পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু

ডেস্ক নিউজ:

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের দেশটি নৌবাহিনীর জাহাজে ফিরিয়ে নিতে চায়। এরই মধ্যে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মিয়ানমারের বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে এ পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩২৯ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০০ সদস্যকে ফেরত পাঠাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বিজিবির সহযোগিতায় টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্প‌তিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সীমান্তরক্ষীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের গভীর সমুদ্র দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

মাসখানেক ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল সংঘাত চলছে। সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্যে দুই গ্রুপের সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের সীমান্তবাসীর মধ্যেও। ওপার থেকে উড়ে আসা মর্টার শেলে প্রাণ যায় বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজনের, গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর মধ্যে গত সোম ও মঙ্গলবার বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে তুমুল গোলা ও গুলিবর্ষণের শব্দে আঁতকে ওঠেন বাসিন্দারা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে চলে যেতে বাধ্য হন। তবে গত বুধবারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে গুলির শব্দ পাওয়া না গেলেও উখিয়া সীমান্তেও ওপার থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ বন্ধ বা যুদ্ধবিরোধীর কোনো তথ্য না থাকায় আতঙ্ক কাটেনি বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষদের।

যেভাবে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যদের

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে গত রোববার থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশনসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে তাদের অস্ত্রমুক্ত করে বিজিবি। পালিয়ে আসাদের আহতদের চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়। সবাইকে এতদিন নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবি হেফাজতে রাখা হলেও গতকাল তাদের মধ্য থেকে বিজিপির ১০০ সদস্যকে টেকনাফে সরিয়ে নেয়া হয়।

এই সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে তুমব্রু থেকে ১০০ জনকে টেকনাফের হ্নীলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফেরানো সুবিধাজনক করতে ঘুমধুম থেকে টেকনাফের হ্নীলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকায় এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় পালিয়ে আসাদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর কথা হয়েছে। সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানো হলে টেকনাফের দিক থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। এ জন্য ঘুমধুমে আশ্রয় দেওয়া বিজিপি, সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার ১০০ সদস্যকে টেকনাফে স্থানান্তর করে হ্নীলার একটি স্কুলে রাখা হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি রাজ্য বিদ্রোহীরা দখলে নিলেও এখন পর্যন্ত মংডু এলাকাটি জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের সেখানেই ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার সরকার। টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে মংডুর যাতায়াত সুবিধা হওয়ায় সেখানে নেয়া হতে পারে তাদের।

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিজিবির গাড়িতে করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনকে টেকনাফ উপজেলার উপকূলবর্তী হ্নিলা ইউনিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)