কালিগঞ্জের ইউনিক ক্লিনিকের ভূল চিকিৎসার কবলে বৃদ্ধ ফুলজান বিবি
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা কদমতলা এলাকার অনুমোদনবিহীন ইউনিক ক্লিনিক এÐ ডায়েগনস্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনের ফেলে ফুলজান বিবি নামে এক বৃদ্ধা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। অপরদিকে ওই বৃদ্ধার ছেলে সিভিলসার্জনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় তদন্ত কার্যক্রমকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মুঠো মুঠো টাকা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভাঙানমারি গ্রামের আব্দুল মজিদ গাজীর ছেলে তহিদুল ইসলাম জানান, তার মা ফুলজান বিবি (৬৩) দীর্ঘদিন যাবত পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। গত বছরের ২৭ জুলাই গ্রাম ডাক্তার নাসিরউদ্দিনের পরামর্মে নলতার কদমতলার ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাঃ অনন্যাকে দেখান তিনি। ডাক্তারের পরামর্শ মত রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ১০ হাজার টাকা খরচ করেন তিনি। পরদিন ২৮ জুলাই ১৪ হাজার টাকা চুক্তিতে মায়ের পেটের টিউমার অপারেশন করেন ডাক্তার অনন্যা। অপারেশনের পর তিন মাস না যেতেই মায়ের পেটে নতুন করে যন্ত্রণা শুরু হয়। তাকে আবারো নেওয়া হয় কদমতলা ইউনিক কিèনিক এন্ড ডায়েগোনেস্টিক সেন্টারে। অনন্যা রানী তাকে না দেখে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় তার কাছে থাকা ডাঃ অনন্যার ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎিসাপত্রসহ সকল ডাক্তারি কাগজপত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান ওই ক্লিনিকের অংশীদার মাসুম ও তার কর্মচারিরা।
একপর্যায়ে সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডশনের ডাক্তার ফয়সাল আহম্মেদ, সাবেক সিভির সার্জন ডাঃ এসজেড আতিক ও ডা শরিফুল ইসলামকে দেখানো হয় মাকে। অপারেশন ত্রæটিপূর্ণ হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে খুলনা হার্ট ফাউন্ডশনে গত ২৩ ডিসেম্বর তার অবারো অপারেশন করানো হয়। এ সময় তারা জানতেক পারেন যে ডাঃ অনন্যা অপারেশনের সময় টিউমারের আংশিক রেখেই সেলাই করেছিলেন। যে কারণে ৩ জানুয়ারি বায়োপসি রিপোর্টে মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। সোনার গহনা ও জমি বন্ধক ছাড়াও বিভিন্ন সমিতির মাধ্যমে ধার নেওয়া দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ করেও মাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হবে বলে বলে তিনি বুঝতে পেরেছেন। প্রতিকার চেয়ে তিনি গত ১৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
নলতার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তৌহিদুল ইসলাম বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন জানতে পেরে ইউনিক ক্লিনিক এ ডায়েগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায়িক অংশীদার মাসুম, গোলাম মোস্তফাসহ কয়েকজন তাদের দূর্ণীতি ঢাকতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে টাকার থলি নিয়ে বাণিজ্যে নেমেছেন ওই কিèনিকের ব্যবসায়িক অংশীদার মাসুম ও গোলাম মোস্তফা। ফলে কালিগঞ্জের দু’একজন সাংবাদিক ছাড়া অনেকেই এ ঘটনা জানেন না মর্মে মুখে ক্লুপ এঁটেছেন।
নলতা কদমতলা এলাকার আবু সাঈদ, সামছুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, অনুমোদন ছাড়াই কেবলমাত্র নিবন্ধনের আবেদন করে সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নলতা কদমতলায় ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে অপারেশনের নামে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কুমারী মায়েদের গর্ভপাত করানোর অভিযোগ রয়েছে। এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স মাঝে মাঝে ডেকে এনে অপারেশন করানো হয়। প্যাথালজি টেষ্টের নামে করা হয় বালতি টেষ্ট। নাড়ি কাটতে যেয়ে মৌ কেটে ফেলার অভিযোগ রয়েছে ওই ক্লিনিকে।
এ ব্যাপারে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায়িক অংশীদার গোলাম মোস্তফা তাদের ক্লিনিকে কুমারী মায়েদের গর্ভপাত করানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, ডাঃ অনন্যার অপারেশনে ভুল ছিল না। ক্যান্সার আগে থেকে হয়েছিল ফুলজান বিবির। এখন ধরা পড়েছে বায়োপসির পর। এখন আর কি করার?
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ সৈয়দ রুস্তম সুফিয়ান জানান, এ ঘটনায় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরকে সভাপতি, সিভিল সার্জন অফিসের ডাঃ তামিম হাসান ও কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাসান জাফুরিকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেওয়া হবে।