তীব্র গরমে বাড়ছে প্রস্রাবের সংক্রমণ, করণীয় কী?

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
দিন দিন বেড়েই চলছে গরমের তীব্রতা। আর এই সময় সবচেয়ে বেশি যে রোগীর সংখ্যা বাড়ে তা হলো প্রস্রাবে সংক্রমণ বা ইউটিআই। ইংরেজি ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ইউটিআই।

ইউটিআই রোগটি সাধারণত মূত্রনালির এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে যখন মূত্রনালির নিম্নাংশ আক্রান্ত হয় তখন চিকিৎসাশাস্ত্রে এই পরিস্থিতিকে বলা হয় মূত্রথলির সংক্রমণ বা সিস্টাইটিস আর মূত্রনালির ঊর্ধ্বাংশ আক্রান্ত হলে তাকে কিডনির সংক্রমণ বা পায়েলোনেফ্রাইটিস বলে ধরে নেন বিশেষজ্ঞরা।

নারী কিংবা পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ঠিক কী কারণে প্রসাবের ইনফেকশন হতে পারে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক হাসিনাতুল জান্নাত বলেন, দীর্ঘ সময় প্রসাব আটকে রাখার কারণে নারী ও পুরুষ উভয়কেই এই সমস্যায় পড়তে হয়, যা পরবর্তীতে মূত্রনালির সংক্রমণসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা, একইসঙ্গে গরমের দাবদাহ এই রোগের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত।

ইউটিআই সমস্যায় বেশকিছু লক্ষণ রোগীর শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানি হওয়া, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাব করতে অসুবিধা অনুভব করা, বারবার অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে অস্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করা, দুর্গন্ধময় ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি।

এসব লক্ষণের পাশাপাশি আরো থাকতে পারে জ্বর, বমি, বমিভাব, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা কিংবা প্রস্রাবের পথে সাদাটে তরল বের হওয়া। বয়স্ক ব্যক্তির সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্দিষ্ট উপসর্গ স্পষ্ট হয় না। তবে রোগী নিস্তেজ বোধ করেন ও কখনো কখনো অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন।

এসব উপসর্গ স্পষ্ট হয়ে উঠলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কেন না এই লক্ষণগুলোই আপনার শরীরে প্রস্রাবের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

এই পরিস্থিতিতে রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। সঠিক মেয়াদে, সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করা ও প্রস্রাব না আটকে রাখার অভ্যাস এই রোগকে অনেকটাই দূরে ঠেলে দেয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন মনে করেন, প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধে রোদে অপ্রয়োজনে বের না হওয়াই ভালো। বাড়ি থেকে বের হতে হলে ছাতা ব্যবহার করা ভালো। গরমেও শরীরকে ফিট রাখতে বেশি বেশি ফলের জুস খাওয়ার বিকল্প নেই। প্রস্রাবের সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাসও কাজে দেয়।

ডা. দীনা মনে করেন, এসব সতর্কতায় ইউরিন সেন্ট হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের বার্নিং চাপ অনেকখানি কমে আসবে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বোধ, টয়লেট ব্যবহারে সচেতনতা, বাড়ির বাইরে টয়লেট ব্যবহারে সংকোচ পরিহার ইত্যাদি অভ্যাস প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে যা সকলেরই মেনে চলা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)