সুদের কারবারি আকবর আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
রঘুনাথ খাঁঃ সুদের কারবারি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আকবর আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অনেকেই চড়া সুদে টাকা নিয়ে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে না পেরে মামলা হওয়ায় এলাকা ছাড়া হয়েছেন। সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ি আনোয়ারুল ইসলাম শাহ্জীর সাউথ ইষ্ট ব্যাংক লিঃ এর চেক নরসিংদীর আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিঃ এ ডিজঅনার করিয়ে পরিকল্পিত মামলা করা হয়েছে।কলারোয়া উপজেলার দক্ষিণ সোনাবাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেন, শামীম হোসেনসহ কয়েকজন জানান, তাদের গ্রামের শওকত আলী গোলদারের ছেলে আকবর আলী বুলবুল দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার দুলাভাই সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার টুটুল একজন সোনাপাচারকারি। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে টুটুল ও থানাঘাটার মিঠুসহ কয়েকজন ভারতে পাচারকালে ১৮ পিচ সোনার বারসহ গ্রেপ্তার হয়। টুটুল কয়েকমাস পর জামিনে মুক্তি পায়। কলারোয়ার সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হওয়ায় টুটুল বাহিনীর সোনা পাচারের সীমান্ত প্রহরী হিসেবে কাজ করে থাকেন আকবর আলী বুলবুল। সে কারণে আকবর আলী সোনা পাচারের অংশীদার হিসেবে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে থাকেন। ওই টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ির কাছে চড়া সুদে খাটিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে আংশিক টাকা পরিমোধ না করতে পারা ব্যক্তিদের নামে নিজের সুবিধানুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে মামলা করে থাকেন। অনেক সময় নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামলা দিয়ে ওইসব অঞ্চলের সোন পাচারকারি সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে পাওনাদারদের নির্যাতন ও নিপীড়ন করার অভিযোগ রয়েছে আকবর আলী বুলবুলের বিরুদ্ধে।সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের আব্দুল কাদের শাহাজীর ছেলে সুলতানপুর বড়বাজারের মেসার্স নিউ মদিনা হার্ডওয়ারের স্বত্বাধিকারী আনোয়ারুল ইসলাম শাহজী বলেন, শহরের কাটিয়ার টুটুলের শ্যালক হিসেবে আকবর আলী বুলবুলের সঙ্গে ২০১৬ সালে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে বুলবুল সুদের কারবার করেন বলে জানতে পারেন। মাসিক চার হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে বুুলবুলের কাছ থেকে তিনি দুই দফায় ২০ লাখ টাকা নেন। যথা সময়ে টাকা পরিশোধ করে পরবর্তীতে আবারো ছয় লাখ টাকা নিয়ে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন। একপর্যায়ে বুলবুল তার ব্যবসায়িক পার্টনার হতে চাইলে তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। টাকা চাইলে বুলবুলের বাড়িতে গেলে শৌচাগারে থাকার সূযোগে তার ব্যাগে থাকা সাউথ ইষ্ট ব্যাংক লিঃ সাতক্ষীরার এসএমআই কৃষি ব্র্যাঞ্চের একটি চেক নিয়ে নেন আকবর। ওই চেকটিতে ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখ ও নয় লাখ টাকা লিখে নরসিংদীর আল অরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ এর ভেলানগর শাখা থেকে ওই বছরের ৪ নভেম্বর ডিজঅনার করেন আকবর আলী বুলবুল। আকবর আলী বুলবুল তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার রাজারবাগ গ্রামে বসবাস করেন উল্লেখ করে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (বেলাব) সিআর- ৩৩১/২০ নং মামলা করেন।আনোয়ারুল ইসলাম শাহজী আরো বলেন, মামলায় তাকে রং ব্যবসায়ি হিসেবে উল্লেখ করে প্রথমে ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন ও পরে নয় লাখ টাকা দিয়েছেন উল্লেখ করেন আকবর আলী বুলবুল। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রদানকালে তিনি বলেছেন জামাতার চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ের গহনা বিক্রি করে আনোয়ারুলকে নয় লাখ টাকা দেন তিনি। তার মধ্যে ছয় লাখ টাকা চেক এর মাধ্যমে ও তিন লাখ টাকা নগদে। তবে টাকা দেওয়ার তারিখ তিনি জানাতে পারেননি। বেগতিক বুঝে মামলা নিজের অনুকুলে রাখতে সাতক্ষীরার ঘটনা নরসিংদীতে নিয়ে বুলবুল নরসিংদীতে যেয়ে ভাড়াটিয়া গুÐাদের দিয়ে তাকে (আনোয়ারুল) হুমকি ধামকি দেওয়াসহ তার আইনজীবীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে চলেছেন। ফলে তিনি রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়।এ ব্যাপারে আকবর আলী বুলবুল জানান, ১৯৯৬ সালে তার ঢাকার তাঁতীবাজারে সোনার দোকান ছিল। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে ২০০১ সালে তার সোনার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জীবনের অনেক সময় কলারোয়ার ভাদিয়ালীতে কাটিয়েছেন। তার ভগ্নিপতি সোনা পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজে কোনদিন সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আনোয়ারুল একজন প্রতারক। বর্তমানে তিনি মেয়ের বাড়ি নরসিংদীর বেলাব উপজেলার রাজারবাগে থাকেন। সুদের ব্যবসা ও আনারুলকে হুমকি ধামকির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, খুব সম্প্রতি নরসিংদী যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলার রায় হবে জেনে আনারুল একের পর এক মিথ্যাচার করছে।