কালীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীতে আওয়ামী লীগে বিভক্তি
হাফিজুর রহমান :সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে চলছে নির্বাচনী হওয়া। দলীয় প্রতীক না থাকার ঘোষণায় এবার প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক হেভি ওয়েট প্রার্থী মাঠ চষে বেড়ালেও দলের মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রুপিং, দ্বিধা, বিভক্তি যে কারণে জয় নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী না ঘোষণা দিলেও হেভি ওয়েট একক প্রার্থী নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে প্রচার প্রচারণার কাজে এগিয়ে রয়েছে দলটি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না থাকায় বিএনপি’র কোন প্রার্থীকে এখনো পর্যন্ত মাঠে দেখা না মিললেও অস্তিত্ব হীন জাতীয় পার্টি রয়েছে পর্যবেক্ষণে। ২০১৮ সালে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আতাউর রহমান ১০ হাজার ভোট পেয়ে জামানাত হারিয়ে পরাজিত হন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী ঘোড়া প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে এখনো পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওই সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ওয়াহিদুজ্জামানের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরাজিত হন। এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী তার নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য নির্বাচনী মাঠে রাতদিন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে থানা আওয়ামী লীগের হেভি ওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও থানা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন এবং থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এক সময়কার তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পি,পি এডভোকেট মোজাহার হোসেন কান্টু সহ আওয়ামী লীগের ৪ জন হেভি ওয়েট প্রার্থী ভোটের দৌড়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে দলীয় ভাবে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আজিজুর রহমান এবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার গ্রাম, মহল্লায় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিগত ২০১৩ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আলহাজ্ব শেখ ওয়াহিদুজ্জামান সঙ্গে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে জোর প্রতিদ্বন্দিতা করে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। যে কারণে এবারও প্রার্থী হয়ে জামায়াত এবং বিএনপি’র ভোট ব্যাংকে হানা দেবে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আজিজুর রহমানের প্রার্থী হওয়া নিয়ে নির্বাচনী দৃশ্য পট বদলানো ছাড়াও নানান আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির কঠোর নির্দেশনা, নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিএনপি’র কোন প্রার্থীকে এখনো পর্যন্ত মাঠে ময়দানে বা নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী ঘোষনার কোন খবর পাওয়া যায়নি।তবে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়াকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে বিএনপি দলীয় প্রার্থী সে হলে নির্বাচনী হালচাল বদলে যাবে বলে ভোটারদের ধারণা।তবে তিনিআসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি । অস্তিত্বহীন জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও তারাও পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। প্রচার প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় জেলা এবং থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে দলের মধ্যে নানান আলোচনা সমালোচনের ঝড় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় সংসদ সদস্যরা কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা সমাবেশে এবং প্রচার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এছাড়াও জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ নেতারা কোন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে প্রচার প্রচারণা ছাড়াও কোন সমাবেশে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য দিতে পারবেনা। কিন্তু সেই নির্দেশনাঅমান্য করে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশীদ এবং কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা আওলীগের সহ সভাপতি সাঈদ মেহেদির পক্ষে বিভিন্ন নির্বাচনী মঞ্চে এবং প্রচার প্রচারণায় অংশ নেওয়া নিয়ে পক্ষ নিয়ে দল ভাঙ্গার অভিযোগ উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে থানা আওয়ামী লীগের মধ্যে গৃহ দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল নিরসন করে যদি একক প্রার্থী না দিতে পারে সে ক্ষেত্রে দলটির প্রার্থী ভোট যুদ্ধে জয়লাভ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আগামী ৪ মে প্রথম ধাপে কালিগঞ্জ – শ্যামনগর উপজেলাতেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে আগাম প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গ্রাম গঞ্জে মহল্লায় প্রার্থীদের নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী মাঠ চোষে বেড়াচ্ছেন। তবে জামায়াতের উপজেলা পরিষদের একক প্রার্থী সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আজিজুর রহমান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে কালিগঞ্জ থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রউফ ছাড়াও মহিলা প্রার্থী জয়নাব পারভীনকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। এর আগেও মহিলা প্রতি জয়নাব পারভীন বিগত ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।