সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুর জমি জবরদখলের চেষ্টা

রঘুনাথ খাঁঃ আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হামলা ও মামলা দিয়ে এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি জবরদখলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রতিবাদকারিকেও আনা হচ্ছে মিথ্যা মামলার আওতায়। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদরের হাবাসপুর ও কুলতিয়া এলাকার সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
কুলতিয়া গ্রামের দীনবন্ধু ঘোষ জানান, হাবাসপুর গ্রামের দেরাজতুল্লাহসহ তার অন্যান্য শরীকদের হাবাসপুর মৌজার সাবেক ১৩ খতিয়ানের ৯৩,৯৪ ও ৯৫ দাগসগ ৫৩টি দাগের ৫৩ বিঘা জমির খাজনা বকেয়া হওয়ায় ১৯৩৪ সালে সেল সার্টিফিকেট মূলে খরিদ করেন সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার উপেন্দ্রনাথ ঘোষ। ১৯৩৫ সালে উপন্দ্রেনাথ ঘোষ ওই জমি কুলতিয়া গ্রামের চÐিচরণ ঘোষের ছেলে যতীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পঞ্চানন ঘোষের কাছে বিক্রি করেন। স্বত্ব না থাকার পরও যতীন্দ্রনাথ ও পঞ্চাননের জমিতে বসবাস করায় দেরাজতুল্লাহকে উচ্ছেদ করার জন্য খুলনা তৃতীয় মুনসেফ আদালতে মামলা করলে ১৯৩৯ সালের ৩ মার্চ বিচারক অজিতরঞ্জন মুখোপাধ্যায় ৩০ দিনের মধ্যে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে প্রকৃত জমির মালিক যতীন ও পঞ্চাননের অনুকুলে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই জমি দেরাজতুল্লার ওয়ারেশরা আজো জবরদখল করে আছেন। ওই জমি যতীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পঞ্চানন ঘোষের নামে এসএ রেকর্ড হয়। ওই জমি বর্তমানে পঞ্চানন ঘোষের ছেলে খগেন্দ্র নাথ ঘোষের নামে বর্তমান জরিপে রেকর্ড হয়েছে। ওই জমির অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ২৬ বিঘা জমি দেরাজতুল্লাহর ওয়ারেশ ইসমাইল, হানিফ ও কলিমউদ্দিনের কাছে বিক্রি করেন। বাকী অংশ ৯৫/৬৯ রেজিষ্ট্রি বন্টননামা দলিল মূলে পৈতৃক সকল সম্পত্তির সঙ্গে যতীন, পঞ্চানন, সতীন্দ্র ও কালিপদ ঘোষ মালিক হন। পরবর্র্তীতে ওই জমি ওই চার ভাইয়ের নামে বর্তমান মাঠ পড়চা হয়। ওই জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য দেরাজতুল্লার ছেলে মিয়ারাজ বাদি হয়ে কলারোয়া সহকারি জজ আদালতে দেঃ ২৯১/১১ নং মামলা করেন। মিয়ারাজ মারা যাওয়ার পর তাদের ওয়ারেশ হাবাসপুরের নজরুল ইসলামসহ ১৫ জন বাদি শ্রেণীভুক্ত হন। গত বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি বিচারক ওই মামলা ১৫১ ধারার বিধান মতে খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে বাদি পক্ষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দেঃ সিভিল রিভিশন ৫৭/২৩ দাখিল করেন। মামলাটি পরে বদলী হয়ে আগামি ১৫ এপ্রিল শুনানীর জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে দিন ধার্য আছে। ওই মালিকদের কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দেরাজতুল্লের পোতা নজরুল ইসলাম প্রায় ১৫ শতক জমি ৮২৮ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে কেনেন। পৈতৃক সূত্র ধরে শর্ত অনুযায়ি ৫১ শতকের মধ্য থেকে অরবিন্দু ঘোষ ও প্রভাষ ঘোষ ৬ শতক জমি বিক্রি করেন। বাকী ৪৫ শতক জমি পৈতৃক সূত্রে তিনি(দীনবন্ধু) ১১ শতক, মিজান চৌধুরী ও আব্দুস সাত্তার ৩৪ শতক ভোগ দখল করে আসছেন।
দীনবন্ধু ঘোষ আরো জানান, দেরাজতুল্লাহর প্রায় ২৬ বিঘা জমি উপন্দ্রেনাথ ঘোষ জাল সেল সার্টিফিকেট মূলে ভোগদখল করে আসছেন দাবি করে দেরাজতুল্লার ওয়ারেশ ওজিয়ার রহমান ২০২২ সালের ২২ মার্চ সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সিআর-১৯৪/২২ নং মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই এর উপপরিদর্শক তুহিন মাহমুদের তদন্ত প্রতিবেদন বাদির বিপক্ষে যায়। এ ছাড়াও গত বছরের ২৩ মার্চ দেরাজতুল্লাহর পোতা আব্দুর রহিম হাবাসপুরের সাবেক ইউপি সদস্য মহাদেব ঘোষ ও তাকেসহ ৯ জনের নামে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সিআর ২৭৫/২৩ নং মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মহসিন আলীর আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদন বাদিপক্ষের বিরুদ্ধে যায়। নারাজির আবেদন শুনানী শেষে ওই মামলার তদন্তভার সিআইডি’র উপর ন্যস্ত হয়।
দীনবন্ধু ঘোষ আরো বলেন, একদিকে দাদা দেরাজতুল্লের জমির মালিকানা ও রেকর্ড নিয়ে নজরুল ইসলাম আদালতে মামলা করছেন। আবার ওই জমির মধ্যে প্রায় ১৫ শতক জমি অরুবিন্দ ঘোষ ও জগবন্ধু ঘোষের কাছ থেকে কিনে ভোগদখল করে বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। এ ছাড়া দেওয়ানী মামলা করে নি¤œ আদালতে হেরে যেয়ে উচ্চ আদালতে রিভিশন করে গত শুক্রবার সকালে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে টিন ও বাঁশ দিয়ে জমি সংলগ্ন রাস্তার পাশে খুপড়ি ঘর তৈরি করে তারসহ (দীন) তিনজনের ৪৫ শতক জমি দখল দেখানোর পরিকল্পনা করেছেন নজরুল ইসলাম, ডাকাত রহিমসহ একটি মহল। ঘরবাড়ি বানাতে বাঁধা দেওয়ায় পুলিশের সামনে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। ওই জমিতে গেলে তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দিন তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
এ ব্যাপারে ওজিয়ার রহমান বলেন, তাদের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করার অভিযোগ ঠিক নয়।
ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)