সাতক্ষীরায় আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমি জবরদখলের চেষ্টা
রঘুনাথ খাঁঃ আদালতের নোটিশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুটি আমগাছ কেটে নিয়ে চার শতক জমি চাষ করে জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের সঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধে। গত ২৫ মে শনিবার সকাল ১০টার দিকে দুটি ফলন্ত আম গাছ কেটে ২৭ মে জমি লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা হয় বলে অভিযোগ।
ফিংড়ি গ্রামের মৃত মাদার চন্দ্র ঘোষের ছেলে অশোক কুমার ঘোষ (৮৭) জানান, প্রয়াত কার্তিক ঘোষ তার ছোট ভাই। বাবার মৌখিক বন্টননামা অনুযায়ি তারা দু ভাই ফিংড়ি মৌজার পৈতৃক জমি দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ ও ভোগদখল করে আসছিলেন। ১৯৯৮, ২০০০ সালে ২৫ শতক করে ও পরবর্তীতে সোয়া আট শতক জমি কার্তিকের কাছ থেকে নিদ্দিষ্ট চৌহার্দি ও নকশা এঁকে তিনটি রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে কেনেন একই গ্রামের গোলক চন্দ্র ঘোষের ছেলে সঞ্জয় কুমার ঘোষ। তিনটি ১৯৯৮ সালে ২৫ শতক জমি কেনার আগে দুই বছর ধরে চাষাবাদ করতো সঞ্জয়। গত ৪ মে সঞ্জয় তার নকশা মূলে কেনা জমি বাদ দিয়ে তার নিজেরই সুবিধামত জমি একই গ্রামের নেপাল ঘোষ ও বালিথা গ্রামের আব্দুর রহিমকে নিয়ে দখল করার চেষ্টা করলে তিনি (অশোক) বাধা দেন। পরদিন তিনি বাদি হয়ে সঞ্জয়, নেপাল ও আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় পিটিশন ৯২৩/২৪ নং মামলা করেন। বিচারক বিষ্ণুপদ পাল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। একইসাথে জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর সহকারি কমিশনারকে (ভ‚মি) নির্দেশ দেন । ৮ মে পুলিশ ও সহকারি কমিশনারের অফিস থেকে উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পেয়েই ক্ষুব্ধ হয় সঞ্জয়। একপর্যায়ে সে তাকেসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১০৭/১৭ ধারার মামলা করে। সঞ্জয়েরই দক্ষিণহস্ত নেপাল ঘোষকে দিয়ে আরো একটি মামলা করানো হয়। পরে সঞ্জয় জোরপূর্বক তার(অশোক) ঝাঁড় থেকে কয়েকটি বাঁশ কেটে নিয়ে যায়। থানায় অভিযোগ করলে পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ি আদালতে নোটিশ অবমাননার অভিযোগ করেন তিনি (অশোক)। আদালত পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপরও আদালতের নোটিশ অমান্য করে ২৫ মে শনিবার সকাল ১০টার দিকে ১৯৯৮ সালে প্রথম কেনা জমির পশ্চিম পাশে তার (অশোক) থাকা চার শতক জমিতে লাগানো দুটি আমগাছ কুড়াল দিয়ে কেটে শাবল দিয়ে গোড়াসহ তুলে ভ্যানযোগে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাধা দেওয়ায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সঞ্জয় ২৭ মে সোমবার সকালে তার (অশোক) চার শতক জমি চাষ করে জবরদখলের চেষ্টা করে। সরেজমিনে শুক্রবার সকালে দক্ষিণ ফিংড়ি ঘোষপাড়ায় গেলে স্থানীয় রেজাউল ইসলাম, মহব্বত আলী, পরান মÐলসহ কয়েকজন জানান, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার ঘেরের কর্মচারি হওয়ায় ও স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্যকে হাতে নিয়েই সঞ্জয় ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন। ২৫ মে সঞ্জয় নিজে অশোক ঘোষের দুটি আমগাছ কেটে প্রমাণ লোপাট করতে শিকড়সহ গুড়ি তুলে নিয়ে ২৭ মে ওই জমি দখলের উদ্দেশ্যে চাষ করেছেন। মাঝে মাছে অশোক ঘোষের ঝাঁড় থেকে বাঁশ কাটা ও জমি কেনার ২০ বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর নিজের পছন্দমত অশোক ঘোষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। এসময় পার্শ্ববর্তী কওছার আলীকে নিয়ে মামলায় উল্লেখিত জমি থেকে বাঁশ বিক্রি করতে আসেন সঞ্জয়। কথা বলার এাকপর্যায়ে সঞ্জয় ঘোষ তার বিরুদ্ধে অশোক ঘোষের জমি থেকে আম গাছ কেটে চার শতক জমি দখলের উদ্দেশ্যে চাষ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের মৎস্য ঘেরে কাজ করেন। তাকে নিয়ে অশোক ঘোষ কোন অপতৎপরতা চালালে তিনি ওই নেতাকে অবহিত করে থাকেন। দলিলে উল্লেখিত নকশা অনুযায়ি জমি তিনি কেনার পর থেকে দখল করছেন। আদালতের নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যতক্ষণ আদালত তাকে জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা না দিচ্ছেন ততক্ষণ তিনি জমি চাষ করবেন ও গাছ গাছালি কাটবেন। তিনি ও নেপাল ঘোষ আদালতে অশোক ঘোষ ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন বলে জানান।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, আদালতের নোটিশ না মেনে কাজ করলে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে সঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধে।