বিদ্যালয়ের গাছ ও জমি বিক্রির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
হাফিজুর রহমান :প্রধান সড়কের পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি ৪০ শতক জমি কোটি টাকা বিক্রি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবেক প্রধান শিক্ষক শেখ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ১০৬ নং শ্রীধর কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ব্যাপারে ঐ বিদ্যালয়ের সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ আলাউদ্দিন এবং তার পিতা শেখ হাজির উদ্দিন চাচা আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিভাবক, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রাক্তন ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে গত ২৭ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের সূত্র এবং গত বৃহস্পতিবার সরে জমিনে বেলা ১১ টার সময় শ্রীধর কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে শেখ আবুল হোসেন, রেজাউল করিম, শেখ আহমাদ আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম এবং অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম সানা সহ শত শত ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ১৯৯০ সালে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে একটি সভার মাধ্যমে স্কুল প্রতিষ্ঠা করার মত বিনিময় করেন। ঐ সময় এলাকার প্রভাবশালী শ্রীধর কাটি গ্রামের শেখ হাজির উদ্দিন আহমেদ এবং শেখ আমিনুদ্দিন আহমেদ কালিগঞ্জ – বিষ্ণুপুর মহাসড়কের পাশে শ্রীধর কাটি নামক স্থানে শেখ হাজির উদ্দিনের পুত্র চখুএআলাউদ্দিনকে শিক্ষক করার শর্তে সাবেক এস এ ৫৯ নং খতিয়ানে ১৬০ দাগ ৪০ শতক জমি গত১২/১১/১৯৯০তারিখে ৭২৫২ নং দলিলে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখে দেন। সেই থাকে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে চলে আসছিল। কিন্তু ধুরন্ধর শেখ হাজির উদ্দিন আহমেদ এবং আমিনুদ্দিন আহমেদ দলিলের একটি জায়গায় উল্লেখ করে যে জমি দেওয়ার পরে যদি স্কুল না হয় তাহলে উক্ত জমি তাদের অনুকূলে ফেরত চলে আসবে। কিন্তু ৯০ সাল হতে ওই স্থানেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে চলে আসছিল এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে ওই বিদ্যালয়ে শেখ আলাউদ্দিন প্রথমে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরী শুরু করে একই বিদ্যালয় থেকে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে ২০২০ সালে তিনি অবসরে চলে যান। ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকতে স্কুলের যাবতীয় হিসাব পত্র এবং জমি জমার কাগজপত্র সেই দেখাশুনো এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতো।যে কারণে সে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করার সহজ হয় তার এবং তার পরিবারের জন্য। যে কারণে ১৯৯০ সালে মাঠ জরিপে শ্রীধর কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির পক্ষে সেক্রেটারির নামে রেকর্ড হয়ে হাল ২৩০ দাগে ডিপি ৫৭ নং খতিয়ানে ৪০ শতক জমি রেকর্ড হয়। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার ভূমি অফিস হতে মিউটেশন বা নাম পত্তন জয়পত্র কাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৬৫ / 1x-(p)/২০১২-১৪ কেসে এস.এ খারিজ মতে ৪০ শতক জমি বিদ্যালয় এর নামে ৯৮ নং খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়। সেই থেকে বিদ্যালয় ভোগ দখল করলেও ফাইনাল বি এস রেকর্ড অর্থাৎ প্রিন্ট করচায় ধুরন্ধর তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন তার বাবা হাজির উদ্দিনের নামে ২ নং খতিয়ানে ৪০ শতক জমি স্কুলের পরিবর্তে নিজ নামে রেকর্ড করে নেয়। যাহাতে পরবর্তীতে এস, এ রেকর্ডের মালিকের নামের সাথে বর্তমান রেকর্ড এর জমি মিল থাকে। পরবর্তীতে এই জমি অন্যত্র বিক্রি করার ফাঁদ পাতানো শেখ আলাউদ্দিন যতদিন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিল ততদিন স্কুলের কোন কাগজপত্র কোন শিক্ষক বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্যান্য সদস্যদের দেখানো বাজানো হয়নি ।