তালায় তালিকাভুক্ত রাজাকারের ছেলে জিয়া-জিল্লুর সরকারি সম্পত্তি ঘিরে জমিদারি
নিজস্ব প্রতিনিধি: তালায় তালিকাভুক্ত রাজাকার ওহাব আলী গাজী’র পরিবারের সদস্যরা সরকারি সম্পাদ নিজেদের দখলে নিয়ে সম্রাজ্য পড়ে তুলেছেন। সরকারি খাস জমি ও জলাকার নামে ও বেনামে দখলে নিয়েছেন পরিবারটি। ওহাব আলী গাজীর ছেলে জিল্লু রহমান গাজী ও জিয়াউর রহমান জিয়া সমন্বয় করে পাশ্ববর্তী কয়েক উপজেলায় প্রায় ৫০ বিঘা খাস সম্পত্তি ভোগ দখল করছেন। কোথাও নিজেদের নামে আবার কোথাও বেনামে গড়ে তুলেছেন মৎস্য ঘেরের ব্যবসা প্রতিষ্টান। জিল্লু ও জিয়ার বাবা ওহাব আলী একজন সক্রিয় রাজাকার এই তথ্যটি গোপন করে তারা সরকারি খাস সম্পত্তি সহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। একই সাথে জলমহল দখলের অভিযোগে স্থানীয় নিকারী সম্প্রদায় বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও তাদের দমাতে পারেনি। সার্বিক বিষয়টি যাতে লোকমুখে না আসে সেজন্য কোথাও আত্মীয় অথবা কাছের মানুষের নামে খাস সম্পত্তির দখলদারিত্ব করেছে। অতি সাম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে তাদের গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের গোপন তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান জিয়া’র বাবা ওহাব আলী ছিলেন সক্রিয় রাজাকার, তিনি ছিলেন ৫০ হাজার বেতন ভাতা প্রাপ্ত রাজাকারদের মধ্যে একজন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি বেশ কিছু বছর পলাতক ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে সব সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও ২০১৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে ঘটে বিপত্তি। সেখানে রাজাকারের তালিকায় নাম প্রকাশ পায় ওহাব আলীর। তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন ওহাব আলীর দুই ছেলে জিয়া ও জিল্লু। রাজাকার পরিচয় গোপন করে কৃষি, ভূমি সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সুবিধা ভোগ করে এই পরিবারটি। জিল্লু সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় দৌঁড়ঝাপ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারি খাস জমির সন্ধান নিয়ে সেগুলো নিজেদের নামে করে নেন। জিল্লু, জিয়া ও তার ফুফাতো ভাই সাজ্জাদের দখলে রয়েছে ৫০ বিঘা সরকারি খাস জমি। দখলকৃত জমির মধ্যে সাতক্ষীরা ও খুলনার সীমান্তবর্তী মৎস্য ঘেরের মধ্য রয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা। তাছাড়া সাতক্ষীরা সদরের আবাদের হাট ও শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় তাদের নামে ও বেনামে খাস সম্পত্তি রয়েছে আরও ২০ বিঘা। তালা সদরের মধ্য আটারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল ও খাস জায়গার রাস্তা বন্ধ করে সেখানে ঘর তৈরীর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, তার ঘেরের মধ্য জিল্লু, জিয়া ও তার ফুফাতো ভাই সাজ্জাতের ৩০ বিঘা খাস সম্পত্তি রয়েছে, যে সম্পত্তি তারা দীর্ঘদিন দখলদারিত্ব করে আসছেন এবং নিয়মিত হারির টাকা গ্রহণ করেন। তাদের জমির পুরো বিষয়টি জিল্লু দেখভাল করে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানান, ওহাব আলী রাজাকার হওয়ার পরেও তার ছেলেরা কিভাবে সরকারি এত সুবিধা ভোগ করছে। জিল্লু সাতক্ষীরা ডিসি অফিসে যাতায়াত করে বেশ সুসম্পর্ক্য তৈরী করেছে স্টাফদের সঙ্গে। সেই সুবাদে জেলার কোথাও সরকারি খাস জমি দখলে নেওয়ার সুযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক তারা অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে সেটা দখলে নেন। এভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৫০ বিঘার উপরে জমি তৈরী করেছেন তারা। তাছাড়া জিয়া ও জিল্লু প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে নানাবিধ স্বার্থ উদ্ধার করেন। যদি কেউ তাদের স্বার্থ উদ্ধারে বাঁধাগ্রস্ত হয় তাকে মিথ্যা মামলা ও পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া হুমকি প্রদর্শন করে থাকেন।
স্থানীয় জেয়ালা নলতা গ্রামের আবুল নিকারী সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, জিয়া ও তার ভাই জিল্লু একত্রে তাদের দখলে থাকা জলাকার সম্পত্তি নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। টাকা দিয়ে কাগজপত্র তৈরী করে নিয়ে এসেছিলো। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। জিয়া ও জিল্লু’র কাজ হলো সরকারি খাস জমি নিজেদের দখলে নেওয়া। ডিসি অফিসে দালালি করেন জিল্লু, সেখান থেকে সে মানুষের দখলে থাকা কাজগপত্র সম্পূর্ণ জমি নিজেদের দখলদারিত্বের চেষ্টা করেন। ইতোমধ্য এভাবে ৫০ বিঘার উর্দ্ধে জমি করেছেন নিজেদের নামে। তাদের বাবা ওহাব আলী রাজাকার হওয়ার শর্তেও কিভাবে সরকারি এসব সুবিধা গ্রহণ করছে সেটা চিন্তার বিষয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিউর রহমান শফি জানান, ওহাব আলীর ছেলেরা মানুষের প্রতি জুলুম নির্যাতন করেন। মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রারি করেন তারা। সাম্প্রতি স্থানীয় আতিয়ার রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। স্থানীয় মতিউর রহমানের স্ত্রী সঙ্গে জিয়ার পরকীয়ার সর্ম্পক্য রয়েছে এই বিষয়টি জেনে যায় আতিয়ার। পরকীয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। একই ভাবে এলাকার অনেক মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ সকল বিষয়ে অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, আমাদের দখলে সরকারি খাস সম্পত্তি রয়েছে। তবে সেটার বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবোনা বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলাউদ্দীন জানান, তালা সদরের আটারই গ্রামের ওহাব আলী গাজী রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ পায় সেখানেও তার নাম রয়েছে। সাম্প্রতি ওহাব আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া ও জিল্লু স্থানীয় নিরীহ একাধিক মানুষকে হয়রানি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তাছাড়া রাজাকার হয়েও কিভাবে নিজেদের নামে বেনামে এত পরিমান সরকারি জমি গড়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিৎ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে তাদের সমস্ত বিষয় প্রশাসনের আমলে নেওয়া বিষয়টি জোরদার করা হবে।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম জানান, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলো তারা কিভাবে সরকারের এত সুবিধা ভোগ করছে বিষয়টা তদন্তযোগ্য। এসস্ত সুবিধা সরকার দলীয়সহ যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষ্যে ছিলো যারা ভোগ করছে। রাকাজার পরিবার সরকারের খাস জমি দখলদারেরর বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে। দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।