প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় চলছে ভোটগ্রহণ
ডেস্ক রিপোর্ট: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।এ ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২২টিতে ইভিএম এবং বাকিগুলোতে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হবে।প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলার তপশিল ঘোষণার পর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্থগিত ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে ১৩টি উপজেলা বাদ দেওয়ার পর বাকিগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে ইসি। এর মধ্যে ৫টি উপজেলায় (হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, পরশুরাম, বাগেরহাট সদর ও শিবচর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব প্রার্থী বিজয়ী হন। এ ছাড়া ধাপ পরিবর্তন, মামলা ও মৃত্যুজনিত কারণে ৮টি উপজেলায় (নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমারখালী, রোয়াংছড়ি, থানচি, গোপালপুর, মহাদেবপুর, নাঙ্গলকোট ও সরিষাবাড়ী) এ ধাপে ভোট হচ্ছে না। বাকি ১৩৯টি উপজেলায় ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৩৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ইসি। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। পরে ধাপগুলোর জন্যও একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে ইসি।এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের এ নির্বাচনে ১৩৯ উপজেলায় মোট কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার ৪০০টি (কমবেশি)। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ৪২৪টি কেন্দ্রে গতকাল রাতেই নির্বাচনী সরঞ্জামসহ ও ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আর ১১ হাজার কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হলেও ব্যালট পেপার পাঠানো হয় আজ ভোরে। দুর্গম যেসব উপজেলায় গতকাল ব্যালট পাঠানো হয়, তার মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, চর রাজীবপুর; মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল, সন্দ্বীপ; রাঙামাটির রাঙামাটি সদর, কাউখালী, জুরাছড়ি, বরকল; বান্দরবান সদর, আলীকদম; খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়; সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের পর এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোটের বিপক্ষে জনমত তৈরিতে মাঠে রয়েছে বিএনপি। ফলে দলের প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার কৌশল নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে সারা দেশেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। দলের নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়স্বজন। বাকি উপজেলাগুলোতেও রয়েছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীরা। ফলে আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে কিছু মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগের পর ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী এমপিকে সতর্কও করেছে ইসি। সর্বশেষ গতকাল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেক উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে লড়ছেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। আজ ভোটের দিনে সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে যে কোনো মূল্যে ভোট সুষ্ঠু করতে বদ্ধপরিকর ইসি। সেই লক্ষ্যে এবার সর্বোচ্চসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকছে।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকবেন। এর আগে কখনো এত বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্রে ছিলেন না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিটি স্বাভাবিক কেন্দ্রে অস্ত্রসহ তিন পুলিশ, অস্ত্রসহ আনসারের পিসি ও এপিসি থাকবেন তিনজন। প্রতিটি বুথ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বনিম্ন ১০ জন আনসার সদস্য থাকবেন। ৬টির বেশি বুথ আছে, এমন জায়গাগুলোতে একজন করে অতিরিক্ত আনসার সদস্য থাকবেন। এবার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। প্রতিটি উপজেলায়ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটের আগের দিন ও পরের দিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। গড়ে ৫টি সেন্টারের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল ফোর্স থাকবে। আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এই মোবাইল ফোর্স গঠন করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিজিবির বদলে কোস্টগার্ড বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটা সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনসংক্রান্ত অভিযোগ ৯৯৯-এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি অভিযোগ আসার পর কারা তা দেখবে, তাও ট্র্যাকিং করা হবে। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে গতকাল থেকেই ৪৭০ প্ল্যাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে। প্রতিটি উপজেলায় দুই থেকে চার প্ল্যাটুন দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেন ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে ভোট আদায় করতে না পারে বা ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তায় কোনো আয়োজন কমতি রাখা হয়নি। আমরা আশা করি, ভোটের হার ভালো হবে।