বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশে দেবহাটার ১৩শ ২০ বিঘা জমির মালিক সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির ১৩২০ বিঘা জমি লাওয়ারিশ হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বহাল রেখেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বে । জমির মালিক দাবিদারদের রিভিউ পিটিশন ১৬৮/২১ শুনানী শেষে গত ২৫ জানুয়ারি এ রায় ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এটর্ণি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন জানান, ২০২৪ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ সদেস্যর বিচারপতিদের বে সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ নং মামলার শুনানী করেন। শুনানীকালে রিভিউকারি আনছার আলী ও তাদের সহযোগীদের পক্ষের আইনজীবীগণ ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের সস্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ভ‚মি সংক্রান্ত সভা শেষে রেজুলেশনে দেঃ ১৮/১০ মামলার বিবাদীগণকে ৪৩৯.২০ একর জমির মালিক হিসেবে উল্লেখ করা ও পরবর্তীতে খাজনা জমা দেওয়া ছাড়াও বিএস রেকর্ডের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষে তিনি, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নুরুল ইসলাম চৌধুরী, হরিদাস পাল এ জমি রাষ্ট্রের বা সরকারি সম্পত্তি মর্মে ব্যাখ্যা দেন। ২৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড. অন রেকর্ড হরিদাস পাল বলেন, ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শুনানীকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এটর্ণি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের বিচারক কাগজপত্র পর্যালোচনা শেষে ওই সম্পত্তি লাওয়ারিশ হিসেবে গণ্য করে রিসিভার নিয়োগের আদেশের বিষয়টি তুলে ধরেন। তা ছাড়া মূল দেওয়ানী মামলা (১৮/১০) ২০১৮ সালে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রিভিউ এর কোন মেরিট নেই। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নালিশী সম্পত্তি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রচলিত বিধি বিধান ও যথাযথ আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নির্দেশ দিয়ে জমি সরকারের বলে নিশ্চিত করেছেন। সে কারণে মূল মামলার বিবাদীগণ স্বর্তহীন হওয়ায় পূর্ণঃবিচার চেয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে দেঃ মামলার বিবাদীরা ভুল তথ্য দিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ওই জমির মালিকানা স্বীকার করিয়ে নিয়ে রেজুলেশন করিয়ে নিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের ওই আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশকে বিতর্কিত করেছে। এসব কারণে রিভিউকারিদের স্বত্বাবিহীন রিভিউ পিটিশনটি খারিজের আবেদন জানান তিনি।সবশেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আদেশে বলেন, উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনিলাম। তর্কিত আদেশটি পর্যালোচনা করিলাম । যাহা দরখাস্তকারি পূণঃ নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। আমরা রেকর্ডপত্রে দেখেছি যে, কোন ভুল বা ত্রæটি পরিলক্ষিত হয়নি। যাহা আদেশ নং ৪০(৭), বিধি নং-১(১) দেওয়ানী কার্যবিধি আইন,১৯০৮। সিভিল রিভিউ পিটিশনটি খারিজ করা গেল। এবং রিভিউ আবেদনটি গুণগত মানের দিক থেকে খারিজ করা গেল। অফিসকে নির্দেশ দেওয়া গেল এক্ষুনি হাইকোর্ট বিভাগে এ নির্দেশ পাঠিয়ে বাস্তবায়নের জন্য।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট অন রেকর্ড হরিদাস পাল বলেন, সর্বোচ্চ বিভাগের আদেশে দেঃ ১৮/১০ মামলার বিবাদীগণকে স্বত্বহীন করা হলেও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের জমির মালিকানা সম্পর্কিত ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বরের রেজুলেশনটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি কাগজে প্রধান বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আদেশ না জেনে জেলাপ্রশাসকের জমির মালিকানা সম্পর্কিত আদেশকে বিচারের উর্দ্ধে রেখে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা ও বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেকারণে জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে যারা এসএ ও বিএস রেকর্ড তৈরির মাধ্যমে মালিকানা দাবি করে সম্প্রতি খাজনা জমা দিয়েছেন তারা সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে স্বত্বহীন হয়েছেন। দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে তারা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি জমি দখল করে নিজে ও লীজ দিয়ে কমপক্ষে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব লুটপাট করেছেন। এ কারণে ওইসব লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মামলা করতে পারবেন। তাতে অন্যান্যস্থানের জবরদখলকারিরা পিছু হঠবে।
