এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বাড়ছে আতঙ্ক
ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা গেল ২৪ ঘণ্টায় পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ উদ্ধার এবং ওই জাহাজে থাকা ৩৫ জন সোমালি জলদস্যুকে গ্রেফতার করার পর আব্দুল্লাহর নাবিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। না হয় প্রতিদিন কোনো না কোনো নাবিক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্যাটেলাইটের সাহায্যে বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতেন। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে নাবিক পরিবারে। জিম্মি চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান ও অয়েলার শামসুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, স্থানান্তরিত হওয়ার পর ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গেছে। জাহাজটিকে উপকূলের প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সাগরে নিয়ে গেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। এর আগে গত ১৪ মার্চ সকাল ৬টা পর্যন্ত জাহাজটি গারাকাড উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধ জাহাজ পিছু নেয়ার পর সোমালিয়ান জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহকে উপকূলের প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সাগরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে জাহাজটির নাবিকেরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি। পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি। জাহাজের ফোন না আসায় জিম্মি হওয়া নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দস্যুরা নিজেরাও কোনো দাবি নিয়ে ফোন না করায় নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারের আলোচনাও শুরু করা যাচ্ছে না।
মালিকপক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে গত রাত পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া মিলেনি। এমভি আবদুল্লাহর মুক্তিপণের ব্যাপার নিয়ে মধ্যস্বত্বকারীদের ভূমিকা এবং দাবির বিষয়টি ঠিক করতে তারা সময় নিচ্ছে মন্তব্য করে মেহেরুল করিম বলেন, তাদের ফোন না আসা পর্যন্ত জাহাজটির মালিকপক্ষের বেশি কিছু করার নেই।
তবে জাহাজটিতে যেহেতু ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে এবং কয়লা যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য, তা দস্যুদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে। জাহাজটির হ্যাজে থাকা কয়লার তাপমাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিস্ফোরণ ঘটবে; যা শুধু জাহাজ কিংবা জিম্মি হওয়া নাবিকদের নয়, দস্যুদেরও বিপদের কারণ হবে। এজন্য জাহাজের নাবিকদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ব্যাপারে দস্যুরা অনুমোদন দিয়েছে।
শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ভালো খবর যে, কয়লায় যাতে বিস্ফোরণ না ঘটে সেজন্য নাবিকদের কোনো ক্ষতি দস্যুরা করবে না।
চট্টগ্রামে অবস্থানকারী ক্যাপ্টেন আতিক খান জাহাজের এক নাবিকের ভয়েস মেসেজের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন এবং সোমালিয়ার জলদস্যুদের অধীনেই রয়েছেন। ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার করেছে এই সংবাদের সত্যতা নেই। মিডিয়ায় এই নিউজটা দেখে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা চান মানুষ সত্যটা জানুক।
ওই নাবিক জানান, সোমালিয়ার উপকূলে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ ও ভারতীয় নেভির দুইটা যুদ্ধজাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামতে বলেছে। ওয়ার্নিং দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলেছে আর আশপাশে পানিতে গোলাগুলি করেছে। কিন্তু জলদস্যুরা নির্বিকার ছিল এবং তাদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি। এ সময় জলদস্যুরা মনে করেছিল বাংলাদেশের নাবিকরা তাদের ডেকে এনেছে। তাই তারা কিছুটা রাগ করে সবাইকে ব্রিজে ডেকে বন্দুকের মুখে রেখেছিল। পরে ক্যাপ্টেন রেডিওতে ভারতীয় নেভিকে দূরে সরে যেতে বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ক্যাপ্টেন আতিক জানান, জলদস্যুদের দোভাষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি বাংলাদেশের টিভি আর মিডিয়ার ওপর চোখ রেখেছে। তাই গুজব রটানো বা নাবিকরা বিপদে পড়ে এমন কিছু যেন মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য জিম্মি ওই নাবিক অনুরোধ জানিয়েছেন।