কালিগঞ্জে ৫০ বোতল ফেনসিডিল ও ফেনসিডিল তৈরির সরঞ্জামসহ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর শিক্ষিকা গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁঃ আমদানি নিষিদ্ধ ৫০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল ও ফেনসিডিল তৈরির সরঞ্জামসহ পুলিশ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর এক শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে দু’টোর দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের ব্রজপাটুলি গ্রামের শিক্ষক আবু সাঈদের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর গাজী পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃতের নাম হাফিজা খাতুন (২৭)। তিনি ব্রজপাটুলি গ্রামের বকুল সরদারের স্ত্রী ও ইডা পরিচালিক উপআনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ব্রজপাটুৃলি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পলাতক জাহাঙ্গীর গাজী ব্রজপাটুলি গ্রামের আনছার আলী গাজীর ছেলে।স্থানীয় কবীর হোসেন, সাইদুল গাজী জানান, এক সময় ভাড়াসিমলা এলাকার বহুল আলোচিত মাদক ব্যবসায়ি কোটিপতি জহুরের মালামাল বহন করার মধ্য দিয়ে মাদক ব্যবসায় হাতে খড়ি হয় ব্রজপাটুলি গ্রামের জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীরের মাদক মামলায় ১৪ বছর সাজাও হয়। বর্তমানে জাহাঙ্গীরের নামে কমপক্ষে দেড় ডজন মাদক মামলাও রয়েছে। জাহাঙ্গীর ফেনসিডিল বাড়িতে রাখার কারণে তার মা জাহানারা খাতুনকেও এক সময় জেলে যেতে হয়। বর্তমানে ওই মামলা বিচারাধীন ।স্থানীয়রা আরো জানান, পৈতৃক জমি না থাকায় বকুল সরদার তার বোন ভাড়াসিমলা ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান মনোয়ারা খাতুনের বাড়িতে স্বপরিবারে বসবাস করতেন। বকুলের শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে জাহাঙ্গীরের সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে বকুল সরদারের স্ত্রী হাফিজার সাথেও জাহাঙ্গীরের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। জাহাঙ্গীর নিজের স্বার্থে হাফিজার বাপের বাড়ির সকল খরচ বহন করে থাকে। সম্পর্কের কারণে জাহাঙ্গীরের অবাধ যাতায়াত ছিলো বকুলের বাসায়। গভীর রাতে মাদক ব্যবসায়িরা মনোয়ারা মেম্বরের বাড়ির পাশে জটলা করতো। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় খুব গুঞ্জন শুরু হয়। হাফিজার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের অনৈতিক সম্পর্ক ও মাদক ব্যবসার কথা ছিলো সকলের মুখে মুখে। বিষয়টি মনোয়ারা খাতুন তার ভাইয়ের স্ত্রীকে বোঝাতে গেলে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। প্রায় দেড় বছর যাবৎ হাফিজা ইডা পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ব্রজপাটুলি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করে আসছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মনোয়ারা খাতুন তার ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলে হাফিজা তার দিনমজুর স্বামী বকুল সরদারকে চাপে রেখে গত বছরের অক্টোবর মাসে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সাঈদের বাসা মাসিক এক হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। দুটি কক্ষের একটিতে হাফিজা প্রাথমিকক বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সম্প্রতি সাত ব্রজপাটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তঃস্বত্বা শিক্ষিকার স্থলে মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনে শিক্ষকতা করতেন হাফিজা। কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক শেখ জাহিদুল আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত পৌরে দু’টোর সময় ব্রজপাটুলি গ্রামের শিক্ষক আবু সাঈদের বাড়ির ভাড়াটিয়া হাফিজা খাতুনের বাসায় তার নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় হাফিজা খাতুনের রান্ন ঘরের বাসার মধ্যে বস্তাভর্তি ৫০ বোতল ফেনসিডিল, ফেনসিডিলের কয়েকটি খালি বোতল উদ্ধার করা হয়। হাফিজার বসতঘরের মধ্যে ফেনসিডিল তৈরির মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ সময় হাফিজাকে গ্রেপ্তার করা হলেও পালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর গাজী। হাফিজা মাদক ব্যবসার আড়ালে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও তার স্বামী বকুল সরদারের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। হাফিজার সাত বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে।ভাড়াসিমলা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মনোয়ারা খাতুন জানান, হাফিজাকে বারবার সতর্ক করার পরও সে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় এ ধরণের ঘটনা ঘটলো। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, পুলিশের উপস্থিতিতে মাদক উদ্ধারের ঘটনার সময় তিনি হাজির হওয়ায় তাকেও জব্দ তালিকায় সাক্ষর দিতে হয়েছে।
সাতবসু- ব্রজপাটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, হাফিজা একজন সহকারি শিক্ষিকার অসুস্থতার কারণে সাময়িক কাজ করতো। তবে কি কারণে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তা তিনি জানেন না।
গ্রেপ্তারকৃত হাফিজা খাতুন জানান, তার রান্না ঘরে ফেনসিডিল পাওয়া গেলেও কিভাবে কে সেখানে রেখেছে তা তিনি জানেন না।
কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মোঃ মনিুরজ্জামান জানান, এ ঘটনায় উপপরিদর্শক শেখ জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে হাফিজা খাতুন এবং জাহাঙ্গীরকে পলাতক দেখিয়ে শুক্রবার থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত হাফিজা খাতুনকে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামী জাহাঙ্গীর গাজীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে