কালীগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষিকা মনিরা জাহান ৩ বছর বিদ্যালয়ে হাজির না হয়েও বেতন ভাতা উত্তোলন!

হাফিজুর রহমান:

ঢাকায় একটি কলেজে চাকুরি করার সুবাদে স্বামীর সঙ্গে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ঢাকায় কিন্তু বিদ্যালয়ে হাজির না হয়েও প্রায় ৩ বছর যাবত ঠিকই বেতন ভাতা উত্তোলনের অভিযোগে অবশেষে টনক নড়ে বিভাগীয় মামলার গ্যাঁড়া কলে ঐ শিক্ষিকা । ঘটনাটি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের শুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মনিরা জাহানের বিরুদ্ধে। গত ৩ বছর যাবত তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবং অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে না এসেও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দী যোগদানের পর তিনি বিষয়টি জানতে পেরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানালে তড়িঘড়ি করে গত কয়েক মাস আগে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস থেকে ঐ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে বেতন ভাতা স্থগিত করে দেয়। গতকাল বুধবার আনুমানিক বেলা সাড়ে ১২ তার সময় সরো জমিনে ওই বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক সাকির হোসেন এবং সহকারী শিক্ষক তুলসী ব্যানার্জি, মিনতি রানী, বাসন্তী রানী সহ অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান মাগুরালি গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসের কন্যা মনিরা জাহান গত ১৮/১০/২০১৭ ইং তারিখে কালিগঞ্জ উপজেলার ৭০ নং শুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের পরে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউসুফপুর গ্রামের প্রভাষক আব্দুল গফুরের সঙ্গে বিবাহ হলে স্বামী আব্দুল গফুরের ঢাকায় একটি কলেজের চাকরির সুবাদে সহকারী শিক্ষিকা মনিরা জাহান পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করে আসছেন । সেই থেকে গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি হতে বিভিন্ন মেয়াদে বছরের পর বছর বিদ্যালয় না হাজির হয়ে ৫৩২ দিন অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত প্রতিমাসে বেতন ভাতার টাকা উত্তোলন করে সরকারি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে গেলেও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোন কর্মকর্তা কিছু জানেন না। অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বল্পতার কারণে স্থানীয় ভাড়াসিমলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাঈম ৭/৮ মাস আগে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীকে জানান এর পর টনক নড়লে একের পর এক থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় দৌড়ঝাপ, অভিযোগ, তদন্ত, বেতন স্থগিত বিভাগীয় মামলা সহ অনেক কিছু হলেও গতকাল স্কুলে যেয়ে খোঁজ মেলেনি ওই শিক্ষিকার। তবে মুঠোফোনে শিক্ষিকা মনিরা জাহানের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান আমি বিধি মোতাবেক যা করার তাই করেছি। ছুটি বা অনুপস্থিতির বিষয়ে এড়িয়ে ফোন কেটে দেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয় যোগদান করার পর হতে বিষয়টি দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক হোসেন স্যার এবং টিও স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমার বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ১জন শিক্ষকন দীর্ঘ ৩ বছর না থাকায় ৪ জন শিক্ষক নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনোর দারুন ব্যাঘাত ঘটছে। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষা অফিসার ওমর ফারুকের নিকট ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান আমি ৭/৮ মাস আগে এই উপজেলায় যোগদান করার পর বিষয়টি জানতে পেরে আমি সাথে সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঐ সহকারী শিক্ষিকা মনিরা জাহানের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়ের করা বিভাগীয় মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)