এবার তীব্র গরমের শঙ্কা, রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪৪ ডিগ্রি
ডেস্ক নিউজ:
শীতের মতো এবার গরমেও আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ অব্যাহত থাকতে পারে। এপ্রিল ও মে মাসে তীব্র গরম পড়তে পারে। দেশের ইতিহাসে পূর্বের রেকর্ড ভেঙে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রিতে উঠতে পারে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. আবদুল মান্নান বলেন, আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বোঝা যাচ্ছে, আসন্ন মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকেই তাপমাত্রার দাপট বাড়তে থাকবে। আমাদের এখন ওয়ার্মিং পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বর্তমানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যে অবস্থায় থাকার কথা, তার থেকে আমরা ওপরে আছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো বার্তা দিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনোর প্রভাবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এবার গরমের তীব্র্রতা বেশি থাকবে। গত বছর উষ্ণতা যেমন রেকর্ড করেছে এ বছর সেই রেকর্ড ভাঙতে পারে। এল নিনোর প্রভাবে দেশে কমছে বৃষ্টিপাত আর বাড়ছে দাবদাহ। এবার গরমের হ্যাজার্ড আবির্ভূত হবে। হ্যাজার্ডগুলো নতুন ডাইমেনশনে শুরু হবে। যেগুলো নতুন কোনো এলাকায় বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। অতীতে আমরা মার্চ মাসে তীব্র গরম পরিস্থিতি রেকর্ড করেছি। যেহেতু জানুয়ারিতে ওয়ার্ম উইন্টার পার করেছি, সেহেতু মার্চের শেষে তীব্র গরম পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। গরমের মাস হিসেবে এপ্রিল-মে তো আছেই।
এদিকে আগামী তিন মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। দেশে তিন থেকে পাঁচটি মৃদু তাপপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়, মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার বার্তা দিয়েছে সংস্থাটি। শীতের মতো গরমেও এবার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
দেশে চলতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, গত বছরের ১৫ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই রেকর্ড ভাঙতে পারে এবছর। আর ১৭ এপ্রিল দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে। সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উষ্ণতার রেকর্ড ভাঙতে পারে আগামী এপ্রিল মাস।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) মতে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ দিন দেশের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বয়ে যায়। চলতি বছর তা অতিক্রম করতে পারে। তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪৪ ডিগ্রিতে ঠেকতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, দাবদাহের আওতাধীন এলাকা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের নতুন কারণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ জানান, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের স্তর ঘন হচ্ছে এবং স্থল ও সমুদ্র উভয় ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা বাড়ছে। যেহেতু আমরা এল নিনো পর্যায়ে প্রবেশ করছি, শুষ্ক আবহাওয়া আরো কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে।
সুতরাং, বাংলাদেশে দাবদাহের তীব্রতা এবং সময়কাল বাড়তে থাকবে। এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অন্তত টানা পাঁচ দিন কোনো এলাকায় গড় তাপমাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি অব্যাহত থাকলে ঐ ঘটনাকে দাবদাহ বলা হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু দাবদাহ ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র দাবদাহ হিসেবে বিবেচনা করে।