উপসর্গ ফুটে ওঠার বহু বছর আগেই শনাক্ত করা যাবে ক্যান্সার
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
ক্যান্সার ইনস্টিটিউট খুলেছে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি। সেখানকার বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন এবং তারা একজনের শরীরে একটি টিউমার বিকশিত হওয়ার বহু বছর আগে কোষের পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ গবেষণাটি ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
আর্লি ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষণার প্রধান বিষয় হলো, টিউমারের উপসর্গগুলো শরীরে ফুটে উঠার আগেই টিউমারের সঙ্গে মোকাবেলা করার উপায়গুলো খুঁজে বের করা। অনেক মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব ক্যান্সারের লক্ষণগুলো থাকে, যা অনেক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। এ গবেষণাটি এ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলোকে কাজে লাগাবে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর রেবেকা ফিটজেরাল্ড বলেন, কখনো কখনো ক্যান্সার বিকাশের জন্য কয়েক বছর পর্যন্ত বিলম্ব ঘটতে পারে। কোনো একজন মানুষের ক্যান্সার রোগী হিসেবে প্রকাশ পেতে এক দশকও লেগে যায়।
তারপর ডাক্তাররা দেখতে পান যে, তারা একটি টিউমারের চিকিৎসা শুরু করছেন ততদিনে রোগীর শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যেটি এমন হতে পারে যে, একজনকে পরীক্ষা করার মাধ্যমেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে যে তিনি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন কিনা।
এর একটি উদাহরণ হল সাইটোস্পঞ্জ। একটি স্ট্রিংয়ের ওপর একটি স্পঞ্জ দেওয়া হয় যা ফিটজেরাল্ড এবং তার দল এটিকে তৈরি করেছেন। এটি একটি বড়ির মতো গিলে ফেলা যায়। এরপর স্পঞ্জটি পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং তা খাদ্যনালীর কোষগুলো সংগ্রহ করে গুলেটটি টেনে নিয়ে আসে। যে কোষগুলোতে একটি প্রোটিন থাকবে, যার নাম টিএফএফ-৩।
শুধুমাত্র পূর্ব ক্যান্সার কোষে এটি পাওয়া যাবে। তারপর ঐ রোগীকে প্রাথমিক সতর্কতা দেওয়া হবে যে, তিনি খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং তাকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এ পরীক্ষাটি অত্যন্ত সহজলভ্য এবং বিস্তৃত পরিসরে হতে হবে।
ফিটজেরাল্ডে আরো বলেন, বর্তমানে, অনেকক্ষেত্রে ক্যান্সার দেরিতে শনাক্ত হচ্ছে এবং ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে আমরা জীবনকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাচাঁতে পারি। এখন সময় এসেছে এটাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার।
এ ইনস্টিটিউটের একটি পদ্ধতি হলো, রক্তের নমুনার উপর বেশি জোর দেওয়া। নারীদের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং-এর অংশ হিসাবে রক্ত সংগ্রহ করে তা দোকানে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা। এই নমুনাগুলো এখন ইনস্টিটিউট দ্বারা পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইনস্টিটিউটের গবেষক দলের নেতা জেমি ব্লান্ডেল বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের প্রায় ২ লাখ নমুনা রয়েছে এবং সেগুলো একটি সোনার খনি।
এ নমুনাগুলো ব্যবহার করে, গবেষকরা সেসব দাতাকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যারা পরবর্তীতে নমুনা দেওয়ার ১০ বা এমনকি ২০ বছর পরে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।
ফিটজেরাল্ড বলেন, একজন ৮০ বছর বয়সী নারী যিনি ক্যান্সার গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ১ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছিলেন। তিনি ১০০ বছরের বেশি বেঁচে ছিলেন এবং সম্প্রতি মারা গেছেন। তিনি এতদিন বেঁচে ছিলেন বলেই এ অনুদান পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
ফিটজেরাল্ড আরো বলেন,আমরা বুঝতে চাই যে কী কারণে কেউ কেউ অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচে এবং অন্যরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যাতে আরো বেশি লোক তার মতো দীর্ঘ জীবনযাপন করতে পারে।