তালায় রাজাকারের পুত্র জিয়ার তান্ডবে দিশেহারা এলাকাবাসী

তালা প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার তালা সদরের আটারই গ্রামে রাজাকার ওহাব আলীর ছেলে জিয়াউর রহমানের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। একের পর এক জুলুমের শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। এবার বাদ পড়েনি খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিক। মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন ওই গ্রামের মৃত ফজর আলী গাজীর ছেলে আতিয়ার রহমান। জিয়ার সঙ্গে স্থানীয় মতিউর রহমানের স্ত্রী মুনজিলা খাতুনের পরকীয়া প্রেমে রয়েছে। কিছুদিন আগে জিয়া ও মুনজিলাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে আতিয়ার রহমান। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মুনজিলা বাদী হয়ে তার তিন বছরের মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। বুধবার (৫ জুন) দুপুরে আটারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। একই সাথে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীর স্ত্রী তাসলিমা বেগম। এছাড়া, এলাকায় একের পর এক মানুষকে বিভ্রান্তী ও হয়রানিতে ফেলেন জিয়া ও তার ভাই জিল্লু রহমান। এ সকল বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছিলেন জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।এদিকে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই জিয়াউর রহমান জিয়ার বাবা ওহাব আলী ছিলেন পাকা রাজাকার, তিনি ছিলেন ৫০ হাজার বেতন ভাতা প্রাপ্ত রাজাকারদের মধ্যে একজন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি বেশ কিছু বছর পলাতক ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে সব সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ২০১৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কতৃক রাজাকার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে ঘটে বিপত্তি। সেখানে রাজাকারের তালিকায় নাম প্রকাশ পায় ওহাব আলীর। এরপর নাম বাদ দিতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন ওহাব আলীর দুই ছেলে জিয়া ও জিল্লু। তবে সেটাত তেমন কোন লাভ হয়নি। জিয়া আর জিল্লুর বলার মত পেশা নেই। বাবার রাজাকার পরিচয় গোপন করে কৃষি, ভূমি সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সুবিধা গ্রহণ করেন এই পরিবারটি। জিল্লু সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় দৌঁড়ঝাপ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারি খাস জমি নিজেদের নামে করে নেন। নিজের ও তার ভাই জিয়া সহ আত্নীয়দের নামে প্রায় ৩৫ বিঘা সরকারি খাস জায়গার কাগজপত্র করে নিয়েছে। যে জমিগুলো অধিকাংশ সাতক্ষীরা ও খুলনার সীমান্তবর্তী মৎস্য ঘেরের মধ্য রয়েছে। তাছাড়া আবাদের হাট এলাকার তাদের নামে নেওয়া সরকারি খাস সম্পত্তি রয়েছে। এ তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প, বীজ ও সার ভূয়া নামে উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, জিয়ার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যাদের মাধ্যমে সে সব কিছু পরিচালনা করেন। স্থানীয় একটি মাদ্রসা নিজের দখলে নিয়ে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন জিয়া। কেউ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাদেরকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে দূর্বাল করার চেষ্টা করেন। জিয়ার বাবা ছিলেন পাক রাজাকার। সাম্প্রতি তাদের পরিবার আ.লীগে বনে গেছেন। সরকার দলীয় অনুষ্টানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অতিত ঢেকে রাখতে চান এই পরিবারটি। জিয়ার খপ্পরে পড়ে এখানকার অনেকগুলো পরিবার ধ্বংশ হয়ে গেছে। সবশেষ আতিয়ার রহমান নামের দিনমজুরকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। আবার আতিয়ারের স্ত্রীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে জিয়া, টাকা পেলে মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান তিনি। ঘের ব্যবসায়ী সৈয়দ সোহেল রানা বলেন, জিয়া ও তার ফুফাতো ভাইয়ের নামে ২৫ বিঘা খাস সম্পত্তি রয়েছে আমার মৎস্য ঘেরে। তবে সবকিছু জিল্লু পরিচালনা করে থাকেন। পাশ্ববর্তী ঘেরে তাদের খাস জমি রয়েছে কিনা জানা নেই।স্থানীয় জেয়ালা নলতা গ্রামের আবুল নিকারী বলেন, জিয়া ও তার ভাই জিল্লু মিলে আমাদের জলাকার সম্পত্তি তাদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। জিয়া এবং জিল্লু তাদের মূলত কাজ হচ্ছে সরকারি খাস জমি নিজেদের দখলে নেওয়া।ভুক্তভোগী আতিয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, জিয়ার সাথে জমিজায়গা সংক্রান্ত একটা ঝামেলা ছিলো। সেখান থেকে সে প্রকাশ্যে হুমকি দিতো। এরপর কিছুদিন আগে মতিউর রহমানের স্ত্রী মুনজিলা খাতুনের সঙ্গে জিয়াকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে নেয় আমার স্বামী। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে মুনজিলাকে বাদী করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। জিয়া এলাকার প্রতিটা মানুষকে একই ভাবে হয়রানি করে থাকে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখায়। এসমস্ত বিষয়ে এসপির কাছে অভিযোগ দিয়েছে।স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিউর রহমান শফি বলেন, আতিয়ার রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসানো হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের এবং পরকীয়ার বিষয় জেনে যাওয়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ সকল বিষয়ে জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, বাচ্ছাটাকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে, এটা আমি শুনেছি।
সরকারি খাস সম্পত্তি দখলে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাস জমি দখলে রয়েছে তবে এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবোনা। তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দীন বলেন, তালা সদরের আটারই গ্রামের অহাব আলী গাজী ছিলেন রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ পায় সেখানেও তার নাম রয়েছে। সাম্প্রতি ওহাব আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া স্থানীয় একটি নিরীহ পরিবারকে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যে মামলার স্বাক্ষী সে নিজে। মামলাটা করে ভুক্তভোগী ওই পরিবারের নিকটে টাকা দাবি করছে জিয়া। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছে।তিনি আরও বলেন, এই রাজাকার পরিবারের প্রতি স্থানীয় জনপদের বাসিন্দারা কেউ সন্তুষ্ট না। তাদের দ্বারা এখানকার অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতোপূর্বে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)