চাকুরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা প্রতারণা অঞ্জলী ও ইস্টম দাসের

রঘুনাথ খাঁ ঃ নিজের দুই বিঘা জমি বন্ধক রেখেছেন দুই লাখ টাকায়, ব্রাক থেকে ঋণ নিয়েছেন তিন লাখ। সোনার গহণা বন্ধক ও স্বজনরদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। ছেলে সোহেল আহম্মেদ ইমনকে জেল পুলিশের চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাস, তার স্ত্রী অঞ্জলী দাস, অঞ্জলী দাসের ঘনিষ্ট পরে পরিচিত একই গ্রাম ফতেপুরের আকাশ দাস ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় ইষ্টম দাসের বাড়ির ঠাকুরঘরে বসে প্রফুল্ল হালদার, আব্দুল ওহাব, হাসেম মোড়ল ও নূর ইসলামের উপস্থিতিতে প্রথাম দফায় আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে আরো তিন দফায় ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন ওই চক্রটি। চাকুরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাওয়ায় হুমকি দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার। এখন সুদ টানতে ও কিস্তীর টাকা পরিশোধ করতে এক বেলা ভাত জোটে তো আর এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের হাতবাস গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে এ প্রতিবেদকের সাথে ঘটনার বর্ণনাকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুল বারি।
আব্দুল বারি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে উত্তরণ পরিচালিত শিশু নিকেতেনর গাড়ি চালক জাতপুরের মীজা ওই চক্রের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন ইষ্টম ও অঞ্জলীর সাথে। ছেলে সোহেল আহম্মেদ ইমনকে কারারক্ষী হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি ১৮ লাখ টাকা চান ইষ্টম দাস। একপর্যায়ে সিকিউরিটি স্বরাপ তার কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকের দুটি অলিখিত চেক ও তিনটি ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর অগ্রিম টাকা দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে চার দফায় ১৫ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করে ইষ্টম, অঞ্জলী। তবে টাকা নেওয়ার সময় ইষ্টম দাসের স্ত্রী এলাকার মক্ষীরাণী অঞ্জলীর ঘণিষ্ট আকাশ দাস উপস্থিত থেকে তাকে চাকুরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। চাকুরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাইলে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ইষ্টম দাস ও অঞ্জলী দাস। পরদিন ২৪ ডিসেম্বর ইষ্টম দাসকে মীর্জাপুর বাজারের পাশ থেকে ইয়ং স্টার ক্লাবে ডেকে আনা হয়। পরে মদনপুর বাজার কমিটির সভাপতি মাসুম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এক মাসের মধ্যে টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে অঞ্জলী দাস স্বাক্ষরিত সোনালী ব্যাংকের তালা শাখার একটি সাত লাখ টাকার চেক, ইষ্টম দাস স্বাক্ষরিত ডাচ বাংলা ব্যাংকের এক লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। টাকা নিয়ে কোন সমস্যা হবে না বলে জানান, মক্ষীরানী অঞ্জলীর কাছের লোক আকাশ দাস। টাকা ফেরৎ দেওয়ার ব্যাপারে একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন ইষ্টম দাস। এর আগে ইষ্টম দাসকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে জানান চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ। সবশেষে ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দুটোর দিকে জাতপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু হানিফ টাকা নেওয়া সম্পর্কিত ইষ্টমের স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণের পর তাকে নিয়ে যান। যথাসময়ে টাকা না দেওয়ায় তিনি তালা থানায় অভিযোগ করলে তদন্তকারি কর্মকর্তা আলী হাসানের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার হুমকি দেন অঞ্জলী দাস। বাধ্য হয়ে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন। অঞ্জলী তাকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করে তালায় যাওয়ার কথা বলে নতুনর করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন। তবে আজো তিনি টাকা পাননি। ফলে সুদের টাকা গুনতে গুণতে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তার ও পরিবারের সদস্যদের।
এ ব্যাপারে তালা থানার উপপরিদর্শক আলী হাসান বলেন, আব্দুল বারীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরৎ দিতে বলায় অঞ্জলী দাস তাকে মানহানির মামলা দেওয়ার হুশিয়ারি দেন।
গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন জানান, জমি ও বাড়ি বিক্রি করে এপ্রিল মাসের মধ্যে আব্দুল বারির ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন ইষ্টম দাস ও তার স্ত্রী অঞ্জলী দাস।
এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইষ্টম দাস খলিলরগর ই্উপির সাবেক সদস্য ছিদ্দিকুর রহমানের ভাই আনিসুর রহমানকে চাকুরি দেওয়ার নামে ১৩ লাখ, নুরুল্লাহপুর গ্রামের সহ. শিক্ষক সুভাষ দাসের মেয়ে রমা দাসকে চাকুরি দেওয়ার নাম করে এক লাখ , তারপদ দাসের ছেলে রঞ্জুকে চাকুরি দেওয়ার নামে ছয় লাখ, বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে হরিশ্চন্দ্রকাটি গ্রামের দীপঙ্কর ঘোষের কাছ থেকে ১৫ লাখ, আড়ংপাড়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের ভাইপো মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী তাহমিনা খাতুনের প্রাইমারী স্কুলে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ. একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নরিম উদ্দিনের স্ত্রী শিরিনা আক্তারকে প্রাইমারী স্কুলে চাকুরি দেওয়ার নামে সাত লাখ, খেশরার কার্তিক দাসের মেয়ে শিখা দাসকে চাকুরি দেওয়ার নামে সাড়ে সাত লাখ, পাঁচরকি গ্রামের গ্রাম পুলিশ রফিকুলের মেয়ে নাজমা খাতুনকে চাকুরি দেওয়ার নামে দুই লাখ ১০ হাজারসহ কমপক্ষে ২০ জনের কাছ থেকে দেড় কোটির ও বেশি টাকা প্রতারণা করেছেন। টাকা ফেরৎ না দিয়ে কয়েকজনকে দিয়েছেন চেক। এর মধ্যে নরিমউদ্দিন ও সোহরাব হোসেনসহ চারজন ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে আদালতে ৩২ লাখ টাকা প্রতরারণার মামলা করেছেন। তবে পাওনাদারদের চাপে রাখতে অঞ্জলী দাসের ঘণিষ্ট আকাশ দাসকে দিয়ে তার চতুর্থ শ্রেণীর মেয়েকে দিয়ে সুভাষ দাসকে শ্লীলতাহানির মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বারবার।
তবে ইষ্টম দাস আব্দুল বারিসহ কয়েকজনের কাছ থেকে চাকুরি দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্যায় আছেন। যাতের কাছে টাকা দিয়েছেন তারা টাকা দিচ্ছেন না। রমা দাস ও তার পরিবারের সদস্যরা সুভাষ দাসকে বাঁচাতে তাকেসহ স্ত্রী অঞ্জলীূ ও পারিবারিক বন্ধু আকাশ দাসের নামে অপপ্রচার করছে।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)