সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা হরিলুট
নিজস্ব প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হরিলুট করে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে প্যাথলজিষ্ট সুব্রত। মাত্র এক বছরে সামেকের সামনে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি, এ্যালিয়ন লেটেষ্ট মডেলের গাড়ী কিনেছেন তিনি। নিজস্ব ড্রাইভার রেখে হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৪০—৫০ হাজার টাকা আয় করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সামেক হাসপাতালে যোগদান করে সুব্রত। দীর্ঘ দশ বছর একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে দিনের পর দিন নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বেশির ভাগ সময় হাসপাতালের পরিচালকদের জিম্মি করে প্যাথলজী বিভাগে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চার শতাধিক রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসছেন তিনি। রশিদ ছাড়া এসব অবৈধ্য অর্থ ভাইপো অনিমেষের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে ইনর্চাজ সুব্রতর পকেটে। তারপর যথারিতি পরিচালক,উপ—পরিচালক ও প্যাথলজিষ্টের মধ্যে ভাগাভাগি হয় ।
এছাড়া রি—এজেন্ট (মালামাল ক্রয়) ঠিকাদারের যোগসাজসে মোটা অংকের কমিশনসহ আউট সোসিং জনপ্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন সুব্রত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে পরিচালক শীতল চৌধুরীর যোগদানের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি সুব্রতর। দূর্ণীতিবাজ পরিচালকের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা তিন সদস্যের শক্তিশালি সিন্ডিকেট এখন সামেক হাসপাতাল । বিশেষ দায়িত্বে,তৎকালিন শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্র দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে উক্ত কমপ্লেক্রে হরিলুট করে আসা,বর্তমান সামেক হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক দূর্নীতির শিরোমনি ডা: অজয় কুমার। আরেক সদস্য মুখ্য দায়িত্ব পালন করা প্যাথলজিষ্ট অবৈধ্য অর্থলোপাটের নায়ক মাষ্টার মাইন্ড সুব্রত কুমার।
ত্রয়ের সমন্বয়ে সামেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজী ৩১৪ ও ৩১৫ নাম্বার রুমের সামনে চেয়ার টেবিল বসিয়ে সুব্রতর একান্ত সহযোগী (আউট সোসিং) ভাইপো অনিমেষ তত্ববধানে নিজস্ব ক্যাশ কাউন্টার তৈরি করে রেখেছেন তারা। সেখানে তাদের নিজস্ব তৈরি রশিদ (টু—কপি) ব্যবহার করে টাকা নিচ্ছে তারা । প্রতিদিন তিন থেকে চার শতাধিক রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসে সেখানে। যার আয়ের পরিমান প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার মত।
আরো জানা গেছে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্যাথলজী বিভাগের ইনর্চাজ সুব্রত দীর্ঘদিন কিছু কর্মকর্তা কে ম্যানেজ করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায় প্যাথলজী বিভাগের ইনর্চাজ সুব্রত মাদকাসক্ত। তার রুমের মধ্যে রাত ১০ টার পর মদ নারী নিয়ে রঙ্গমঞ্চও হয়। এছাড়া সুব্রত মাদক সেবন করে রুগী ও রুগীর আত্নীয় স্বজনদের সাথে খারাপ আচারণ করে এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি কিভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মতো জায়গায় ১০ বছর প্যাথলজী বিভাগে ইনর্চাজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে জানতে চায় সচেতন মহল।
নাম না জানানোর শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীরা জানান, প্যাথলজী বিভাগের আর্থিক দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ টু—কপি (নিজস্ব তৈরি) ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আমাদের জানা মতে হাসপাতালের রশিদ (সরকারি) ছাড়া কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা হওয়ার কথা না, অথচ সেটা বাদ দিয়ে টু—কপি চলছে হরহামেশায়। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদের অর্থ ছাড়া কোন টাকা রাজস্ব খাতে জমা করা হয় না।প্যাথলজি বিভাগে সুব্রতর নিজস্ব ক্যাশ কাউন্টার তৈরি কেও প্রতিদিন দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা নিজের পকেটে রাখছে। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া ইতিমধ্যে পরিচালক ডা: শীতল চৌধুরী, অতিরিক্ত পরিচালক ডা: অজয় কুমার এবং ল্যাব ইনচার্জ সুব্রত কুমার দাস সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে ঔষধ ক্রয়ের ৭ কোটি টাকা আত্মসাতসহ এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে।
তারা আরো জানান, সুব্রত ঠিকমতো ডিউটি করেন না বেশির ভাগ সময় তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে থাকে। সুব্রতর বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পাইনা কিছু বলে মারধর খেতে হবে, তা নাহলে চাকরি হারাতে হবে। সুব্রতর অনুপস্থিতে তার এই অপকর্ম দুর্নীতি দেখভাল করেন সুব্রতর ভাইপো অনিমেষ। অনিমেষ মেডিকেলে কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচারণ করে এবং দাপট দেখায় বলে কোন কিছু বললে চাকরী খেয়ে দেব। এছাড়া প্যাথলজী সুব্রতর বিরুদ্ধে বিগতদিনে চাকুরী দেওয়ার নামে নিরীহ মানুষের কাছথেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকুরী দিতে না পারায় থানা পুলিশ পর্যন্ত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্যাথলজি বিভাগের ইনর্চাজ সুব্রত জানান,আমার জমি,গাড়ি,বাড়ি সবি আছে।আপনার আর কিছু জানার আছে থাকলে বলেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডঃ শীতল চৌধুরী বলেন, আমি রশিদ ব্যবহার করতে বলেছি। আর রাতে মাদক সেবন রঙ্গমঞ্চ এসব আগে করতো এখন আর করেনা। ওষধ ক্রয়ের ৭ কোটি টাকা আত্নসাৎতের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি দেখা করতে বলেন।