৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন ড. ইউনূস
ডেস্ক নিউজ:
২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল করার জন্য ব্যাংকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন তিনি।
রোববার রুপালী ব্যাংক পল্লবী শাখায় হাইকোর্টের নির্দেশে এই অর্থ জমা দেওয়া হয়। এরপর তার পক্ষে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ১৩ করবর্ষের আয়কর আপিল করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এর লিখিত রায় প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে আপিল বিভাগে না গিয়ে ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে দিলেন তিনি।
গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আপিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অপর তিন কর্মকর্তা। সেই আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, আইন অনুযায়ী যেটা দেওয়ার সেটাই ড. ইউনূসকে দিতে হবে। এখানে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, ২০২০ সালের নভেম্বরে ২০১১ থেকে ২০১৩ দুই বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে অর্থ নেই বলে মওকুফ চায় গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট। ঐ আবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রিজেক্ট করার পর তারা আয়করের টাকা মওকুফ চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের একটি অ্যাকাউন্টেই ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার মতো ছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ চেয়ে নোটিশ করার পর গ্রামীণ টেলিকম সেই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে নোটিশ কেন বেআইনি বলা হবে না এ নিয়ে রুলও জারি করেন আদালত।
এরপর গত তিন বছরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে মামলাটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আসে। আজ সেটির শুনানি শেষে গ্রামীণ টেলিকমের রিট আবেদন খারিজ করেন আদালত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমকে আদেশ দেন নিয়ম অনুযায়ী দাবি করা আয়করের ২৫ শতাংশ টাকা আগে জমা দিয়ে এরপর এনবিআরেরব বিরুদ্ধে আপিল করতে।
এদিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার তার পক্ষে করা আবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যেতে চান। কিন্তু আদালত যেহেতু দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবহিত করতে বলেছেন, তাই এই আবেদন করা হলো।
সোমবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের করা মামলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত ইউনূসকে ৬ মাস কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। ঐদিনই তিনি এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন পান।
গত ২৮ জানুয়ারি সাজা বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করে আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকেও জামিন পান তিনি। সবশেষ গত ১০ মার্চ সেই জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে। তবে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসকে বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।