ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ডেস্ক নিউজ:
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আত্মহত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করেছেন।এ ঘটনায় এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত সহপাঠীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ওই শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ। পরে তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে কুমিল্লা জেলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ফাইরুজ অবন্তিকার মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। পুলিশ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে গেছে। আত্মহত্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলছে।
উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘এঘটনায় আমি খুব মর্মাহত। যে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে সে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেখানে এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীকে দায়ী করেছে। এরই মধ্যে দুজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে আইন বিভাগের ডিনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে ফাইরুজ উল্লেখ করেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখত সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতিয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেছে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে “(….) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?”
আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সো কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না।
আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে আপনি এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেছি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেছে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে, আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’