প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বারসিকের বিবৃতি

ডেস্ক রিপোর্ট: কৃষিকে কৃষকের কাছে লাভজনক করতে হলে সরকারকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। একইসাথে সুনির্দিষ্টভাবে ভর্তুকির খাত নির্ধারণ করে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বারসিক এক বিবৃতিতে সরকারের কাছে এই আহবান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে খাদ্য উৎপাদন অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট জাতের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে কৃষকের ফসলের জমি ক্রমান্বয়ে জৈবগুণ হারিয়ে ফেলছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, মাটিতে কমপক্ষে ২ শতাংশ জৈব পদার্থের উপস্থিতি থাকলে মোটামুটি মানের ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কমপক্ষে ৫ শতাংশ হলে আদর্শ মাটি বলা হয়। বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থের হার ১.৫ শতাংশেরও কম। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে জৈবপদার্থের ঘাটতি রয়েছে। জমিতে ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার সবুজ বিপ্লব শুরুর (৬০ দশকে) সময়ের তুলনায় বর্তমানে ৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের হিসাবে ধানসহ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের উৎপাদন খরচ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক উৎপাদন পরবর্তী ধান বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বারসিক মনে করে, জমির জৈব উপাদান বৃদ্ধি করতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে জৈব সার ও জৈব কীটনাশক উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া জরুরি। জমির অবস্থান ও গুণগতমান বিবেচনা করে উপযোগী ফসল চক্র ও ফসল বিন্যাসকে গুরুত্ব দিয়ে নানারকম ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। ফসল উৎপাদন পরবর্তী ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরকারি উদ্যোগে প্রত্যেকটি মওসুমে ইউনিয়নভিত্তিক ক্রয় কেন্দ্র চালু করার ব্যবস্থা ও প্রতিটি ইউনিয়নে উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্য শস্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে। খাদ্য সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ/ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমেই দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় উৎপাদক ও ভোক্তার অধিকার সুরক্ষিত হবে। একই সাথে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দেশের প্রকৃত খাদ্যযোদ্ধা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের অধিক মুনাফাকারী/অর্থলগ্নিকারী দাদন ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের চক্রাহার সুদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে কৃষকের নিজস্ব একাউন্টে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে মৌসুমভিত্তিক, স্বল্প মেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী কৃষিঋণ প্রদানের হার বাড়াতে হবে। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী হচ্ছে দেশের খাদ্য উৎপাদনকারী এই কৃষক সমাজ। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে এখনও সচল রেখেছে দেশের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে কৃষকদের জন্য শস্য বীমা চালু করা আজ সময়ের দাবি। খাদ্য উৎপাদকের নিরাপত্তাহীনতা দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে মানুষগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁরাই জীবনের শেষ লগ্নে এসে অত্যন্ত অযতœ, অবহেলায় দিনযাপন করে। কৃষকদের অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ষাট ঊর্ধ্ব প্রবীণ কৃষকদের জন্য বিশেষ কৃষক পেনশন স্কিম চালু করার প্রস্তাব করে আসছে বারসিক। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষকদের মেধা, শ্রম, ঘাম, জ্ঞান ও দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ খাদ্যযোদ্ধা কৃষকদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ কৃষি বাজেট প্রণয়ন করার প্রস্তাব করছি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বারসিকের চেয়ারপার্সন রবিউল আজম, নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন, কোষাধ্যক্ষ জবা তালুকদার, নির্বাহী সদস্য রেখা সাহা ও কাজী সুফিয়া আখতার, সাতক্ষীরার কৃষক সংগঠক নাজমুন নাহার, সাতক্ষীরার বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত কৃষক অল্পনা রানী মিস্ত্রী, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ, নেত্রকোণার কৃষক সংগঠক সায়েদ আহমদ খান বাচ্চু ও মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির নেত্রী হাজেরা বেগম।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)