দেবহাটায় অসহায় পরিবারের বসতভিটার জমি প্রভাবশালীর জবরদখলে
স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটায় অসহায় পরিবারের চার পুরুষের বসতভিটার জমি জবরদখলে নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম বাগ (৬০) নামের এক প্রভাবশালী। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বাগ উপজেলার সেকেন্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা ও রাফসান গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু হাসানের বাবা।শনিবার (২৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অসহায় পরিবারের ৫ ভাইয়ের বসতভিটার একাংশ মাটি ভরাট দিয়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ইটের রাস্তা বানাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম বাগ।
ভুক্তভোগীরা সেকেন্দ্রা গ্রামের মৃত কালু গাজীর ছেলে আনিস গাজী ও আব্দুর রহিম গাজী সহ অন্যান্যরা জানান, পারুলিয়া মৌজার এসএ ৪০৬ খতিয়ানের ২৯৫ ও ২৯৬ দাগে তাদের পূর্বপুরুষদের নামে রেকর্ডিয় ৭৭ শতক জমিতে নির্মিত মাটির ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে যুগ যুগ ধরে ৫ ভাই বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু তাদের ওই পৈত্রিক জমির ওপর কু-নজর পড়েছিল প্রতিবেশি রাফসান গ্রæপের চেয়ারম্যান আবু হাসানের বাবা প্রভাবশালী রফিকুল ইসলামের। সর্বশেষ ভূমি জরিপকালে প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম জরিপকার্যে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গোপনে তাদের পরিবারের রেকর্ডীর ৭৭ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক জমি রাস্তা শেণি দেখিয়ে খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত করায়, যা কোনভাবেই জানতো না অসহায় পরিবারটি।সম্প্রতি প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম অনুদান স্বরূপ ওই অসহায় পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে মাটির কুড়ে ঘরটি ভেঙে ফেলতে বলেন। প্রভাবশালী রফিকুলের এমন প্রস্তাবে খুশি হয়ে অসহায় পরিবারটি পূর্বের মাটির ঘরটি ভাঙতে না ভাঙতেই ওই জমিতে পুনরায় ঘর নির্মাণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম তার কুৎসিত মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এরপর থেকে ওই পরিবারের জমির একাংশ জবরদখলে নিয়ে মাটি ভরাট দিয়ে তাতে ইটসোলিং রাস্তা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম বাগ।অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বাগ জমি জবরদখলের ব্যাপারে বলেন, ‘পূর্বে ৭৭ শতক জমি আনিস গাজী ও আব্দুর রহিম গাজীর পরিবারের রেকর্ডিয় থাকলেও বর্তমান জরিপে ৭৪ শতক জমি রেকর্ড হয়ে বাকি ৩ শতক খাসে অর্ন্তভূক্ত হওয়ায় আমি তাতে রাস্তা নির্মাণের কাজ করছি’। ভুল রেকর্ড সংশোধণে মুল মালিকপক্ষের আইনী লড়াইয়ের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে সেই জমি সরকার বাদে তিনি দখল করে নেয়ার ক্ষমতা বা আইনী সুযোগ রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বাগ।
পরে জমি জবরদখলের বিষয়টি ভুক্তভোগী পরিবার পারুলিয়া ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা চৌধুরী নাজমুল হোসেনকে জানালে সরকারিভাবে মাপ-জরিপের আগ পর্যন্ত ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণে প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম বাগ কে নিষেধাজ্ঞা দেন তিনি।
এব্যাপারে পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানার জমি ভুলঃবশত সরকারের নামে রেকর্ড হলে রেকর্ড সংশোধনে মুল মালিকপক্ষের আইনী লড়াইয়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তুসুযোগ বুঝে সেই জমি কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি জবরদখলে নিতে পারেননা। একাধিকবার এব্যাপারে রফিকুল ইসলাম বাগ কে বলা হলেও তিনি কারো কথায় কর্ণপাত না করে অসহায় পরিবারটির জমির একাংশ জবরদখলে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েছি। তাছাড়া যদি সেখানে কোন রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসন জনস্বার্থে সেখানে রাস্তা বানাবে, আর ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে তিনি তার রেকর্ডিয় জমিতে রাস্তা করতে পারেন; কিন্তু কোনভাবেই গায়ের জোরে অন্যের জমি বা সরকারি জমি দখল করে তিনি রাস্তা বানাতে পারেননা।’
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান ভুক্তভোগী পরিবারটিকে রেকর্ড সংশোধনের আইনী প্রক্রিয়ায় আবেদন এবং জমি জবরদখলের ব্যাপারে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়ে বলেন, রেকর্ডিয় জমি খাস খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত হলে তা পূর্বের মালিকপক্ষ এবং সরকারের মধ্যে আইনগতভাবে সমাধানের সুযোগ থাকে। কিন্তু কোন তৃতীয়পক্ষ সেই জমি জবরদখলে নেয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।