ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন মুশতাক,বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না তিশা
ডেস্ক নিউজ:
বয়স কম হওয়ায় বোধশক্তি কম। এ কারণে খন্দকার মুশতাক আহমেদের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছেন না তিশা। বিয়ের নামে তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন মুশতাক, এর ফলে লজ্জায় ও নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে পিতা-মাতা ও বোনের কাছে ফিরে যেতে পারছেন না তিনি। এ কারণে বাধ্য হয়ে খন্দকার মুশতাক আহমেদের কথা মতো চলছেন।
এ বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তা তার চূড়ান্ত রিপোর্টে প্রকাশ করেননি বা তদন্ত করেননি বলে ‘ছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগের মামলায়’ খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশের ঐ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করেছেন মামলার বাদী।
নারাজিতে উপরের কথাগুলো উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী ও আইডিয়ালের ছাত্রী তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম।
রোববার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে এ নারাজি দাখিল করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৪ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
নারাজির আবেদনে তিশার বাবা সাইফুল ইসলামের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকি উল্লেখ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মামলা, ২২ ধারার জবানবন্দি, ভিকটিমের বয়সের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। কিন্তু কী উপায়ে, কীভাবে, কোন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এবং কার সহযোগিতায় একাদশ শ্রেণির একটি কোমলমতী মেয়েকে ৭০ বছরের একজন ব্যক্তি তার সঙ্গে ভিকটিমকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেছেন, বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে তাকে ধর্ষণ করেছেন- ফলে ভিকটিম পিতা-মাতার ও বোনের কাছে লজ্জায় ও নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে মুশতাকের কথা মতো চলছে। বয়স কম হওয়ায় বোধশক্তি কম হওয়ার কারণে ভিকটিম সাহস করে খন্দকার মুশতাক আহমেদের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছে না। এ বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তা তার চূড়ান্ত রিপোর্টে প্রকাশ করেন নাই বা তদন্ত করেন নাই।
একাধিক বিয়ে করেন মুশতাক
নারাজির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগকারীর দায়েরকৃত মামলার বর্ণনা অনুযায়ী, আসামি খন্দকার মুশতাক একজন দুষ্ট প্রকৃতির, নারীলোভী, নারীপিপাসু, নারী ও শিশু অপহরণকারী, নারী ও শিশু নির্যাতনকারী, নারী ও শিশু ধর্ষক। এছাড়া তিনি সন্ত্রাসী এবং আইন অমান্যকারী ব্যক্তি এবং একাধিক বিয়ে করা মানুষ।
পাশাপাশি অপর আসামি ফাওজিয়া একজন ক্ষমতালোভী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, অর্থলোভী এবং মুশতাকের সব অপকর্মের সহযোগী ও সহায়তাকারী। ভিকটিম বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে তার মেধার স্বাক্ষর রাখে, এজন্য শিক্ষক, ছাত্র, ছাত্রী ও অভিভাবকদের নজরে পড়েন। এজন্য কুনজর দেন কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। এজন্য আসামি বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে এসে এবং প্রিন্সিপ্যালের কক্ষে ভিকটিমকে ক্লাশ থেকে ডেকে এনে খোঁজ-খবর নেয়ার নাম করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করেন এবং কারণে-অকারণে ভিকটিমকে ডেকে এনে গায়ে হাত দিতেন।
মুশতাকের সঙ্গে থাকলে অনেক ভালো হবে, অনেক টাকা পয়সা আছে- বলে ভিকটিমকে লোভ দেখান ফাওজিয়া
নারাজির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি ফাওজিয়ার রুমে তার উপস্থিতিতে মুশতাক ভিকটিমের সঙ্গে অসদাচারণ করতেন। এতে সহায়তা করতেন ফাওজিয়া। কিছুদিন পর মুশতাক ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনৈতিক কুপ্রস্তাব প্রদান করেন এবং তাতে ভিকটিম রাজী না হলে আসামি ভিকটিমকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার হুমকি দেওয়াসহ পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করার হুমকি দেন। এরপর ভিকটিম কোনো উপায় না পেয়ে মুশতাকের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কান্নাকাটি করে অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে আসামি মুশতাকের সঙ্গে থাকলে অনেক ভালো হবে, অনেক টাকা পয়সা আছে বলে লোভ দেখান। মুশতাকের সঙ্গে সময় কাটাতে, সঙ্গ দিতে বাধ্য করেন। এরপর ভিকটিম সেখান থেকে কান্না করতে করতে বের হন। ভিকটিম কোনো উপায় না পেয়ে তার বাবার কাছে বাসায় এসে সব কিছু জানান। পরে তার বাবা মুশতাকের সঙ্গে দেখা করে এর প্রতিকার চান। যাতে কোনো লাভ হয়নি। এমনকি দুই মাস ফাওজিয়া রাশেদী তাকে সাহায্য করতেই থাকেন। আরো অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে মুশতাকের বিরুদ্ধে।
সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভিকটিমকে ঠাকুরগাঁও থেকে জোর করে নিয়ে আসেন মুশতাক
