কেমন হলো বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল?
স্পোর্টস ডেস্ক:
বড় কোনো টুর্নামেন্টের আগে দল ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নাটকের ঘটনা পুরোনো। যার ব্যক্তিক্রম হলোনা এবারের টি-২০ বিশ্বকাপেও।
বিশ্বকাপের প্রাথমিক স্কোয়াড আইসিসির কাছে জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ১ মে। নিউজিল্যান্ড সবার আগে দল ঘোষণা করলে শুরু হয় বাকিদের দল ঘোষণার অপেক্ষা। একে একে সবাই দল ঘোষণা করলেও বাকি ছিল শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
অবশেষে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে বিসিবি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে ইনজুরিতে পড়া তাসকিন আহমেদের দলে থাকা নিয়ে শঙ্কা ছাড়া তেমন কোনো উত্তাপ ছিল না এবারের দল ঘোষণা নিয়ে।
সব শঙ্কা পেছনে ফেলে বিশ্বকাপ দলে তাসকিন জায়গা করে নিয়েছেন তো বটেই, পেয়েছেন সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও। আর শেষ বেলায় মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে একটা গুঞ্জন উঠলেও তা সত্যি হয়নি। ১৫ জনের স্কোয়াড বা স্ট্যান্ডবাই কোনও তালিকায়ই নাম উঠেনি মিরাজের।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড কেমন হচ্ছে, অনেকটা তা অনুমেয়ই ছিল। সেই ধারাবাহিকতার বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কোয়াডে প্রত্যাশিত কেউই বাদ পড়েননি।
অফফর্মে থাকা লিটন দাস উইকেটকিপার কোটায় দলে টিকে গেছেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যাট না হাসলেও শান্তই থাকছেন অধিনায়ক। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকারদের সঙ্গে তাওহীদ হৃদয়, তানজিদ হাসান তামিম, জাকের আলী অনিকরা সামলাবেন ব্যাটিংয়ের গুরুভার।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ফিট হতে পারলে পেস ইউনিটের নেতা হবেন তাসকিন। সঙ্গী অভিজ্ঞ মুস্তাফিজ ও শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ পেসার হিসেবে তানজিম সাকিবও আছেন। দলে ঢোকার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত সাইফউদ্দিনকে পেছনে ফেলেছেন এই তরুণ পেসার।
টি-২০ সংস্করণের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছাড়াও স্কোয়াডে আছেন তিন স্পিনার-শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন ও তানভীর ইসলাম আছেন স্কোয়াডে।
স্মরণকালে এটিকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বিতর্কিত বিশ্বকাপ স্কোয়াড বলা যায়। কিন্তু শক্তিমত্তায় কেমন হলো বিশ্বকাপ স্কোয়াড?
বড় দুঃশ্চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করবেন তানজিদ তামিম তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কিন্তু তিনি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন জাতীয় দলের হয়ে শুধুমাত্র জিম্বাবুয়ে সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। ফলে তার ওপর আলাদা একটা চাপ থাকছেই। চাপটা আরো বাড়ছে তার সঙ্গীদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে।
লিটন দাসের অফফর্ম ও সৌম্য সরকারের অধারাবাহিকতা তানজিদের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। তাতে তার সহজাত খেলা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু নির্বাচকদের হাতে এর চেয়ে ভালো বিকল্পই বা কোথায়!
এছাড়া জিম্বাবুয়ে সিরিজে রান করতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রশ্ন উঠেছে তার স্ট্রাইক রেট নিয়েও। বিশ্বমঞ্চে তিনি ফর্মে না ফিরলে আরো বেশি করে ভুগবে টাইগাররা।
অফফর্মে সাকিব, ভরসা রিয়াদ-হৃদয়
মিডল অর্ডারে সাকিব আল হাসানের ফর্মও চিন্তার কারণ হতে পারে। বিপিএলে মিশ্র অভিজ্ঞতার পর জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-২০তে ফিরেছেন সাকিব। সময়তো মোমেন্টাম খুঁজে না পেলে বিপদে পড়বে টাইগাররা।
মিডল অর্ডারে অবশ্য তাওহীদ হৃদয়ের ফর্ম আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও আছেন ফর্মে। জাকের আলী অনিকও দেখাচ্ছেন সম্ভাবনা। সে হিসেবে মিডল অর্ডারকেই এই মুহূর্তে টাইগারদের সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা বলা চলে।
তাসকিনকে নিয়ে শঙ্কা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যাচ্ছে চারজন পেসার ও তিনজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে। পেসারদের মধ্যে সেরা ফর্মে থাকা তাসকিন পড়েছেন চোটে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার সেরে ওঠা নিয়ে আছে সন্দেহ। শেষ পর্যন্ত যদি তিনি পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠতে না পারেন তবে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশ।
সে ক্ষেত্রে অবশ্য স্ট্যান্ডবাই তালিকায় থাকা হাসান মাহমুদকে দলে নিতে পারে টাইগাররা। তাসকিন ছাড়াও আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করে আসা মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তরুণ তানজিম সাকিবকে নিয়ে পেস আক্রমণ সম্ভাবনাময় হলেও ডেথ ওভারে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
স্পিন আক্রমণ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে স্পিনাররা কিছুটা হলেও সুবিধা পাবেন। নিঃসন্দেহে সাকিব সে ক্ষেত্রে দলের বড় সম্পদ হতে যাচ্ছে। বাকি স্পিনারদের মধ্যে শেখ মেহেদী ও রিশাদ হাসানকেই একাদশে দেখা রাখার সম্ভাবনা বেশি। দুজনই ক্যারিবিয়ানে কার্যকরী হতে পারেন। সেই সঙ্গে বোনাস হিসেবে তাদের ব্যাটিং তো আছেই। তবে স্পিনাররা যুক্তরাষ্ট্রে কেমন করেন তাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড:
লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, তানভীর ইসলাম, শেখ মাহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।
রিজার্ভ: হাসান মাহমুদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব।