তালায় প্রতারণার টাকা ফেরৎ না দিতে শিক্ষার্থী ও আকাশকে হাতিয়ার বানিয়েছিলেন ইস্টম দম্পত্তি
রঘুনাথ খাঁ:
প্রতারণার টাকা ফেরৎ না দিতে স্ত্রী অঞ্জলী দাসের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তাদেরই প্রতিবেশি পান ব্যবসায়ি আকাশ দাসকে দিয়ে সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে মেয়ের শ্লীলতাহানির কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ফতেপুর স.প্রা.বিঃ এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইস্টম দাসের বিরুদ্ধে। মিথ্যা অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করে সংবাদ কর্মীদের কাছে মিথ্যাচার করানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে গত ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত স্কাউট এর এর আয়োজনে উত্তরণ নাটকের চুড়ান্ত রিহার্সালে ফতেপুর স.প্রা.বিঃ এর সহকারি শিক্ষক সুভাষ দাস হাজির ছিলেন মর্মে উপস্থিত ২৫ জন শিক্ষকের প্রত্যয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন, ভিডিও চিত্র, ওই বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষিকার প্রত্যয়ন ছাড়াও ইস্টম দাসের মোবাইল কল রেকর্ড মামলাটি মিথ্যা প্রমান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। ফলে মিথ্যা মামলা করায় বাদির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ইস্টম দাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও দুদকে মামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় পিঠ বাঁচাতে অকাশ, তার পুলিশ ভাই প্রকাশকে সাথে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন
তালা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি শঙ্কর ঘোষ জানান, তার মেয়ে ফতেপুর স.প্রা.বিঃ এ পড়াশুনা করে। সহকারি শিক্ষক সুভাষ দাসকে মোবাইল ফোনে নিজের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে আকাশ দাসকে দিয়ে দরজা বন্ধ করে মারপিট করানো হয়েছে মর্মে ১০ মার্চ দুপুরে তিনি জানতে পারেন। আহত সুভাষ দাস হাসপাতালে ভর্তির খবরে আতঙ্কিত ইস্টম দাস ও তার স্ত্রী অঞ্জলী দাস তার কাছে এসে তার মেয়েকে সুভাষ স্যারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও মানহানিমুলক কথা বলতে বলেন। বিনিময়ে তাকে লোভ দেখানো হয়। তিনি তা প্রত্যাখান করায় গত ২১ মার্চ এক সাংবাদিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে ইস্টম দাস ও আকাশ দাস তার মেয়েকেও সম্মানহানির কথা বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাপিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক খলিলনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
একইভাবে ফতেপুর স.প্র.বিঃ এ প ম শ্রেণীতে পড়াশুনারত যমজ সন্তান অর্ক ঘোষ ও অর্ঘ ঘোষ এর বাবা মারিক ঘোষ, চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রের পিতা গণেশ দাস বলেন, সুভাষ স্যারকে মারপিট করে মিথ্যা মামলা দেওয়ার লক্ষ্যে ইস্টম দাস ও তার স্ত্রী অঞ্জলী দাস তাদের সন্তানদের টাকা ও খাবারের লোভ দেখিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আপত্তিকর ও মানহানিকর কথা বলিয়েছেন। শেখানো কথা না বললে তাদের মারপিট করা ছাড়াও ফেল করানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের শুরুতেই বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হলেও এক টাকারও কাজ করেননি ইস্টম দাস। সংশ্লিষ্ট সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই তিনি ওই টাকা পকেটস্ত করেছেন। প্রধান শিক্ষক পরিকল্পনা করেই ১০ মার্চ সকালে সুভাষ স্যারকে কয়েকবার মোবাইল ফোনে নিজের অফিসে ডেকে প্রায় অশিক্ষিত আকাশ দাসকে দিয়ে নির্যাতন করিয়েছেন। ক্ষমতা নিজের হাতে থাকায় ৭ মার্চ সরকারি ছুটির দিনে সুভাষ স্যার গোপালপুর স.প্রা.বিঃ এ সরকারি প্রোগ্রামের জন্য চুড়ান্ত রিহার্সালে থাকলেও পুলিশের কাছে মিথ্যা প্রতিদেবন দিয়েছেন। তা ছাড়া ৫১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে দুই দফায় পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ¯িøপের টাকার বড় অংশই আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে।