দেবহাটার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ২৫ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতে জমির স্বত্বহীন হওয়ার পরও সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কাজী গোলাম ওয়ারেশ, ইকবাল মাসুদ, আনছার গাজী, আব্দুল আজিজ, ডাঃ নজরুলসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ঘেরের মাছ কেনার নাম করে কৌশলে নাশকতা মামলার আসামী বিএনপি নেতা নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম, মাটি কুমড়ার জবেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে আনারুল ইসলাম (মাছ), ইন্দ্রনগরের নিতাই মাষ্টারের ছেলে মিলন বাবু, নওয়াপাড়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা গোলাম ফারুখ বাবু, দক্ষিণ পারুলিয়ার মাছ ব্যৗবসায়ি ইলতুত, দেবহাটা নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বয়ারডাঙা গ্রামের বাবর আলী মোড়লের ছেলে নজরুল ইসলাম পারুলিয়ার শফিকুর রহমান ওরফে সেঝ খোকন, বাবুরাবাদের বেড়ে শওকতসহ কয়েকজন ১৩২০ বিঘার বড় অংশ দখলে নিয়েছে। বর্তমানে তারা ওই জমিতে স্কেবটর ম্যাশিন দিয়ে উঁচু ও চওড়া করে বেড়িবাঁধ বানাচ্ছেন। আরিজুল ইসলাম ও মাছ আনারুলসহ কয়েকজন ভ‚মি খাদক এখন প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ যেন চোর তাড়িয়ে ডাকাত পোষার মত অবস্থা। ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর বাস্তুচ্যুত হওয়া ভ‚মিহীনদের বড় অংশ ওই জমিতে পূর্ণবাসনের লক্ষে তোড়জোড় চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসন কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে খলিষাখালিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়ানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। বর্তমান সরকারের সময়ে পরাজিত শক্তির কাছ থেকে যে সব বিএনপি নেতা কর্মীরা খলিষাখালির ১৩২০ বিঘা জমি দখলে নিয়ে সরকারি রাজস্ব লুটপাঠ করে নিজেদের রসনা তৃপ্ত করতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ‘ভ‚মিহীনদের খাস জমির অধিকার, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার’বর্তমান সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থেকে উচ্ছেদ হওয়া অসহায় ভ‚মিহীনদের চিহ্নিত করে খলিষাখালিতে পূর্ণঃবাসন করতে হবে। বর্তমান সরকার খুব শ্রীঘ্র নব্য ভ‚মি খাদকদের খলিষাখালি থেকে উচ্ছেদের জন্য তৎপর হবেন বলে মনে করেন প্রত্যাশা স্থানীয় সুশীলসমাজের নেতৃবৃন্দের।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ভারত- পাকিস্তান বিভাগের পরে জমি ও ঘরবাড়ি ফেলে চলে যান চÐিচরণ ঘোষ ও তার শরীকগণ। তারা ওই জমি কারো কাছে হস্তান্তর না করে গেলেও ভ‚মিদস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা, সহকারি ভ‚মি কমিশনার, ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে জাল কাগজপত্রের সাহায্যে ওইসব জমির রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। দিয়েছেন খাজনা। রহিমপুরের মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী এ নিয়ে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে দেঃ ১৮/১০ নং মামলা করলে ওই জমি লাওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে পর্যবেক্ষণ করে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন বিচারক এএইচএম মাহামুদুর রহমান। এ আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে হেরে যেয়ে ডাঃ নজরুল ইসলামসহ বিবাদীপক্ষ সুপ্রিম কার্টে সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ নং পিটিশন করেন।
দূর্ণীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যেয়ে সাধারণ ভ‚মিহীন থেকে সাংবাদিকরা পুলিশ ও ভ‚মিদস্যুদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা নাশকতা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক মামলায় জেল খেটেছেন।