বাবার সন্ধানে পথে পথে মেয়ে

উজ্জ্বল রায়ঃ  তখন আমার বয়স চার বছর। বাবা সবজি বিক্রি করতে খুলনায় যান। এরপর আর ফেরেননি। তাঁর কোনো ছবি নেই। চেহারাও পরিষ্কার মনে নাই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে কলিজা ছিঁড়ে যায়। শ্বশুর বাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই কটু কথা শোনায়। অথচ বাবা আমাদের সাথেই ছিলেন। নানা বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাঁকে। সব সময় তার কথা মনে পড়ে। নানা কারণে তাঁর খোঁজ করা হয় নাই। ইদানিং খুব বেশি মনে পড়ছিল। তাই বাবাকে খুঁজতে চাটমোহরে এসেছি। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নড়াইল থেকে আসা রূপা খাতুন (২৫)। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় তাকে। রুপা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকায় নানার বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা। জানা গেছে, ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে তাঁর বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা কালিয়ার শুক্তগ্রামে যান। সেখানে গফফার আলী নামে এক ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিলেন। পরে ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করছিলেন। এলাকায় একটি কাঁচা মালের (সবজী) দোকান দেন। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জমিও কেনেন। নুর ইসলাম মোল্লা এবং রহিমা বেগমের সংসারে রুপা খাতুন এবং নুরজাহান নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। ভালই কাটছিল তাদের দিন। চৌদ্দ থেকে পনেরো বছর বসবাসের পর রুপার তখন চার বছর বয়স। একদিন পাতা কপি বিক্রি করতে খুলনায় যান নুর ইসলাম মোল্লা। এরপর আর ফেরেননি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও রুপার মা, মামারা তাঁর সন্ধান পাননি।অভিমানে রহিমা বেগমও কখনও স্বামীকে খুঁজতে আসেননি চাটমোহরে। শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা নামের কোনো গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। রুপা বলেন, তার বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা। মুখে হালকা চাপ দাড়ি ছিল। বাবার কোন ছবিও নেই তাদের কাছে। বাবা মা–মামাকে তার বাড়ি চাটমোহরে বলেছিলেন। এটা সত্য না মিথ্যা জানা নেই। তিনি বেঁচে আছেন না কি মরে গেছেন তাও জানি না। শুনেছি আমার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। বাবাকে খুঁজে না পেলে কষ্ট পাব। রুপা তার বাবাকে খুঁজে পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)