ফতেপুর স.প্রাঃবিঃ এর কয়েকজন অভিভাবক সদস্য জানান, লাবণ্যময়ী স্ত্রী অঞ্জলী দাস ও তার স্বামী ইষ্টম দাস চাুকরি দেওয়ার নামে শুধুমাত্র সুভাষ দাসের মেয়ে রমা দাসের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেওয়া নয়, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির ভাইসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে দুই কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বাড়িতে আসলে বিভিন্ন উপায়ে তাদেরকে ম্যানেজ করে ফিরিয়ে দেন অঞ্জলী। তবে সম্প্রতি বাড়ি তৈরির জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ইষ্টম দাস রাতে অন্যত্র অবস্থান করলেও আকাশ দাসসহ অনেকেই তার বাড়ি ও পরিবার পরিজনের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদ্বির করতে বাড়ি আসা টেকনাফ থানার আর্মড পুলিশের সহকারি উপপরিদর্শক প্রকাশ দাস বিয়ের তথ্য গোপন করে পুলিশে চাকুরি পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে মামলা আপোষ করে নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বিকাশ ও আকাশ। এমনকি বিদ্যালয়ের সংস্কার, রং করা, পুকুর ভরাট ও প্রাচীর দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকারের বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকা, গত বছরের ক্ষুদ্র মেরামতের টাকার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় পিঠ বাঁচাতে কয়েকদিন আগে পুকুর ভরাটের জন্য এক ট্রাক বালি ফেলা হয়েছে। কেনা হয়েছে এক হাজার ইট।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে সাক্ষাৎকালে সুভাষ দাস বলেন যে, ১০ মার্চ সকালে তাড়াতাড়ি স্কুলে যাওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাস তাকে কয়েকবার মোবাইল করেন। তারই পরিকল্পনায় মেয়ে রমার চাকুরি বাবদ ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ চাওয়ার বদলা নিতে আকাশ দাসকে দিয়ে দরজা বন্ধ করে তার উপর হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে ছায়া রানী দাস জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও দূর্ণীতি দমন কমিশনে যে অভিযোগ করেছেন তা যথাযথ তদন্ত হলে প্রতারক ইষ্টম ও তার স্ত্রী অঞ্জলির থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।
তবে সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তদন্তকারি কর্মকর্তা, সুভাষ দাসের দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীর তদন্তকারি কর্মকর্তাসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা আকাশ দাস, ইষ্টম দাস, অঞ্জলী দাস, প্রকাশ দাস ও সুভাষ দাসের মোবাইল কললিষ্ট, কথোপকথন যাঁচাই করে বেশ কিছু ক্লু উদ্ধার করেছে। সেক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা করায় বাদির বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা নেওয়ার সুপারিশ ও বাদিকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো, সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করাতে সহযোগিতা ও বিদ্যালয়ের ¯িøপের টাকা, ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও বিয়ের তথ্য গোপন করে পুলিশে চাকুরির বিষয়টি প্রমাণ হলে প্রকাশ দাসের চাকুরি বটতলায় যেতে পারে পরে মনে করেন প্রাথিমিক শিক্ষা বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ইষ্টম দাস নিজেসহ স্ত্রী, আকাশ দাস, প্রকাশ দাসকে সুভাষ দাসের পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন শিক্ষক ফাঁসানোর চেষ্টা করছে দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সূর্য্যপদ পাল জানান, নিরীহ সুভাষ দাসকে ফাঁসানোর বিরুদ্ধে তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক রুখে দাঁড়ানোয় সংবাদ মাধ্যমে তাদের সম্মান নষ্ট করেছেন ইষ্টম দাস।#