নারাজিতে উল্লেখ করা হয়, ফাওজিয়া রাশেদী কলেজের পিকনিক ও শিক্ষা সফরের নাম করে মুশতাকের নরসিংদীর পার্কে নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়ে অনেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করতেন বলে অভিযোগ দিয়েছেন ভিকটিমের বাবা সাইফুল ইসলাম। তারপর ভিকটিমের বাবা কোনো উপায় না পেয়ে, মুশতাকের হুমকি-ধমকির কাছে টিকতে না পেরে ভিকটিমকে তার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার ব্যাপারটা মুশতাক যেকোনোভাবে জানতে পারেন। পরে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভিকটিমকে জোর করে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে অনেক অনৈতিক কাজ করেন। পরে ভিকটেমের বাবা জানতে পারেন, তার মেয়েকে বন্ধু বান্ধবীদের সহায়তা নিয়ে যৌন নির্যাতন করেন। এসব ছবি ও ভিডিও ধারণ করে বিভিন্নভাবে ভয় দেখান যেগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন বলে জিম্মি করেন।
আব্বু-আব্বু বাঁচাও আমাকে
নারাজিতে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন যে মুশতাক তাকে তার গুলশানের বাড়িতে আটকে রাখেন। সেখানে খোঁজ পেয়ে ভিকটিমের বাবা অন্যান্য সাক্ষীদের নিয়ে যান। তখন তিশা তাদের দেখে চিৎকার করতে থাকেন এবং বলেন, আব্বু-আব্বু বাঁচাও আমাকে। সেখানে মুশতাক তিশার বাবাকে দেখে পাহারাদারদের দ্বারা আক্রমণ করেন এবং পরে তিশার বাবা ভয় পেয়ে চলে আসেন। এমনকি মাস্তানদের ভয়ে আশপাশের লোকজন সাহায্য করার সাহস পাননি। এমতাবস্থায় ভিকটিমের বাবা সাইফুল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, তার মেয়ে মুশতাকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে পারে। এক পর্যায়ে মুশতাকও তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করতে পারে। মামলার বাদী থানায় মামলা করতে গেলে এজাহার না নিয়ে আদালতে মামলা করতে বলেন।
আসামিদের সঙ্গে মিলে মিথ্যা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল
নারাজিতে উল্লেখ করা হয়, আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের পর্যালোচনা করে বাদী দেখতে পান, তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের সঙ্গে মিলে মিথ্যা ও বানোয়াট চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
বিয়ে না করলে ভিডিও সবখানে ছড়িয়ে দেবেন মুশতাক, আমলে নেননি তদন্ত কর্মকর্তা
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা তার চূড়ান্ত রিপোর্টের সঙ্গে ভিকটিমের ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন সংযুক্ত করে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ভিকটিম লিখিত বক্তব্যে টিপ ও সই করেন। এ প্রতিবেদনে ভিকটিম উল্লেখ করেন, আমার সাবেক ছেলে-বন্ধুর ভিডিও তার মোবাইল থেকে মুশতাক তার ফোনে নেন। এরপর এর দ্বারা ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। বলেন, তাকে বিয়ে না করলে ভিডিও সবখানে ছড়িয়ে দেবেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিমের এ বক্তব্য তদন্তকালে আমলে নেন নাই। সেই সাবেক ছেলে বন্ধুকেও শনাক্ত করেন নাই। তার জবানবন্দি গ্রহণের চেষ্টাও করেন নাই।
নিজের ইচ্ছামতো জবানবন্দি লিখে আদালতে দাখিল
তদন্ত কর্মকর্তা বাদীর সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করে নিজের ইচ্ছা মতো জবানবন্দি লিখে আদালতে দাখিল করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্তকালে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্যান্য গভর্নিং বডির সদস্য, শিক্ষক, ভিকটিমের সহপাঠী, এমনকি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ঘটনার অবহিত বা ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কোনো অভিভাবককে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। স্বাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি গ্রহণ ও করেননি। মামলার বাদী আদালতে অভিযোগ দায়ের করার সময় ভিকটিমকে মুশতাক গাড়িতে জোর করে ভিডিও ধারণ করে। যা বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হয়। সেখানে বোঝা যায়, ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করার জন্য বাধ্য করে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুশতাক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছেন। কিন্তু এ ভিডিও উদ্ধারের কোনো প্রকার চেষ্টা তদন্ত কর্মকর্তা করেননি। যদি করতেন তাহলে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হতো।
এতে আরো বলা হয়, যেহেতু শুরু থেকে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এবং অভিযোগকারী ও অন্যান্য স্বাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ না করে কিছু স্বাক্ষীর ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করে বা কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই আসামিদের কথা মতো তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মনগড়া ভাবে তা একটি চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন, যা ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের তদন্ত হওয়া আবশ্যক।
তিশার বাবা গত বছরের ১ আগস্ট আদালতে মামলাটি করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ওসিকে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন আদালত।
মামলায় মুশতাকের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই সোহেল রানা মামলা দায়েরে তথ্যগত ভুল হয়েছে উল্লেখ করে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিম আদালতে হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি জানান, চলতি বছরের (২০২৩) ২৫ মার্চ তিনি স্বেচ্ছায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করেন। বিজয়নগর কাজী অফিসে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বয়স ১৮ পূর্ণ হলে আসামি মুশতাক তাকে বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে কেউ কোনো ধরনের প্ররোচনা দেননি বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।