স্মার্ট কৃষির যুগে তালা
ফারুক সাগর:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্মার্ট কৃষির যুগে প্রবেশ করেছে। উপজেলার আচিনতলা গ্রামের তরুণ উদোগ্যতা রায়হান আওরঙ্গীর হাত ধরে স্মার্ট কৃষির যুগে প্রবেশ করল তালা। আগামীর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন এবং কৃষিকে বহু মুখীকরণ মাধ্যমে টিকে থাকার প্রধান লক্ষ্য স্মার্ট কৃষির। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি সহ কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,২০ শতাংশ জমিতে স্মার্ট পদ্ধতিতে পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। ৬০% সূর্যালোক প্রতিরোধী এই হাউজে ক্ষতিকর পোকা মাকড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইনসেট নেটসহ ড্রিপ পদ্ধতিতে সেচ সুবিধা ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে একদিকে কম খরচে উচ্চ মূল্যের ফসলের রোগ মুক্ত চারা উৎপাদন ও বিপণন সহজলভ্য হয়েছে। অন্যদিকে পলিনেট হাউজে সারা বছর জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ চলমান রাখা সম্ভব হচ্ছে।
স্মার্ট কৃষি উদোগ্যতা রায়হান আওরঙ্গী বলেন,কোকো ডাস্ট,ভার্মি কম্পোষ্ট ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ধরনের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমানে তার কাছে নেদারল্যান্ডের মাল্টি স্টার জাতের পরাগায়ণ যুক্ত শশা প্রতিটি চারা ২০ টাকা,টপলেডি,বাবু,রেডলেডি,তাইওয়ান কিং জাতের পেঁপে ২৫থেকে ৩০টাকা,গ্রীষ্মকালীন সামার কুইন৫৫ জাতের পাতাকফি ২টাকা,পরাগায়ণ যুক্ত নেদারল্যান্ডের রেড আর জেড ক্যাপসিকামের চারা ১৫টাকা,রাবমাসি ওডিসি-৩ জাতের সজনে৬৫ থেকে ৭০টাকা, বারমাসি সানড্রপ জাতের ঝালের চারা ২টাকা,ইউনাইটেড লুনা জাতের বেগুনের চারা ১টাকা,গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারি-৮ জাতের টমেটোর চারা ২টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া পরবর্তীতে ভারতের নাসিকের চয়ন জাতের মিষ্টি আঙুর,চুই ঝাল,সর্ব রোগের মহা ঔষধ ননিফলের চারা উৎপাদন করা হবে। এ সকল চারা ট্রাইকোডারমা দিয়ে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে শোধন করা হয়। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন করার কারণে সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।
তিনি আরও বলেন,সফলতা পাওয়ায় এ আর বি এগ্রো ফার্ম নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের একটি একাউন্ট্ খোলা হয়েছে। তাছাড়া এ সকল উচ্চ মূল্যের ফসলের পরিচর্যার জন্য ০১৭১১২৮৯৫১০ নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
স্মার্ট পদ্ধতিতে কৃষিতে বিনিয়োগ করলে কেউ বেকার থাকবে না। নিজে উদোগ্যতা হওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন “সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তরুণ প্রজন্ম স্মার্ট কৃষির সাথে যুক্ত হলে দেশে অর্থনীতির উপর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে”।
সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি আজ স্মার্ট কৃষি উদোগ্যতা হতে পেরেছেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসছে। প্রায় তিন বছর আগে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে কৃষি সাথে যুক্ত হন। অনভিজ্ঞতার কারণে প্রথমে কয়েকটি প্রকল্পে লোকসান হয়। কিন্তু পরিকল্পিত ও সঠিকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আজ তিনি সফল।
তালা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন,
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালনায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির ম্যাধমে খুলনা কৃষি আঞ্চলিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজটি স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সারা বছর রোগ মুক্ত উচ্চ মূল্যের ফসলের চারা উৎপাদন করা যাবে। তিনি আরও বলেন,২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে একমাত্র রায়হান আওরঙ্গীকে আমরা পলিনেট হাউজ স্থাপনে সহযোগিতা করেছি। আমার জানা সাতক্ষীরা জেলায় তালা এবং কালিগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্প প্রাথমিক ভাবে চালু করা হয়েছে। পরবর্তীতে সফলতা পেলে আমাদের এই প্রকল্প বিস্তার লাভ করবে। তিনি আরও বলেন,খুলনা কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি তার প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। তিনি উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তরুণ উদোগ্যতা রায়হান আওরঙ্গীকে সুপারিশ করেছেন বলে জানান তিনি।