নিখোঁজ ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনির বাবার দায়েরকৃত মামলায় ওসি এমদাদ ও এসআই হিমেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা

রঘুনাথ খাঁ ঃ আট বছর আগ সাতক্ষীরা শহরর পারকুকরালির হোমিও চিকিৎসক ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনিকে শহরের লাবনী মোড় থেকে ধরে এনে লকআপে তিন দিন আটক রাখার পর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হাইকার্টের নির্দেশে দায়েরকৃত মামলায় সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়পছে সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লার। রবিবার সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম এস এম আশিকুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দন। একই সাথে এমদাদ শেখ ও হিমেলের আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামীরা হলেন, পিরাজপুর জলা সদরর পিরাজপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঃ এমদাদুল হক শেখ ও নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার পাংখাচর গ্রামের মাঃ সাঈদুর রহমানের ছেলে ও সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক উপপরিদর্শক মাঃ হিমেল হোসেন। জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামী হলেন, গোপালগঞ্জ জেলা সদরের করপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের মেল্লার ছেলে ও সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা।
মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৬ সালর ৪ আগষ্ট রাত সাড় ৯টার দিকে অসুস্থ বাবার জন্য বাইসাইকেলে ঔষধ কিনতে যেয়ে সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনেমা হলের সামনে ফটোস্টাটের দোকান থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল হোসেন শহরের পারকুকরালির শেখ আব্দুর রাশেদ এর ছেলে হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনিকে(২৭) থানায় ধরে নিয়ে যান। ৫,৬ ও ৭ আগষ্ট স্ত্রী জেসমনি নাহার রেশমা তার শ্বশুর আব্দুর রাশেদ, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ ও স্বজনদের নিয়ে থানা লক আপ থেকে খাবার দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমলের সঙ্গে কথা বললে জনির আল্লার দলে নামে একটি জঙ্গি সংগঠণের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছপ বলে জানানো হয়। স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন ও উপপরিদর্শক হিমেল ডাঃ জনির স্ত্রী রেশমার কাছে দাবি করেন মাটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। ৮ আগষ্ট থানায় গেলে জনিকে পাওয়া যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন (পাটকলঘাটায় ১২০ ভরি সোনা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০২১ সাল চাকুরিচ্যুত), সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের জানিয়ে কোন লাভ হয়নি। ওই বছরর ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ সাধারণ ডায়রী না নওয়ায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেসমিন নাহার রেশমা। অবশেষে ২০১৭ সালর ২ মার্চ হাইকার্টে রিট পিটিশন (২৮৩৩/১৭) দাখিল করেন জেসমিন নাহার রেশমা। মামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়। পরবর্তীত আদালত মোখলছুরকে ওই বছরর ১২ এপ্রিলের মধ্যে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করানোর নির্দেশের পাশাপাশি ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবদন দাখিলের জন্য ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্তকালে সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা নিখাোজ ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনি আল্লার দল নামে একটি জঙ্গী সংগঠণ করতেন বলে লিখিতভাব উল্লেখ করেন। প্রতিবেদন রিটকারির বিপক্ষে যায়।পরে আদালতপর নির্দেশে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ হাইকার্টে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবদনে থানা লক আপ থেকে ডাঃ জনির নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনে তৎকালিন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরাজ হোসেন মোল্লা ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসন হোমিও চিকিৎসক ডাঃ মাখলেছুর রহমানকে লাবনী মোড় থেকে তুলে আনা, থানা লকআপে নির্যাতন ও সেখান থেকে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত বল উল্লখ করন। থক জনিকে পরবর্তীতে এক আদেশে ওই বছরর ৩ অক্টাবরপর মধ্যে এ সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরা ইনভসটিগেশন) নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত প্রতিবদনে ডাঃ জনিকে থানায় এনে আটক রাখার সত্যতা মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালর ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবদন পর্যালোচনা শেষে মহামান্য হাইকার্ট ডাঃ জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রী নিয়ে তার তদন্ত