বোমার আগুনে জীবন্ত পুড়ছে ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত রোববার দিবাগত রাতে গাজার সর্ব দক্ষিণের রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত ওই আশ্রয়শিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলার পর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। এতে জীবন্ত পুড়ে মারা যান অনেকে। শিশুদের মরদেহগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে যায়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার জানিয়েছে, শরণার্থীশিবির হামলার ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৪৯ জন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য সেখানকার হাসপাতালগুলোর নেই।

এদিকে গাজায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরো ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৩৬ হাজার ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮১ হাজার ২৬ জন।

পোড়া শিবিরের কাছে আমর নামে কাঁপতে থাকা একটি ছোট ছেলে চোখের জল ফেলছে। হামলার সময় তিনি বাথরুমে ছিলেন। কান্না করতে করতে ছেলেটি বলে, এটি খুব দ্রুত ঘটেছিল। হঠাৎ ক্ষেপণাস্ত্র নেমে আসে, এবং বিস্ফোরিত হয় এবং সমস্ত মানুষ পুড়ে যায়। আমরা কেউ জানতাম না কি ঘটছে।

গোলাপী পায়জামা পরা একটি ছোট্ট মেয়ে রাফা শহরের কুয়েত হাসপাতাল রক্তাক্ত বিছানায় স্থির হয়ে শুয়ে রয়েছে। বারবার চোখের পলক ফেলতে গিয়ে তার মুখ বিহ্বল হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি হামলায় মেয়েটির ঘাড়ের উপর একটি বড় ক্ষত হয়েছে। সেটির চিকিৎসার জন্য ছোট মেয়েটিকে তার মা-বাবা হাসপাতালে নিয়ে আসে।

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা খবরে জানা গেছে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা থেকে ডক্টর মুহাম্মদ আল-মুগায়ের যখন ঘটনা স্থানে পৌঁছান, তখনো আগুন জ্বলছিল।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) এর বরাত দিয়ে ওয়াফা বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তাঁবু থাকা অনেকেই ইসরাইলের বোমার আগুনে জীবন্ত পুড়ে মারা গেছেন।

আল-মুগায়ের আল জাজিরাকে বলেছেন, শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। নিহতদের অধিকাংশের শরীর আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এই ঘটনা ভুলক্রমে ঘটে গেছে। তারা দাবি করেন, হামাসের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু এতে বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রাফাহর তাল আস-সুলতানে জাতিসংঘ মিশন ইউএন-আর-ডব্লিউর লজিস্টিক স্পেসের পাশে অস্থায়ী তাঁবু বানিয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের বিশ্বাস ছিল, সেখানে থাকলে নিরাপদে থাকবেন। কিন্তু জনাকীর্ণ ওই স্থানে ৮টি শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। প্লাস্টিক ও কাপড়ের তৈরি তাঁবু হওয়ায় হামলার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।

সূত্র: আল জাজিরা

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)