এমপি আনার হত্যা: সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

ডেস্ক নিউজ:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করার মামলায় মো. সিয়াম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

সোমবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আদালতের তথ্য মতে, রোববার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি সিয়ামের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। নেপালে পলাতক সিয়ামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। তিনি আক্তারুজ্জামানের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

এর আগে শনিবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যায় জড়িত আসামি সিয়ামকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সম্ভাব্য অবস্থান বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবির মাধ্যমে কাঠমান্ডু পুলিশের এনসিবিকে জানানো হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারের অনুরোধ করা হয়েছে। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে কাঠমান্ডু পুলিশ প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে কাঠমান্ডু পুলিশ সিয়ামের অবস্থানের খুব কাছাকাছি। তাকে খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।

ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত ১৩ মে কলকাতায় আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর লাশ গুম করার ক্ষেত্রে সিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি কলকাতা থেকে নেপাল চলে যান। এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশ যে আক্তারুজ্জামান শাহীনের কথা বলছে, তিনিও ২০ মে ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে কাঠমুন্ডু যান। পরে সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

এদিকে, এমপি আনার হত্যার তদন্তের জন্য শনিবার সকালে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। প্রতিনিধি দলে ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদর দফতরের এনসিবির একজন কর্মকর্তা রয়েছেন বলেও জানা গেছে।

প্রথম দফা রিমান্ড শেষে এ মামলার অন্যতম আসামি সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ৮ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে, ২৪ মে তিন আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগের দিন ২৩ মে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

এ ঘটনায় ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।

১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’

এছাড়া আরো কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুজি করেও পাইনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)