মনে করেনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন ভবনের অনুমোদন হলে ওই সময় ধুরন্ধর প্রধান শিক্ষক রাস্তার পাশের বাবার নামে রেকর্ড করা জমির দাম বেশি হওয়ায় গোপনে শ্রীধর কাঠি গ্রামের সীমানায় বোজুয়ামৌজায় ডিপি ২২২ নং খতিয়ানে ৩২৭ দাগে ২০ শতক জমি স্কুলের নামে ক্রয় করে রেকর্ড করে দিলেও পুরনো ভবনের ৪০ শতক জমি নামে রেকর্ড করে নিয়ে সেখানে নতুন ভবন তৈরি করে নেয়। ভবিষ্যতে যাহাতে এই স্কুল ভেঙ্গে ফাঁকা করে বিক্রি করা যায় সেই পরিকল্পনা মোতাবেক প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন অবসর গ্রহণের পরপরই স্কুলের নামে প্রধান সড়কের পাশে ওই ৪০ শতক জমি আড়াই লক্ষ টাকা শতক হিসাবে শ্রীধর কাটি গ্রামের মৃত ইয়ার আলী শিকারির পুত্র আবুল কালাম শিকারী, একই গ্রামের নুর ইসলাম শখের পুত্র আব্দুর রাজ্জাক, মৃত মফিজ উদ্দিন শিকারির পুত্র দাউদ শিকারি, হোগলা গ্রামের মৃত মোকসেদ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম এবং মুকুন্দ মধুসূদনপুর গ্রামের বর্তমান হোগলা গ্রামের গোলদার খার পুত্র জাকির হোসেন এবং প্রবাসী আবুল খার নিকট ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সভাপতি ও অন্যান্য সদস্য ওদেরকে না জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন তথ্য গোপন করে গোপনে ১ কোটি টাকায় উক্ত জমি তাদের নামে পৃথক পৃথক দলিলে লিখে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় জমির ক্রেতারা বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে দ্রুত জমি বিক্রয় জন্য সাইনবোর্ড টাঙানো নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ওই সময় তারা প্রতিবাদ করে বিভিন্ন দপ্তরে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এ বিষয়ে স্কুলে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত সরকারের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে আরেক সিনিয়র সহকারী শিক্ষক অশোক কুমার মন্ডল জানান স্কুলের যাবতীয় কাগজপত্র, জমির কাগজ সবকিছু প্রধান শিক্ষকের নিকট থাকে স্কুলে কোন কাগজপত্র নাই। সেই সুযোগে যদি তার বাবার নামে রেকর্ড করে গোপনে লিখে দেয় তা হলেআমরা জানবো কি করে? তবে বিক্রয়ের বিষয়টি তারা কিছুই জানেন না। ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম সানা সাংবাদিকদের জানান স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ওই রাস্তার পাশের স্কুলে সে পড়াশোনা শেষ করে আজ সে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়েছে। কিন্তু একটু কিছুই জানতে পারলাম না অথচ স্কুলের জায়গা বিক্রি হয়ে গেল এটা কি করে সম্ভব। সরকারি জায়গা একজন প্রধান শিক্ষক গোপনে বিক্রি করতে পারে? ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান তারেকের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এই প্রথমে সাংবাদিকদের নিকট থেকে জানতে পারলেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীর নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান পরে ওই বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের নিকট ফোন করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার গেলেও পরে বিক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করে জানান অন্যত্রে ভবনের জন্য জমি করায় করে দিছে। এখানে নিয়ম হিসেবে বেজুয়া মৌজায় বা বেজুয়া গ্রাম কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে এই গ্রামে আর কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু শুধুমাত্র কোটি টাকা আত্মসাৎ এর জন্য সাবেক প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন গংরা বেজুয়া মৌজায় জমি কিনে শ্রীধর কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে করে দিলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস কিছুই জানো না বলে জানান। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত পূর্বক আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।