষ্টি হলে গভীর রাতে জোয়ারে লাগলে নদীবাঁধ ভেঙে নলতা ইউনিয়নের দুড়দুড়িয়া, সেয়ারা, মাঘুরালী, নলতা, ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের শুইলপুর, সাতবসু, ব্রজপাটুলি, দাদপুর, খারহাট, দমদমা,সুলতানপুর, পূর্ব নারায়নপুরসহ ২০টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।শুইলপুর গ্রামের সিরাজ গাজী ও মোহাম্মদ গাজী অভিযোগ করে বলেন, শ্মশানঘাট এর নিকটে তাদের চিংড়ি ঘের ও ফসলী জমী রয়েছে। তিন বছর আগে থেকে এখানে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন তারা। রাতের জোয়ারের সাথে বৃষ্টি নামলে তাদেরসহ এলাকার অনেকেরই ঘের ও ফসলী খেত ভেসে যাবে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। বেড়িবাঁধ ধ্বসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে তারা বলেন, ওদের গায়ে গÐারের চামড়া। গালি কেন, মারলেও তাদের কিছু যায় আসে না। ভাঙন ও ফাটল দেখা দেওয়ার ৩০ ঘন্টায়ও ধ্বস ও ফাটল প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাতে এলাকাবাসীকে রাত জেগে পাহারা দেওয়া ছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।
ভাড়াসিমলা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাহিদ জানান, শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ ৬ ফুট চওড়া ছিল। দু’ ফুটের বেশি বেড়িবাঁধ ধ্বসে যাওয়া ছাড়াও আরো এক ফুট চওড়া বেড়িবাঁধ ২৪০ মিটার জুড়ে ফাটল দেখা দেওয়ায় বর্তমানে বেড়িবাঁধ তিন ফুট চওড়ায় পরিণত হয়েছে। গত বছরে এখানে ফাটল দেখা দিলে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়। তারা কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে এ ধ্বস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধ্বস নামার বিষয়টি অবহিত করলেও শনিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড -১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শুভেন্দু বিশ্বাস ও সেকশান অফিসার মাসুদ রানা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। বাঁধ সংস্কারের জন্য বালি, বাঁশ, বল্লম ছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রবিবার থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানানোয় তারা হতাশ হয়েছেন। গভীর রাতে জোয়ার লাগলে একই সাথে বৃষ্টি শুরু হলে ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের মানুষজনের কি উপায় হবে তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর কালিগঞ্জের তিন নং পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা সেকশান অফিসার মাসুদ রানা বলেন, গত বছর থেকে শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় ফাটল সম্পর্কে তারা সচেতন ছিলেন। দ্রæত কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শুক্রবার ৩০ মিটার লম্বা জায়গা জুড়ে দেড়ফুট করে বেড়িবাঁধে ধ্বস নামায় ও দীর্ঘ এলাকায় ফাটল দেখা দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সংস্কার করার জন্য বালি, বল্লম ও বাঁশসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাতের মধ্যে যোগাড় করে রবিবার সকাল থেকে তারা কাজ শুরু করবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)