সাংবাদিকদের দড়ি টানাটানিতে শিক্ষক সুভাষ দাস কারাগারে

রঘুনাথ খাঁঃ গত ৭ মার্চ বিভাগীয় রিহার্সালে থাকার পরও ওই দিন দুপুরে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সদস্যের চতুর্থ শ্রেণীত পড়–য়া মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ১৬ মার্চ থেকে তালা উপজেলার ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দাস কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও পুলিশের অসহায়ত্বের বিষয়টি উঠে এসেছে।সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী সাইফুল ইসলাম বৃহষ্পতিবার দুপুরের তার নিজ কার্যালয়ে বসে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে সুভাষ দাসের অপরাধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালায় কর্মরত সাংবাদিকদের একটি অংশ ইষ্টম দাসের ও অপর অংশ সুভাষ দাশের পক্ষ নেওয়ায় গত ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শিক্ষক সুভাষ দাস গোপালপুর সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কারিকুলাম সম্পর্কিত উত্তোরণ নাটকের রিহার্সালে থাকার বিষয়টি সেখানে উপস্থিত থাকা ২৫ জন শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ভিডিও চিত্র নিশ্চিত করলেও তিনি যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছেন না। সুভাষ দাস ও ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাসের মধ্যে বিরোধের জেরে এ ধরণের মামলা ও অভিভাবক কোথাও অভিযোগ না করে ১০ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ডেকে প্রধান শিক্ষকের অফিসে নিয়ে ও প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাসের সামনেই ঘরের দরজা দিয়ে অভিভাবক আকাশ দাস শিক্ষক সুভাষ দাসকে মারপিটের বিষয়টি বেআইনি ও অমানবিক বলে তিনি মনে করেন। এ জন্য সুভাষ দাসকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে মামলার পর তিনি সুভাষ দাসের পক্ষে প্রতিবেদন দিতে চাইলেও সাংবাদিকদের একটি অংশ ও উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি তার উপর চাপ সৃষ্টি করায় তিনি দিতে পারেননি। তবে যেহেতু ইষ্টম দাস ওই বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকায় তার মাধ্যমে সুভাষ দাসের পরিবারের প্রত্যয়ন নেওয়ার কথা তাকে বলতে হচ্ছে। তবে ইসলামকাটি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হকসহ বেশ কিছু শিক্ষক গত মঙ্গলবার সুভাষ দাসের পরিবারের সঙ্গে সংবাদ সস্মেলনে উপস্থিত থাকতে চাইলে তার আপত্তির কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে গাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি ছাড়া তার এ ধরণের অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সুভাষ দাস এর ৭ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি সম্পর্কে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ইষ্টম দাস যে প্রত্যয়ন দিয়েছেন তা তিনি জানার আগেই করা হয়েছে। কথা শুরুর একপর্যায়ে গাজী সাইফুল ইসলাম খলিলনগর ক্লাস্টার সহকারি শিক্ষক কর্মকর্তা অসীম কুমার সরকারকে ডেকে আনেন।এদিকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, মামলা রেকর্ড হওয়ার সময় তিনি ছুটিতে থাকলেও বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছিল। সাংবাদিকদের একটি অংশ সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার জন্য থানার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে বার বার ফোন করেছেন। আবার দুই একজন সাংবাদিক সুভাষ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেছেন। এ হেন পরিস্থিতিতে মামলা দিয়ে সুভাষ দাসকে গ্রেপ্তার করতে হয়েছে। তবে সুভাষ দাস যে নিজ প্রতিষ্ঠানে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভাগীয় কর্মসুচির জন্য নাটকের রিহার্সালে ছিলেন এ সম্পর্কিত ভিডিও ও স্থির চিত্র থাকার কথা তিনি সাংবাদিক ও শিক্ষকদের কাছে জেনেছেন। কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে মামলা দিয়ে পাঠানো তাদের কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সূর্যপদ পাল এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সুভাষ দাস তার সঙ্গে গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিহার্সালে থাকার পরও তাকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর প্রতিবাদ করতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে চাইলেও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আপত্তির মুখে তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক বিরত থাকেন। তবে ইনামুল স্যারের সঙ্গে মানববন্ধন করার কথা বললেও তা থেকে সরে এসেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামি রবিবার বা সোমবার মানববন্ধন করার ইচ্ছ আছে। তবে সূর্যপদ পালের এহেন দুর্বল সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না অনেক শিক্ষক।
প্রসঙ্গত, সুভাষ দাসের বড় মেয়ে রমা রানী দাসকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার বিরোধকে কেন্দ্র করে ফতেুপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাস ও তার স্ত্রী বগুল আলোচিত অঞ্জলী দাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে সহকারি শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দাসের। চাকুরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাওয়ার ক্ষোভে দাবার গুটি হিসেবে এক সাংবাদিক কর্তা কাম জনপ্রতিনিধি ও আকাশ দাসের সঙ্গে অঞ্জলী দাসের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ ছাড়াই ১০ মার্চ প্রধান শিক্ষকের অফিসে ডেকে তারই উপস্থিতিতে বেধড়ক পেটানো হয়েছে সুভাষ দাসকে। বেগতিক বুঝে ১২ মার্চ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন আকাশ দাস। এমনকি ইষ্টম দাস ও আকাশ দাসের মধ্যে যে সুসম্পর্ক রয়েছে তা বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরার এক সাংবাদিকের বাসায় সংবাদ সস্মেলনে ছবি প্রকাশ করে প্রমাণ করে দিয়েছেন। তবে সুভাষ দাসকে ভাইঝি’র শ্লীলতাহানির কাল্পনিক ঘটনায় মামলা রেকর্ড করাতে টেকনাফ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন থেকে বাড়িতে ছুঁটে আসেন প্রকাশ দাস। তথ্য গোপন করে রেজিষ্ট্রি বিয়ে করার তিন বছর পর কিভাবে চাকুরি পেলেন তা নিয়ে অভিযোগ ওঠায় বিপাকে পড়েছেন প্রকাশ দাস।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)