শ্যামনগরে মৎস্য ঘের জবর দখল ও লুটপাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন
অনাথ মন্ডল : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মৎস্য ঘের জবর দখল ও লুটপাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেসার্স গউর এন্টারপ্রাইজের আয়োজনে ১৮ই মে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন খলিশাবুনিয়ায় ৩ নম্বরে অবস্থিত ২৬০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধের ওপর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় খলিসাবুনিয়ার রাস্তা ভেঙে কয়েক শত বিঘা জমি নদীর চরের সাথে মিশে যায়। পরবর্তীতে ২৬০ বিঘা জমি বাদ দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি হয়। আর ঐ ২৬০ বিঘা জমি নদীর চরে মিশে যাওয়ায় জোয়ার ভাটা বইতে থাকে। তখন ঐ সকল জমির মালিক গণ জমি রক্ষা করতে না পেরে কালীগঞ্জের মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল সাত্তার এর কাছে ডিডি দেয়। শর্ত থাকে ঘেরে বাঁধ দেওয়ার পর থেকে ৪ বছর কোন হারি দিবে না, ৪ বছর পর থেকে হারি দিবে। কিন্তু সাত্তার বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করলেও জোয়ার ভাটার বওয়ার কারনে বাঁধ সম্পূর্ণ করতে না পেরে ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে সাতক্ষীরার ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর একই চুক্তিতে এসে ঘেরের বাঁধ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু কয়েক বছর ঘের করার পর আবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফেলে রেখে চলে যায়। সেখান থেকে ২ বছর পরে থাকার পর জমির মালিকরা মিজানুর রহমানের কাছে ২০২১ সালে ঘেরের জমি হস্তান্তর করে ২০২২ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ডিড দেয়। মিজান ২০২১ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে বাঁধ দিয়ে ঘেরের জমি রক্ষা করে ঘেরে মাছ চাষ শুরু করে কিন্তু বার বার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কোটি টাকার ওপরে খরচ হয়ে যায় ও ঘেরের মাছ নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে জমির মালিকদের কাছে সময় চাইলেও জমির মালিক জঙ্গি মুজিবুর ও ডাকাত আইয়ুব আলী মোল্যা, সাইফুল মোল্লা ও এর নেতৃত্বে ২৬শে এপ্রিল ১০০/২০০ জন এসে ছোট ৩ টা বাসা সহ ঘেরের মেইন বাসা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। ফলে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয় মিজানের। এখন গায়ের জোরে জমিতে ভেড়ি দিয়ে আলাদা করে নিচ্ছে। অন্যদের বেলায় ৪ বছর বিনা হারিতে জমি দিলেও মিজানের বেলা সেই সুযোগ দিচ্ছে না জমির মালিকরা। এক কোটি টাকার ওপর খরচ হলেও বার বার ভাঙার হাত থেকে মিজান জমি গুলো রক্ষা করে রেখেছে। মিজান জমির মালিকদের কে হারী বা লীজের টাকা দিতে সম্মতি আছে যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাকে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়।তারা আরও বলেন, হয় ঘের আমাদের করতে দিক আর তা না হলে বার বার বাঁধ দিতে গিয়ে যে কোটি টাকার ওপর খরচ হয়েছে সেই টাকা ফেরত দিক।জমির মালিক আবুল কালাম মোল্লা বলেন, আমাদের চার ভাইয়ের মোট ছয় বিঘা জমি রয়েছে কিন্তু মিজান এতো বছর ধরে আমাদের জমির হারি না দেওয়ায় আমরা নেট দিয়ে জমি আলাদা করে নিয়েছি। আরেক জমির মালিক আব্দুল গফুর বলেন, এতো বছর ধরে ঘের করলেও কেউ আমাকে ১০০ টাকাও হারি দিলো না। গাবুরা ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমাম হাসান বলেন, আমার ওয়ার্ডের ৩ নং নামক স্থানে দীর্ঘ দিন একটা ঘের নিয়ে বিবাদ চলছে জমির মালিক ও ডিড মালিক দের মধ্যে। এখানে যারা ঘের করতে আসছে বিগত দিনে তাদের সাথে ডিড মালিকদের সাথে জমির মালিকদের একটা শর্ত হয় এতো বছর ফ্রী। কারণ যেহেতু এটা ভাঙন এলাকা চর হয়ে যায় আয়লার পরে। এই জমি গুলো সব ইউনিয়নের বাইরে চলে যায়। এর আগে দুই জন ঘের করতে আসে কিন্তু বার বার বাঁধ ভাঙার কারণে তারা রেখে চলে যায়। পরে মিজান এসে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বেড়িবাঁধ নির্মান করে। জমির মালিক দের জমি উদ্ধারের সার্থে যারা ঘের করতে আসে তাদের সাথে একটা চুক্তি হয় এতো বছর ফ্রী ও বাকি কয় বছরের হারি দেবে, এই ভাবে দীর্ঘদিন যাবত ঘের করে আসছে। এখনো পর্যন্ত এই জমি নিয়ে কোন সুষ্ঠ সমাধান হয়নি। আমি এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হয়ে এখন একটু আতঙ্কে আছি ঘের মালিক ও জমির মালিকদের মধ্যে যেকোনো সময় একটা মারামারি বা রক্তখয়ী সংঘর্ষ বাধতে পারে। আমার প্রশাসনের কাছে দাবি এর একটা সুষ্ঠ নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হওয়া দরকার তা না হলে এখানে একটা খুন খারাপি হতে পারে।তবে মিজানুর রহমান বলেন আমি জমির মালিকদের কে হারী বা লীজের টাকা দিতে সম্মতি আছি ওনারা আমার এ বছর টা ঘের করার সুযোগ দিক।