আশাশুনিতে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ
জি এম মুজিবুর রহমানঃ আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাহাদুরপুর ভূবন মোহন কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশের বিরিদ্ধে শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও চাকুরিচ্যুতির হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষের অশিক্ষক সুলভ আচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মানসহ সার্বিক পরিবেশ ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বুধবার (৩ জুলাই) কলেজ চলাকালীন সময়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক জাকির হোসেন অফিস সহকারীর কক্ষে বসে পরীক্ষার ফলাফল তৈরীর কাজ করছিলেন। এসময় অধ্যক্ষ সেখানে উপস্থিত হয়ে ধমক দিয়ে তিনি কেন এই রুমে কৈফিয়ত তলব করেন এবং তাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। লজ্জা আর অপমানে কলেজ শিক্ষক হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে প্রভাষক জাকির হোসেন অন্যান্য শিক্ষকদের ঘটনাটি অবহিত করলে শিক্ষকবৃন্দ অধ্যক্ষের কাছে ছুটে যান এবং ঘটনা নিয়ে আলাপ করতে চাইলে অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজসহ হুমকি দিতে থাকেন। এসময়ে কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি প্রদান করলে এক পর্যায়ে সকল শিক্ষকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান তিনি। অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশ ঘন্টাব্যাপী প্রভাষক জাকির হোসেনকে মানসিকভাবে অপদস্ত করা, চাকুরিচ্যুত করাসহ মারমুখী হলে প্রভাষক জাকির প্রচন্ডভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক পর্যায়ে তার সহকর্মীরা তাকে এম্বুলেন্স সহযোগে সাতক্ষীরা ইসলামি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
স্থানীয়রা জানায় , অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশ বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ শাখার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনীতিতে বিভক্ত করে রেখেছেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক এহেন ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। অনেকেই তাদের সন্তানদের কলেজিয়েট স্কুল থেকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন বলে জানাগেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী জানান, প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা নাজুক পর্যায়ে যেতে বসেছে। অধ্যক্ষ অধস্তনদেরকে কোন রকম মূল্যায়ন করতে চাননা। ন্যুনতম সম্মানটুকুও তার কাছ থেকে পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠছে। একাধিক অভিভাবক জানান, ভদ্রতা, নম্রতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সম্মানের দিকে খেয়াল রাখার মত পরিবেশ যেন প্রতিষ্ঠান থেকে পালাতে শুরু করেছে। শিক্ষকসুলভ আচরণের ঘাটতি সম্প্রতি সময়ে প্রতিষ্ঠানকে অন্ধকারের দিকে ধাপিত করছে। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে দীর্ঘদিনের সুখ্যাতি নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। সচেতন মহল এহেন পরিস্থিতির অবসান প্রত্যাশা করেছে।
বিষয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশ বলেন, প্রভাষক জাকির হোসেন আমার রুমে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা সহ চেয়ার উঠিয়ে মারধর করতে আসে। ঘটনার সময় অন্যান্য শিক্ষকদের সহায়তায় তাদেরকে থামানো হয়। পরে শুনলাম প্রভাষক জাকির হোসেন অসুস্থ হয়ে সাতক্ষীরা ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি আরো বলেন এ ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির জরুরী সভা আহবান করা হলেও অনিবার্য কারণবশত জরুরী সভার দিন পরিবর্তন করা হয়েছে।
হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ প্রভাষক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কথা বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার মুখে ও হাতে শক্তি কম পাচ্ছি। যা প্যারালাইসিস এর লক্ষণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘটে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশ পরিকল্পিতভাবে আমাকে অপমান অপদস্ত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও আমার সহকর্মীদের সামনে আমাকে লাঞ্ছিত করেন। মানসিকভাবে এ ঘটনা আমি সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্কুলের একাধিক শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেন, প্রভাষক জাকির হোসেন একজন হাস্য উজ্জ্বল ও সাদালাপী ব্যক্তি। তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অধ্যক্ষ মোহিত কুমার দাশ তাকে দেখতে যাওয়া তো দূরের কথা মোবাইলে তার কোন খোঁজও নেননি। উপরন্ত কিভাবে তাকে চাকুরিচ্যুত করা যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। প্রভাষক জাকির হোসেন তার সাথে ঘটে যাওয়া এহেন ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।