করে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল্ল্যা ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসনের বিরুদ্ধ বিভাগীয় মামলা গ্রহণ ও একইসাথ তাদর বিরুদ্ধে আদালতপ মামলা করা যেতে পারে বলপ এক আদেশে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গার আইন সহায়তা চেয়ে না পেয়ে বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাড. সুলতানা কামালের সহায়তায় নিখোঁজ জনি’র বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ ২০২১ সালর ১৭ আগষ্ট সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী সদর থানার সাবক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসন, ফিরোজ হোসপন মোল্লা ও উপপরিদর্শক হিমপলের বিরুদ্ধে জনিকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়। মামলার নথিতে হাইকার্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশনের আদেশের জাবেদা নকল, রিট পিটিশন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও পিবিআই প্রতিবদনের ছায়ালিপি জমা দেওয়া হয়। মামলা তদন্তে গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত শাখার কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হারুণ অর রশীদ আসামীদের বিরুদ্ধে বাদির আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়পছপন মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। প্রতিবদনে ডাঃ জনির শ্বাশুড়ি কলারায়া উপজপলার লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের মনোয়ারা খাতুনের জমি তৎকালিন লাঙ্গলঝাড়া ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন (বর্তমান প্রয়াত)কৈশলে ইউনিয়ন পরিষদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদ্বিরকারক হিসেবে ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনিকে শায়েস্তা করার জন্য কলারায়া থানা থেকে হঠাৎ বদলী হয়ে আসা উপপরিদর্শক হিমেলের মাধ্যমে শহরের লাবণী মোড় থেকে তুলে আনা হয় মর্মে উল্লেখ করা হয়। পরবতীতে এমদাদ হোসেন ও হিমেলের পরিকল্পনায় ডাঃ মোখলেছুর রহমান থানা লকআপ থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে তা গ্রহণ করেননি তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা। প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী চতুর্থ ধার্য দিন গত ২৯ জানুয়ারি আদালত তিন আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দেন।এর আগ ২০১৮ সাল উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে ৬/১৮, ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ ও ফিরাজ হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১৬/২০ ও ১৭/২০ বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় এমদাদ হোসেন ও ফিরোজ হোসেন মোল্লাকে চাকুরি থেকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে শেখ এমদাদ হোসেন উচ্চ আদালতে গেলে পরবর্তীতে তাকে পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন তিনি অবসরে।
এ ব্যাপারে নিখোঁজ ভিকটিম ডাঃ মোখলেছুর রহমানের বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ জানান, এমদাদ হোসেন ও হিমেল আদালতে হাজিরা দিয়েও কাঠগোড়ায় না উঠে পালিয়ে যাওয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে। ফিরোজ হোসেন মোল্লার জামিন না হলে খুশী হতেন তিনি। তবে তার ছেলেকপ জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করতে গেলপ আসামীদের রিমাণ্ডে নিয়প জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাই কোন আইনে আসামীদের সিআর মামলা থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় জিআর মামলায় বা অন্য কান প্রক্রিয়ায় রিমাণ্ডে নেওয়া যায় তার জন্য আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন তিনি।
সাতক্ষীরা জজ কার্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড.মোসলেমউদ্দিন ও অ্যাড. ফরহাদ হোসেন বলেন, থানা লকআপে তিনদিন আটক রাখার পর ডাঃ মোখলছুর রহমান জনি নিখোঁজ হয়ে গেলো। ভিকটিম উদ্ধারে আসামীদের রিমাণ্ড নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই এ সংক্রান্ত আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে তারা ঢাকার জ্যেষ্ঠ আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন বাবা ও মা তাদের সন্তানকে, স্ত্রী তার স্বামীকে ও সন্তান তার বাবাকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় দেখতে পাবে না এটা হতে পারে না। এমদাদ শেখ ও হিমেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পাশাপাশি তাদের পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম জীবনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফিরোজ হোসেন মোল্লা ৫ হাজার টাকা বণ্ডে জামিন পেয়েছেন। আগামী ২৭ জুন পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান রবিবার আদালতে এমদাদ শেখ ও হিমেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ও ফিরোজ হোসেন মোল্লার জামিন মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)