তিন কারণে আনার হত্যা
ডেস্ক নিউজ:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মরদেহ শনাক্ত হয়নি। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তদন্তকাজ। এরই মধ্যে উদ্ধারকৃত মাংস ও হাড় পরীক্ষা করে মরদেহ শনাক্ত করতে কলকাতার সিআইডি আনারের পরিবারকে ডেকেছে। ডিএনএ নমুনা দিতে চলতি সপ্তাহেই কলকাতা যাচ্ছেন আনার কন্যা ডরিনসহ তিনজন।
এমপি আনার ভারতে খুন হয়েছেন জানানো হলেও তার মরদেহ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। গুম করার জন্য মরদেহ টুকরো টুকরো করার কথা বলা হয়েছে। কিছু মাংসখণ্ড, হাড় উদ্ধার করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও জানা যায়নি এসব আলামত আনারের কি না।
গোয়েন্দারা বলছেন, এই মুহূর্তে এমপি আনারের মরদেহ শনাক্ত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া মাংস ও হাড়ের ফরেনসিক প্রতিবেদন পেয়েছে ভারতের সিআইডি। এরপরই ডিএনএ নমুনা দিতে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে ভারতে ডেকেছে তারা।
আনারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও ভারতে যেতে প্রস্তুত। চলতি সপ্তাহের যে কোনোদিন আনার কন্যা ডরিন, তার চাচা ও এমপির পিএস আব্দুল রউফ ভারতে যাবেন। তিনজনের ভিসাও হয়ে গেছে।
এদিকে, আটদিনের রিমান্ডে থাকা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে তিনদিন পর কারাগারে ফেরত পাঠানোর পর তদন্ত নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এতে খুনের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারী কারা- সেটা কবে জানা যাবে বা আদৌ জানা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। আনারের পরিবার বলছে, মিন্টুকে বাঁচাতে ডিবি পুলিশকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ডিবি পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও আদর্শিক- এই তিন ধরনের বিরোধের জেরে খুন হয়েছেন এমপি আনার। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে আনারের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। হত্যার মিশনে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লার সঙ্গে আদর্শিক এবং কিলারদের অর্থের জোগানদাতা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে ছিল রাজনৈতিক বিরোধ।
গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, আনারের বিরোধী পক্ষগুলোও একাট্টা হয়ে তাকে দুনিয়া থেকে সরানোর মিশনে নামে। দীর্ঘদিন আনার তাদের টার্গেটে ছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত চতুর আনারকে কোনোভাবেই বাগে পাচ্ছিল না শত্রুপক্ষ। ফলে অপেক্ষায় ছিল ঝোপ বুঝে কোপ মারার। যেন ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’- এমন ছকে সাজানো হয় এমপি আনার হত্যা পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আনারকে প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ভারতে ডেকে নেয় কিলাররা।
সুপরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার বিরোধী তিনটি পক্ষই একত্রে কাজ করেছে। আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের জবানবন্দিতে এখন পর্যন্ত এমন তথ্যই পেয়েছেন গোয়েন্দারা। মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন বলেও জানা গেছে।