দেবহাটায় তিনটি ভূমিহীন পরিবারের ডিসিআরের জমি জবরদখল
স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হতদরিদ্র ও অসহায় তিনটি ভূমিহীন পরিবারের ডিসিআরকৃত সরকারি ১.৪০ একর জমি জবরদখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। সম্প্রতি কারামুক্ত চিহ্নিত ভূমিদস্যু কালীগঞ্জ উপজেলার সন্যাসীরচক গ্রামের রূপচাঁদ গাজীর ছেলে রুহুল আমিন (৫০)’র নের্তৃত্বে অন্তত ১৫/২০ জন ভূমিদস্যু গত ২৫ ফেব্রæয়ারি সকালে উপজেলার কালাবাড়িয়াতে এ ভূমিহীন জনপদে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বসতভিটা গুলো জবরদখলে নেয়। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে ন্যায় বিচারের আশায় পুলিশ-প্রশাসন ও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সহায় সম্বল হারানো ভূমিহীন পরিবার গুলো।
ভুক্তভোগী কালাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল কাদের সরদারের ছেলে আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে জগন্নাথপুর বড় মৌজায় খাস খতিয়ানের অর্ন্তভূক্ত ৫৫০৯ দাগের সরকারি জমিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি সহ একই গ্রামের শহর আলি গাজির ছেলে আবুল হোসেন ও পাশ্ববর্তী ঢেপুখালি গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে জামসেদ সরদার। সরকারি বিধি মোতাবেক আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই ও তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১ ফেব্রæয়ারি উপজেলা এসিল্যান্ড অফিসের পৃথক তিনটি ইজারা কেসের মাধ্যমে তাদের তিন পরিবারের মাঝে ১.৪০ একর জমি একসনা ইজারা দেয়া হয়। এরপর থেকেই ওই জমি জবরদখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন একাধিক মামলার আসামি চিহ্নিত ভূমিদস্যু রুহুল আমিন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ভূমিহীন জামসেদ সরদার সাতক্ষীরার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (পি-৩৩১/২৪ দেব) দায়ের করলে ১৩ ফেব্রæয়ারি শুনানী শেষে বিচারিক ওই জমিতে ১৪৫ ধারা জারি করেন। একইসাথে জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেবহাটা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয় আদালত।
কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২৫ ফেব্রæয়ারি সকালে তিন ভূমিহীন পরিবারের বসতভিটা সহ ভোগদখলীয় জমি দলবল নিয়ে জবরদখল করে নেয় ভূমিদস্যু রুহুল আমিন। সেসময় সেখানে বসবাসরত ভূমিহীন পরিবার গুলোর নারী-পুরুষ সহ শিশু থেকে শুরু করে বয়োঃবৃদ্ধদের পিটিয়ে বাড়িঘর থেকে বের করে দেয় তারা। বাধ্য হয়ে পুলিশি সহযোগিতা চেয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ভূমিদস্যু রুহুল আমিন বাহিনী ভূমিহীনদের বাড়িঘর জবরদখলে নিয়ে নেয়।
পরে দু’পক্ষকে নিয়ে থানায় শালিসে বসে পুলিশ। সেখানে শান্তিপূর্ন সমাধানের উপায় হিসেবে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে জমি মাপ-জরিপের সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও, পুলিশের সে সিদ্ধান্ত মানেনি ভূমিদস্যু রুহুল আমিন। ফলে আবারও ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা আদালতের শরণাপন্ন হলে ৪ মার্চ শুনানী শেষে জবরদখলকারি ভূমিদস্যুদের ওই জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বারিত আদেশ জারি সহ এব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে দেবহাটা থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত। এবারও আদালতের আদেশ সম্বলিত নোটিশ জারি করে দেবহাটা থানা পুলিশ, কিন্তু পেশি শক্তি আর অদৃশ্য ক্ষমতা বলে জবরদখলকৃত জমি থেকে সরেনি ভূমিদস্যু রুহুল আমিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। শেষমেষ ভূমিহীন পরিবার গুলো ন্যায় বিচারের আশায় ফের আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালতের নির্দেশ অমান্যের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১ মার্চ দেবহাটা থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত।
কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বিজ্ঞ আদালতের দেয়া একের পর এক আদেশ ও নিষেধ ভূমিদস্যুরা অবমাননা করায় একদিকে শেষ সম্বলটুকু হারানোর শঙ্কা, অপরদিকে জবরদখলকারি ভূমিদস্যু রুহুল আমিন বাহিনীর মুহুর্মুহু হুমকিতে বর্তমানে দুর্বিষহ দিন কাটছে ভুক্তভোগী ভূমিহীন পরিবার গুলোর।
জমি জবরদখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমিদস্যু রুহুল আমিন বলেন, ইতোপূর্বে ওই সরকারি জমি কাশেম মল্লিক নামের জনৈক এক ব্যক্তি ভোগদখল করতেন। আমরা তার থেকে অলিখিত চুক্তিতে জমি গুলো কিনেছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি তা অন্যত্র ডিসিআর দেয়ায় আমরা দখল করে নিয়েছি।
দেবহাটা থানার ওসি সেখ মাহমুদ হোসেন বলেন, ভূমিহীনদের যে জমি ডিসিআর দেয়া হয়েছে এবং রুহুল আমিনদের দাবিকৃত জমির দাগ, খতিয়ান ও মৌজা সম্পূর্ন ভিন্ন, তবুও জবরদখলের ঘটনাটি ঘটেছে। গোলযোগ নিরসনে উভয় পক্ষকে জমি মাপ-জরিপের কথা বলা হলেও রুহুল আমিন গং তা মানেনি। যেহেতু জমিটুকু সরকারি ডিসিআরের, সেহেতু আদালত বা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দিবে পুলিশ সে মোতাবেক কাজ করবে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জবরদখলের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করলে এসিল্যান্ডকে বলবো এব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি ভোররাতে অস্ত্র ও বোমাবাজি করে ঢেপুখালির ভূমিহীন পল্লী জবরদখলকালে ভূমিদস্যু রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী তানিয়া সহ ওই বাহিনীর প্রায় ২০ জনকে আটকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন ভূমিহীনরা।