সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক মুনসুরকে লাঞ্চিত করলো সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও
স্টাফ রিপোর্টার: সংবাদ প্রকাশের জেরে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মুনসুর রহমানকে লাঞ্চিত করেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীন। রবিবার (০২ জুন ২০২৪) সকাল আনু: ১১ টায় সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও এর রুমে এ ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গেছে, শনিবার রাতে দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘প্রতিবন্ধীর ভাসমান দোকান তুলে নিয়ে গেলো পৌরসভার কর্মীরা!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও রবিবার সাপ্তাহিক সূর্যের আলো ও স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকায় একই সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে রবিবার সকালে সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও এর কাছে সাংবাদিক মুনসুরকে যেতে বলেন পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম (বাবু)। তবে ঘটনার সময় কাউন্সিলর ছিলেন না। কিন্তু উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান, প্রতিবন্ধী বায়জিদ হাসান, দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আবু বাক্কারসহ পৌর নির্বাহী প্রধান মোঃ লিয়াকত আলী, মাস্টাররোলের কর্মচারী ইদ্রিস, সৌরভসহ নাম না জানা ৫ থেকে ৬ জন উপস্থিত ছিলেন। জানাগেছে, সিঁড়ি বেয়েই পৌরসভার দ্বিতীয় তলায় উঠে সিইও এর রুমের বাইরে সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের বসার চেয়ারে সাংবাদিক মোঃ মুনসুর রহমানকে দেখেই সিইও নাজিম উদ্দীন বাস্টার্ড বলা শুরু করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি; বরং অফিসের মধ্যে তাকে ডেকে দাঁড় করিয়ে রাখে। এবং কিছু সময় পরে বলে বানচোদ, বোকাচোদা তুই কোনে লেখাপড়া করেছিস, তুই কোন পত্রিকায় কাজ করিস, তোর বাবা কি করে, তোর চেয়ে বড় সাংবাদিক আমার চেনাজানা। উত্তরে মুনসুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অধীনে বাংলায় মার্স্টাস করেছি। সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কর্মরত। আমার বাবা সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্রে শ্রমিক ছিলেন। বলে তোর বাবার নম্বর দে, ফোন দেবো। উত্তরে মুনসুর বলেন আমি তো অন্যায় করিনি। আমার বাবাকে কেন ফোন দিবেন। তখন সিইও বলে তোর বাবার সাথে কথা বলবো কেমন সু-পুত্র বানিয়েছে। তখন মুনসুর বলে তাহলে আমার বাড়িতে চলেন আপনাকে দাওয়াত করিয়ে খাওয়ায়..। এরপরে সিইও নাজিম দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদকে ফোন দিয়ে লাউডে রাখেন। তিনি ফোন রিসিভ করতেই সিইও আবু আহমেদকে বলেন মুনসুরকে চেনেন। তখন উত্তরে আবু আহমেদ বলেন, হ্যাঁ আমাদের প্রতিনিধি। পরে সিইও আবু আহমেদকে বলেন মুনসুর জমির দখল করেছে, ও ছেলে ভালো না খারাপ। উত্তরে আবু আহমেদ বলেন, মুনসুর ভালো ছেলে। পরে সিইও মুনসুরকে বলল গতদিন আমার কর্মচারীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস কেন? উত্তরে মুনসুর বলল, না কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। তখন পৌরসভার নির্বাহী প্রধান লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের সাথে তর্ক করেছে। আমাদের কাজে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। উত্তরে মুনসুর বলেন, না আপনাদের সাথে কোন তর্ক হয়নি। আপনি মোটরসাইকেলে করে আপনার বাচ্চা নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আপনার কর্মচারীদের দেখে আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। আপনার কর্মচারী ইদ্রিস যখন আপনাকে বলল ঐ বায়জিদ আবার টল বসাতে এসেছে। আপনি তখন ওরে বললেন বায়জিদের টল বসাতে দেওয়া যাবে না। ওর টল নিয়ে