কাঁচা আম ১৬ ধরনের রোগ থেকে বাঁচায়
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
বাজারে এখন কাঁচা আম পাওয়া যায়। খেতে টক স্বাদের হলেও কাচা আম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। অনেকেই হয়তো জানেন না, পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের পুষ্টিগুণ বেশি। এই অস্বস্তিকর গরমে প্রশান্তি পেতে এক ফালি কাঁচা আমই যথেষ্ট। অনেকেই কাঁচা আমের আচার, জুস, চাটনি, সস, জ্যাম এবং ফল হিসেবে খেয়ে থাকেন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে কাঁচা আমের ভর্তা।
এই গরমে কাঁচা আমের স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জানলে আপনি বুঝতে পারবেন কাঁচা আম খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা। কাঁচা আম প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল ও পানিতে ভরপুর। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কাঁচা আমের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কাঁচা আম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কেউ আচার বানিয়ে, ভর্তা বা জুস বানিয়েও খেয়ে থাকেন। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাঁচা আম খেতে হবে এই পদ্ধতিতে। জেনে নিন উপায়-
প্রথমে একটি কাঁচা আম কেটে ধুয়ে নিন। এবার এর সঙ্গে ২ কোয়া রসুন, এক ইঞ্চি আদা, ছোট একটি পেঁয়াজ, একটি টমেটো, এক টেবিল চামচ ডালিমের বীজ, ১০টি কারি পাতা, সামান্য আজওয়ান, ২ টি কাঁচা মরিচ, ৫ থেকে ৬ টা তুলসী পাতা এবং সামান্য বিট লবণ নিন। সবকিছু একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে নিন। প্রতিবেলায় খাওয়ার সময় এটি এক চামচ হলেও খান।
পানির ঘাটতি রোধ করে
গরমে আমাদের শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। শরীরের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এবং পানির ঘাটতি পূরণের জন্য সামান্য লবণ দিয়ে কাঁচা আম খান।
পেটের সমস্যা দূর করে
গরমের সময় বেশিরভাগ মানুষের পেটে সমস্যা হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া, আমাশয় ও বদহজমের মত সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে এবং খাদ্য হজমে সহায়ক কাঁচা আম। অন্ত্রকে পরিষ্কার করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও মুক্তি দেয় কাঁচা আম।
ঘাম কমায়
গরমের ঘাম হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত হলে তা খুবই অস্বস্তিকর। এসময় কাঁচা আমের জুস খেয়ে ঘামের মাত্রা কমানো যায়। অতিরিক্ত ঘামের ফলে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রন কমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে কাঁচা আম।
ঘামাচি প্রতিরোধ করে
গরমে সবচেয়ে বিরক্তিকর একটি সমস্যা হচ্ছে ঘামাচি। ঘামাচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কাঁচা আম খাওয়া। কাঁচা আমে এমন কিছু উপাদান আছে যা সান স্ট্রোক হতে বাধা দেয়।
ওজন কমায়
আমাদের সমাজে মুটিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই মানুষগুলোর জন্য ওজন কমাতে কাঁচা আম এক দারুণ ফর্মুলা। অন্যান্য ফল থেকে কাঁচা আম বেশি কার্যকর, এমনকি পাকা আম থেকেও। কেননা পাকা আমে চিনি বেশি থাকে যা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। আর মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমে চিনি কম থাকে বলে এটি ক্যালরি খরচে সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
খাদ্যাভ্যাসের জন্য বেশিরভাগ মানুষই এসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন। কাঁচা আম খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বলা চলে, ওষুধ গ্রহণ ছাড়াই আপনার হজমে সাহায্য করবে কাঁচা আম।
স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া প্রতিরোধ করে
কাঁচা আম আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহ করে। স্কার্ভি, অ্যানেমিয়া ও মাড়ির রক্ত পড়া কমায় কাঁচা আম। কাঁচা আমের পাউডার বা আমচুর স্কার্ভি নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী।
মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
সবুজ কাঁচা আম খাওয়া মাড়ির জন্য উপকারী। এটি শুধু মাড়ির রক্ত পড়াই বন্ধ করে না, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
মর্নিং সিকনেস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের মর্নিং সিকনেস দূর করতে চমৎকারভাবে কাজ করে কাঁচা আম। সামান্য লবণ মাখিয়ে কাঁচা আম খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
কাঁচা আম আলফা ক্যারোটিন ও বিটা ক্যারোটিনের মত ফ্লাভনয়েড সমৃদ্ধ। এই সব উপাদান দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়।
লিভারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু
লিভারের রোগ নিরাময়ের একটি প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে কাঁচা আম। যখন কাঁচা আম চিবানো হয় তখন পিত্ত থলির এসিড ও পিত্তরস বৃদ্ধি পায়। এর ফলে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন পরিষ্কার করে।
রক্তের সমস্যা দূর করে
শরীরের কোষকে উজ্জীবিত করে কাঁচা আম। এছাড়া রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি ও নতুন রক্ত কোষ গঠনে সহায়তা করে এটি। বিভিন্ন রকমের রক্তের সমস্যা যাদের থাকে যেমন- রক্তশূন্যতা, ব্লাড ক্যান্সার, রক্তক্ষরণের সমস্যা ও টিউবার কোলো সিসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে কাঁচা আম।
এনার্জি প্রদান করে
আপনি কি জানেন কাঁচা আম আপনাকে প্রচুর এনার্জি দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে দুপুরের খাওয়ার পরে কাঁচা আম খাওয়া আপনার তন্দ্রা কাটিয়ে উজ্জীবিত হতে সাহায্য করে।
ত্বক ভালো রাখে
এই গরমে আলাদা করে ত্বকের যত্ন নেয়া দরকার। নইলে ত্বকের জেল্লা হারিয়ে যাবে। তবে চিন্তার কিছু নেই, এই মৌসুমে আপনার সেই মুশকিল আসান করতে রয়েছে কাঁচা আম। ত্বক ভালো রাখতে কাঁচা আম খান।
ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কাঁচা আম আশীর্বাদ স্বরূপ। ডায়াবেটিস কমাতে কত চিন্তা, কত চেষ্টা অথচ কাঁচা আম কিন্তু কাজটা একেবারে সহজ করে দেয়। শরীরের চিনি কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীরা ভাতের সঙ্গে কাঁচা আম খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
দাঁত ভালো রাখে
দাঁতের যত্নে কাঁচা আম খেতে পারেন। কাঁচা আম মাড়ির জন্য খুব উপকারী। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে কাঁচা আম উপকারী।ৃ