রাত পোহালেই সাতক্ষীরার তিন উপজেলায় ভোট
রঘুনাথ খাঁ:
প্রচার প্রচারণাসহ সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে আজ রাত পোহালেই মঙ্গলবার ধাপে জেলার দেবহাটা, আশাশুনি ও তালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। সোমবার সকালে তিনটি উপজেলা পরিষদ থেকে স্ব স্ব নির্বাচন কেন্দ্রে নির্বাচন সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে কেন্দ্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে ব্যালট। দেবহাটা, আশাশুনি ও তালা উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ, আনসার ভিডিপি নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমান মোবাইল কোর্ট ও র্যাব সদস্যরা টহল দিবেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল ২১ মে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে দেবহাটা, আশাশুনি ও তালা উপজেলার ২৮ টি ইউনিয়নের ২১১ টি ভোটকেন্দ্রে ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচনে জেলার তিন উপজেলা থেকে চেয়ারম্যানপদে ১৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে গত ২ মে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন ক থেকে তিন উপজেলার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীগণ নির্বাচনি প্রতীক গ্রহণ করেন। এ নির্বাচনে দেবহাটায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪১ ভোটকেন্দ্রের ২৬৭ স্থায়ী ও ১২ টি অস্থায়ী মোট ২৭৯ টি ভোটকক্ষে সর্বমোট ১,১১,৭৯৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ উপজেলায় মোট ভোটারের ৫৬,২৬৩ জন পুরুষ, ৫৫,৫৩২ জন নারী ভোটার রয়েছে। এ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো. মুজিবর রহমান মোটরসাইকেল প্রতীক, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদাউস আলফা হেলিকপ্টার প্রতীক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এড. স.ম গোলাম মোস্তফা চিংড়িমাছ প্রতীক, জেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য আলহাজ্ব মো. রফিকুল ইসলাম আনারস প্রতীক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক আবু রাহান তিতু ঘোড়া প্রতীক নিয়ে এখনো পর্যন্ত মাঠে আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ তালা প্রতীক এবং প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার ঘোষ টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক জননন্দিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমেনা রহমান ফুটবল প্রতীক এবং বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জিএম স্পর্শ কলস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তালা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ৯৩ ভোটকেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন, নারী ১লাখ ৩২ হাজার ৫২ জন এবং একজন হিজড়া ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ঘোষ সনৎ কুমার (কাপপিরিচ), সরদার মশিয়ার রহমান (চিংড়ি মাছ) সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম (ঘোড়া), প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম (দোয়াত-কলম), আতাউর রহমান গোলদার (মোটরসাইকেল), বিশ্বজিত সাধু (হেলিকপ্টার), এমএ মালেক (আনারস) এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোঃ ইখতিয়ার হোসেন (মাইক), সাংবাদিক মোঃ আব্দুল জব্বার (তালা), কাজী ইমরান হোসেন লিয়াকাত (উড়োজাহাজ),নাজমুল হুদা পলাশ (টিয়া পাখি), শাহ আলম টিটো (টিউবওয়েল), মোঃ বাবলরু রশিদ (চশমা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুরশিদা পারভীন পাঁপড়ী (কলস) ও মোস্তারী সুলতানা পুতুল (ফুটবল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলার ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম পরিবর্তনের অঙ্গীকার ও স্মার্ট উপজেলা গড়ার লক্ষ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান তিনি। চিংড়ি মাছ প্রতীকের প্রার্থী সরদার মশিয়ার রহমান অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন তিনি আশা করেন। নির্বাচনে জনগণ তাকে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে কাপ পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং সন্ত্রাস,মাদক মুক্ত ও স্মার্ট উপজেলা গড়তে এবং সাধারণ মানুষের সন্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে তালাবাসী অতীতের মতো এবারও কাপপিরিচ প্রতীককেই বেছে নিবেন। এদিকে, আশাশুনি উপজেলায় ১১ ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে ৮৭ ভোটকেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে সর্বমোট ২,৩৯,২৩৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ উপজেলায় মোট ভোটারের ১,২১,৯৭৯ জন পুরুষ, ১,১৭,২৩০ জন নারী ও ১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে। এবারের নির্বাচনে এ উপজেলা থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ৪জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৫জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী অর্থাৎ ৩টি পদের বিপরীতে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। এখানে চেয়াম্যান পদে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম চিংড়ী মাছ প্রতীক, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ঘোড়া প্রতীক এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠের লড়াই করছেন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী টিউবওয়েল প্রতীক, আশাশুনি প্রেসকাবের সভাপতি জিএম আল ফারুক টিয়া পাখি প্রতীক, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এনএমবি রাশেদ সারোয়ার শেলী চশমা প্রতীক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসমাউল হোসাইন মাইক প্রতীক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সাহেব আলী তালা প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেমা খাতুন মিলি কলস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা পারভীন হাঁস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহেরুন্নেছা ফুটবল প্রতীক ও সদ্য সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মারুফা খাতুন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এসব প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট এবং দোয়া চেয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ পথসভা উঠান বৈঠক এবং নির্বাচনী সভা করে চলেছেন। রবিবার রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়। ইতিমধ্যে তিন উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখেও চলছে আগামী ২১মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কখনো কখনো আবার চায়ের আড্ডায় বা রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ দিক, জনসেবা, যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে, এ নির্বাচনে আশাশুনি উপজেলার ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা বিরাজ করছে খোদ প্রার্থীদের মাঝে। এছাড়াও প্রার্থী থেকে কর্মী সমর্থকদের মাঝে বাক যুদ্ধ যেন কোনভাবেই থামছেনা। চলমান এ বাকযুদ্ধ যে কোনো সময় রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই উৎতপ্ত হচ্ছে ভোটের মাঠ। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রার্থীরা বিভিন্ন পদে লড়ছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় যেমন কমতে পারে ভোটার উপস্থিতি তেমনি সংঘর্ষে জড়াতে পারে আওয়ামী লীগের ঘরোয়া প্রার্থীরা। এ বিষয়ে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেনুজ্জামান হোসেন জানান, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম টানা তিনবার উপজেলা পরিষদের চেয়ার দখল করলেও তেমন কোন উন্নয়ন না করায় ভোটারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সাধারণ ভোটারা চায় নতুন মুখ। কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর সাকি পলাশ অভিযোগ করে জানান, এ উপজেলার কিছু এলাকায় ভোটারদের একটি প্রভাবশালী মহল হুমকি-ধামকী অব্যাহত রেখেছে। এদিকে আনারস প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এড.শহিদুল ইসলাম পিন্টু জানান, ২৪টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী জানান, এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ১১ টি ইউনিয়নে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়ন থাকবে। কোন প্রকার সংঘাত বরদাশত করা হবেনা।