স্ত্রীকে কুয়াকাটায় নিয়ে হত্যা করলেন হোটেল মালিক:মরদেহ সাগরে
ডেস্ক নিউজ:
বেড়ানোর কথা বলে স্ত্রীকে কুয়াকাটার হোটেলে নিয়ে হত্যা করেন স্বামী। পরে মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যান স্বামী ও তার ফুফাতো ভাই। এরপর গন্ধ বের হলে হোটেলের ম্যানেজার ও কর্মচারীরা সাগরে ভাসিয়ে দেন মরদেহ। এ ঘটনায় স্বামী শহীদুল ইসলাম সাগরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য মামুন মিয়া নামে আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে হত্যার পর মরদেহ গুম করার অভিযোগে হোটেলের দুই মালিক দেলোয়ার হোসেন, মো. আনোয়ার ও হোটেল ম্যানেজার মো. আমির হোসেনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রার জজ ১ম আদালতের বিচারক শামীমা পারভিন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিহত মার্জিয়া আক্তার কান্তার স্বামী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগর, তার ফুফাতো ভাই একই জেলার রতনপুর গ্রামের মামুন মিয়া, কুয়াকাটা জেলার ছোবাহানের ছেলে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার হোসেন, তার ভাই মো. আনোয়ার হোসেন ও আল মদিনা হোটেলের ম্যানেজার পটুয়াখালী জেলার মেহেরপুর গ্রামের মো. আমির হোসেন। এরমধ্যে শহিদুল ও মামুন পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বীর বাঘবের গ্রামের সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলাম সাগরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন সাগর। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জেরে ১ বছর পর কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এক মাস পর নিহতের স্বামী সাগর কান্তার বাড়িতে গিয়ে ভারত বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কুয়াকাটা জেলার আল মদিনা হোটেলে উঠেন। হোটেলে সাগরের ফুফাতো ভাই মামুনকে সঙ্গে নিয়ে কান্তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
হত্যার পর মরদেহ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে রুমের খাটের নিচে মহিলার মরদেহ দেখতে পায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে হোটেল আল মদিনার মালিক দুই সহোদর দেলোয়ার, আনোয়ার হোসেন ও হোটেল ম্যানেজার আমিরসহ তিনজন মরদেহ বস্তাবন্দি করে কুয়াকাটা সাগরে ভাসিয়ে দেন। দীর্ঘদিনেও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে নিহতের বাবা সোহরাব মিয়া কুড়িগ্রাম মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে মেয়ের খোঁজ জানতে চাইলে তারা জানায় তার মেয়ে কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একপর্যায়ে কান্তার বাবাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখায় সাগর। এতে তার সন্দেহ বাড়ে।
পরে তিনি মেয়ের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আসামি করে নরসিংদী আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য করার জন্য বেলাবো থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরে বেলাবো থানা পুলিশ নিহত কান্তার স্বামীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামীমা পারভিন স্বামীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও তার ফুফাতো ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অন্যদিকে হত্যার পর হোটেল থেকে মরদেহ গুম করার অভিযোগে হোটেল মালিক ও ম্যানেজারকে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
নিহতের বাবা মামলার বাদী সোহরাব হোসেন রতন বলেন, রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারের কাছে তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। কারণ সে যেভাবে আমার মেয়েকে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে হত্যা করেছে, তা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অলিউল্লাহ বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মামলাটির রহস্য বের করে এনেছেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতের বিচারক একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন। এতে আমরা খুশি।