কালিগঞ্জে এনজিওর প্রতারণার ফাঁদে ৪ অসহায় পরিবার
আরাফাত আলী : নওয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ) নামক একটি এনজিও’র প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দু:সহ জীবনযাপন করছেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের ৪ টি অসহায় পরিবার। নিরীহ ওই পরিবারগুলো এনজিওটির ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের আশু সুদৃষ্টি কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
শনিবার (২২ জুন) বেলা ১১ টায় কালিগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবে ভুক্তভোগী ৪ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী ফিরোজা পারভীন জানান, আমরা প্রায় ১০ বছর যাবত অগ্রসর ঋণ কর্মসূচীর আওতায় তাদের বাড়িতে একটি কেন্দ্রে সদস্য হিসেবে যুক্ত হই। দীর্ঘ কয়েক বছর যথানিয়মে এনজিওটি কার্যক্রম পরিচালনা করায় আমরা তাদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সঞ্চয় এবং ঋণগ্রহণ করে লেনদেন করতে থাকি। কয়েকদফা ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের পর সর্বশেষ ২৮/০২/২৩ তরিখে তিনি (ফিরোজা পারভীন) ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন যা ২৪ কিস্তিতে ৩ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা পরিশোধের কথা ছিল। ৮ কিস্তি পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের নিমিত্তে ওই কেন্দ্রের মাঠকর্মী মোকাররম হোসেন তৈয়েবুরের নিকট জানালে তিনি এককালিন পরিশোধের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫শ’ টাকা দিতে হবে বলে হিসাব পেশ করেন। সে অনুযায়ী একটি গাভী বিক্রি করে ও আত্মীয় স্বজনের নিকট থেকে সহযোগিতা নিয়ে এনজিএফ এর কৃষ্ণনগর শাখা অফিসে যেয়ে ঋণের অবশিষ্ট ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫শ’ টাকা পরিশোধ করি। এরপর ঋণের ফাইলে থাকা ৩শ’ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কৃষ্ণনগর ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের হিসাবের চেক এবং জামিনদার হিসেবে স্বামীর ইসলামী ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার চেক ফেরত চাইলে শাখার ম্যানেজাার আকবার হোসেন শাখায় অডিট চলছে জানিয়ে ওইদিন বিকেলে স্ট্যাম্প ও চেক পৌছে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী বাড়িতে আসার পর বিকেলে ডকুমেন্টস ফেরত না দেয়ায় বারবার কৃষ্ণনগর শাখায় যেয়ে সেগুলো ফেরত চান তিনি। কিন্তু ফাইলের কাগজপত্র ফেরত না দিয়ে উল্টো সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকা ২৮ হাজার ৮২ টাকা থেকে ২৬ হাজার ৫০ টাকা তঞ্চকতার মাধ্যমে তারা উত্তোলন করে নিয়েছেন। একপর্যায়ে মাঠকর্মী মোকাররম হোসেন তৈয়েবুর শাখা থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান এবং শাখার ম্যানেজার বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এনজিএফ’র পরিচালক লুৎফর রহমানের কাছে গেলে তিনি বিষয়টি দ্রæত সমাধানের আশ^াস দেন। কিন্তু ১ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি বিষয়টি সমাধান করেননি। উল্টো এনজিওর কাছে থাকা চেক ডিজঅনার করে ফিরোজা পারভীনের বিরুদ্ধে তারা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বানিয়াপাড়া গ্রামের ফিরোজ মোড়লের স্ত্রী সেলিনা পারভীন ঋণ হিসেবে ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন যা ২৪ কিস্তিতে পরিশোধের কথা ছিল। ৬টি কিস্তি পরিশোধের পর সম্পূর্ণ টাকা এককালীন দেয়ার কথা বললে ৬২ হাজার ৬শ’ টাকা দিতে হবে বলে মাঠকর্মী মোকাররম হোসেন তৈয়েবুর জানায়। সে অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সেলিনা পারভীনেরও ডকুমেন্টস ফেরত না দিয়ে এখন আবারও ৬৮ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। সেলিনা পারভীনের সঞ্চয়ের ১৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা অবৈধ পন্থায় উত্তোলণ করা হয়েছে। আবার ৬৮ হাজার টাকা না দিলে মামলা করবে বলে হুমকি দিচ্ছেন এনজিওর ম্যানেজার ও নতুন মাঠকর্মী আব্দুল জলিল। এছাড়া বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল গফফার গাজীর স্ত্রী ছখিনা খাতুনের সঞ্চয় ছিল ১২ হাজার টাকা। তিনি এনজিএফ থেকে ঋণ না নিলেও তার নামে মাঠকর্মী ও ম্যানেজার যোগসাজশে ৩০ হাজার টাকা ঋণ তুলে নিজেরা নিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে ম্যানেজারকে জানালে সঞ্চয়কৃত টাকা ফেরত দেয়ার পরিবর্তে উল্টো তঞ্চকতার মাধ্যমে ছখিনা খাতুনের নামে তুলে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে হুমকি দিচ্ছেন ম্যানেজার আকবার হোসেন। বানিয়াপাড়া গ্রামের সোহরাব মোড়লের মেয়ে ফতেমা সোহরাব ১৫ হাজার টাকা মৌসুমী ঋণ গ্রহণ করেন যা ৬ মাস মেয়াদ শেষে এককালীন ১৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু ওই কেন্দ্রের সদস্য জেসমিন সুলতানার নামে ঋণটি পুনরায় দেখানো হচ্ছে। ঋণ না নিয়েও বানিয়াপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন সুলতানা চরম বিপাকে পড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ফিরোজা পারভীন, সেলিনা পারভীন, ছকিনা খাতুন, ফতেমা সোহরাবসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ) এর প্রতারণা থেকে রক্ষা এবং যথাযথ ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।