রমজানে গ্যাস্ট্রিক-বদহজম থেকে বাঁচতে করণীয়

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান পালন করছেন। আর এ রোজায় প্রায় সব জায়গায়ই সেহরি ও ইফতার নিয়ে থাকে নানা ধরনের আয়োজন।
রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য শুধু ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত খাওয়ার সময় থাকে। ফলে এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে গাস্ট্রিক কেন হয়?

মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়। এর কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাক করতে সহায়তা করা। পাকস্থলীতে যখন এই অ্যাসিডের ক্ষরণ বেড়ে যায়, তখন পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাস্ট্রাইটিস বলে।

দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এরপর যদি অতিরিক্ত খাবার ও ভাজা-পোড়া খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে সহজেই গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যায় ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, বুক জ্বালা-পোড়া, দম বন্ধ হয়ে আসা, ঢেঁকুর ওঠা, বমি বমি ভাব, পেট ফেঁপে থাকা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

রোজার সময় এসব সমস্যায় প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ভোগেন। কারণ ইফতারে যেসব ভাজাপোড়া, ছোলা, মুড়িসহ ইত্যাদি খাবার থাকে সেগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। চিকিৎসকরা সবসময়ই ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবারকে খাদ্যতালিকায় না রাখার পরামর্শ দেন। এসব খাবার দিয়েই যদি সারাদিন না খেয়ে থাকার পর রোজা ভাঙেন, তাহলে সমস্যা বাড়বেই।

গ্যাস্ট্রিক ও বদহজম থেকে বাঁচতে সেহরি ও ইফতারে যেসব নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি

ইফতারে কী খাবেন, কী খাবেন না?

১. ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মিষ্টিজাতীয় কিংবা লবণজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।

২. সামনে অনেক খাবার দেখে লোভ সংবরণ করতে না পেরে বেশি খেয়ে ফেলার অভ্যাস অনেকেরই আছে! প্রয়োজনে ইফতারের পর থেকে কয়েকবার অল্প অল্প করে খাবার খান।

৩. ইফতারে শরবত অবশ্যই রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে ইসুবগুল বা লেবুর শরবত, ডাবের পানি অবশ্যই রাখবেন। পাশাপাশি যেকোনো ফল খেতে পারেন। তবে সবকিছুই পরিমাণমতো খাবেন।

৪. ইফতারের শুরুতেই কখনো ভারি খাবার খাবেন না। ফল-মূল ও শরবত দিয়েই ইফতার শেষ করুন। এরপর নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন।

৫. খাওয়ার পর পরই কখনো শুয়ে পড়বেন না। একটু হাঁটাহাঁটি করবেন, এতে করে খাবার হজম হবে দ্রুত।

৬. যেহেতু রোজার মাসে খাওয়ার জন্য সময় খুবই কম থাকে, তাই রাতের খাবার শেষ করে আবার সেহরিতে উঠে খাওয়ার ফলে অনেকেরই বদহজম হয়। এজন্য অবশ্যই ঘুমানোর ঘণ্টাখানেক আগে খাবার শেষ করতে হবে। না হলে অ্যাসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে (জিইআরডি) এর মতো রোগ হতে পারে।

৭. ইফতারে টকজাতীয় ফল না খাওয়াই ভালো, এতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার পর টকজাতীয় ফল থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তাই রাতের খাবারের পর টক জাতীয় ফল খাওয়া উচিত।

সেহরিতে কী খাবেন, কী খাবেন না?

১. ফজরের কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে সাধারণত সবাই সেহরি করে নামাজের পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে সেহরির সময় শেষ হওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগেই খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। এতে কিছুটা সময় নড়াচড়া করতে পারবেন। এতে খাবার হজম হবে। এ সময়ের মধ্যে অল্প অল্প করে কিছুটা পানিও খেতে পারবেন।

২. সারদিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে অনেকেই সেহরিতে পেট ভরে খাবার খেয়ে নেন, যা মোটেও ঠিক নয়। অতিরিক্ত কখনোই খাবেন না। এতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবে।

৩. অল্প পরিমাণে ভাত-রুটি, শাক-সবজি, ডিম, দুধ, মাংস ইত্যাদি খাবার সেহরিতে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই তেল-মসলা কম ব্যবহার করে রান্না করবেন।

৪. যারা দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাবেন।

উল্লেখ্য, ইফতারে কিংবা সেহরিতে ঝালজাতীয় খাবার খাবেন না। এমন খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এবং রোজার মাসে চা-কফি খাওয়া পরিহার করুন। এতে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)