যেতে হবে। তখন মুনসুর বলেন, নিয়ে যাবেন তো নিয়েই যাবেন। তাতে সমস্যা কি? নিয়ে যান। এরপরে মুনসুর বলেন জেলরা সড়কগুলোর ধারে প্রায় ৩৫ হাজার ভাসমান দোকান আছেন তাদের টল তো নিয়ে যাচ্ছেন না। আর এসিল্যান্ডের অফ দ্যা রেকর্ডে প্রতিবন্ধী বায়জিদ প্রায় ১০ ফিটের মতো বেড়া সরিয়ে ভাসমান টলের দোকান বসিয়েছে আর আপনারা টল নিয়ে যাবেন তো ভালো নিয়ে যান। আপনি ছিলেন রাস্তায় মোটরসাইকেলে আর আমি চায়ের দোকানের মধ্যেও বেঞ্চে বসা। তাহলে আপনাদের কাজে কিভাবে বাঁধা দিলাম। তখন পৌর নির্বাহী প্রধান লিয়াকাত আলী আমতা আমতা শুরু করেন। এরই মধ্যে পৌরসভার সিইও গেটম্যানসহ আরও দুইজনকে ডেকে অকথ্যভাষায় আমাদের সামনে গালিগালাজ করে।
প্রত্যাক্ষদর্শী উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পৌরসভার সিইও সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেন। তার বাস্তব প্রমাণ আজ স্বচক্ষে দেখলাম। প্রতিবন্ধী বায়জিদ হাসানের ভাসমান টলটি ফেরৎ পাওয়ার জন্য মুনসুর ও বায়জিদ এর সাথে তার ওখানে গিয়েছিলাম। শুরুতেই তিনি বাস্টার্ড দিয়ে সম্বোধন করেন এবং ভিতরে ডেকে বৃষ্টির মতো গালিগালাজ শুরু করেন। লজ্জায় তার ওখানে বসতে না পেরে মুনসুর ও বায়জিদ এর হয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইলাম। কিন্তু তিনি ক্ষমা না করেই আবারও গালিগালাজ করতে থাকে তাদের। এমনকি প্রতিবন্ধী বায়জিদকে বলে ছাগলের বাচ্চা তোর ধর্য্য নেই। তোর ধর্য্য কম কেন? পরে সিইও এর রুম থেকে বাইরে বের হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন কৃষি ব্যাংকে চাকুরী করেছি। বহু মানুষের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়েছে। এমন আচারণ কখনো কারও সাথে করিনি। কিন্তু সিইওকে দেখে মনে হয়েছে তিনি অসুস্থ্য। তার চেয়ারে বসে এধরনের কথাবার্তার মানায় না।
লাঞ্চিত সাংবাদিক মুনসুর রহমান বলেন, শনিবার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ও রবিবার প্রতিবন্ধী বায়জিদ হাসানকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবন্ধী বায়জিদ সকালে ফোন করে বলেছিলো কাউন্সিলর শফিকুল আলম (বাবু) তোমাকে ও আমাকে সিইও ওখানে রবিবার সকালে যেতে বলেছে। সেই প্রেক্ষিতে রবিবার সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে সিইও এর রুমের সামনে যেয়ে দেখি তালাবদ্ধ রুম। তখন কাউন্সিলর বাবুকে ফোন করেছিলাম। উত্তরে বাবু বলল আমরা ডিসি অফিসে মিটিং এ আছি, আপনি বসেন আসছি। সেই প্রেক্ষিতে সিইও এর রুমের বাইরে সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের চেয়ারে বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই সিইও নাজিম উদ্দিন বিশ^াস উপরে উঠে আমাকে দেখেই গালাগালি দেওয়া শুরু করেন। এবং তার রুমের মধ্যে ডেকে দাঁড় করিয়ে রাখে। এমনকি মারমুখী আচারণ করতে উদ্যত হয়। তার এধরেণর আচারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের জায়গায় অবস্থিত প্রতিবন্ধী বায়জিদের ভাসমান টলের দোকানটি গত প্রায় ৫দিন আটকে রেখেছে পৌরসভার সিইও। আজকে আমাকে ডেকে, আমার সাথে যে আচারণ করেছেন তা ঐ চেয়ারে বসে করতে পারেন কি না বোধগম্য নহে। আগামীতে আমার মতো কারও সাথে যেন এধরণের আচারণ না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিষয়টি জানতে পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীনকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং ফোন কেটে দেন। তবে কাউন্সিলর শফিকুল আলম (বাবু) কে ফোন করলে তিনিও রিসিভ করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং ফোন কেটে দেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পৌরসভার সিইও একটি দায়িত্বশীল পদ। এই পদে যেই থাকুক তার কাছে এধরনের আচারণ প্রত্যাশা করি না আমরা। তিনি একজন সাংবাদিককে লাঞ্চিত করতে পারেন না। তার এধরণের কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।