পৃথিবীজুড়ে যেভাবে কাজ করে ইন্টারনেট
প্রযুক্তি ডেস্ক:
আপনি যে তথ্য বা ভিডিও খুঁজছেন ইন্টারনেটে; তা গুগল ডাটা সেন্টার থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আপনার হাতের নাগালে এসে পৌঁছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতো দূরের ডাটা সেন্টার থেকে কীভাবে মোবাইল বা ল্যাপটপে ভিডিওটি পৌঁছে?
কীভাবে পুরো বিশ্বে তথ্য বা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, কীভাবে ইন্টারনেট কাজ করছে, আর ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াটাই বা কী?
ইন্টারনেট কী?
প্রথমেই জানতে হবে, ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল আসলে কী? এটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিভাইসসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ত একটি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার ও ডিভাইস নেটওয়ার্কের সমষ্টি হলো ইন্টারনেট, যা সবার জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। ভিনটন গ্রে কার্ফকে বলা হয় ইন্টারনেটের জনক। তখন এর নাম ছিল ‘আর্পানেট’।
পৃথিবীর সব কম্পিউটার কীভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত?
পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য এক ধরনের মজবুত ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট সমুদ্রের নিচে বিস্তৃত প্রায় 8 লাখ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দিয়ে পুরো পৃথিবীকে সংযুক্ত করে রেখেছে জালের মতো। এই অভিনব যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন বন্ধ না হয়ে যায় এই কারণে ‘মিলনেট’ নামক একটি কোম্পানি ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। তবে বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়।
ইন্টারনেটের ঠিকানা
ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের একটি নিজস্ব ঠিকানা থাকতে হবে, যা আইপি নামে পরিচিত। এর অর্থ ইন্টারনেট প্রোটোকল। প্রত্যেকটা কম্পিউটার কানেকশন এর জন্য আলাদা হয়।
নেটওয়ার্কিং অবকাঠামো
ধরুন একজন প্রেরক তার বার্তা পাঠাবেন প্রাপকের কাছে। তিনি কী করবেন, প্রথমে একটা চিঠি লিখবেন, পরে এটি খামে ভরে যে ঠিকানায় পাঠাবেন সেই ঠিকানাটা খামের ওপর সুন্দরভাবে লিখে একটা পোস্ট অফিসে গিয়ে জমা দেবেন। তারপর পোস্ট অফিস একজন পোস্টম্যানের মাধ্যমে সেই ঠিকানায় প্রাপকের কাছে চিঠি পৌঁছে দেবে। ইন্টারনেট মূলত এভাবেই কাজ করে। কিভাবে? এই চিঠিতে যা লেখা হয়েছে তা হলো ডাটা। প্রেরক যে পোস্ট অফিস থেকে চিঠিটা পোস্ট করেছেন সেটা হলো তার আইপি বা প্রেরকের ঠিকানা। পোস্ট অফিস থেকে খামে উল্লেখ করা প্রাপকের ঠিকানায় চিঠিটা পৌঁছে দিলেন পোস্টমাস্টার আর এই পোস্টমাস্টারই হলো ইন্টারনেট এবং যে ঠিকানায় চিঠিটা পৌঁছানো হলো সেটা হলো প্রেরকের সঙ্গে সংযুক্ত আইপি অ্যাড্রেস বা ঠিকানা।
ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসঙ্গে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা প্যাকেট ও মেসেজ আকারে প্রেরিত হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো ডাটাকে মেসেজ বলা হয়, যা প্রেরণের আগে ছোট ছোট অংশ বা প্যাকেটে পরিণত হয়। এই মেসেজ ও প্যাকেটগুলো এক সোর্স থেকে অন্য সোর্সে আইপি ও টিসিপি ব্যবহার করে ট্রাভেল করে। আইপি হলো মূলত কিছু সিস্টেমের কিছু নিয়ম যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণের সময় তা মনিটর করে।
ইন্টারনেটের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য একে নিজস্ব গ্লোবাল নেটওয়ার্কের তার কিংবা বেতার যেকোনো একটির মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েই থাকতে হবে। এরপর গ্লোবাল নেটওয়ার্কে জড়িত থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের সঙ্গে নিজেদের কম্পিউটার রাউটার এবং সার্ভারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে বিভিন্ন ডাটা এবং ইনফর্মেশন সংগ্রহ করে নেয়। এভাবেই কাজ করে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আগে ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস করতে হবে। প্রশ্ন হলো কীভাবে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারি? মূলত দুইভাবে এটি সম্ভব। যেমন-
প্রথমত, অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে। অর্থাৎ ওয়াইফাই, মডেম, ডায়াল আপ ইত্যাদি, যেটা মূলত সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সংযুক্ত। এর মাধ্যমে প্রায় ৯৯ ভাগ ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত।
এছাড়া আরো একটি উপায় হলো, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এর প্রসেসে বর্তমানে শতকরা ১ ভাগ ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত রয়েছে। ইন্টারনেটের কাজ করার জন্য ৩টি ডিভাইসের প্রয়োজন। একটি ডিভাইস, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার চালু থাকবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইপি, যেটি থেকে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করা যাবে। আর একটি ওয়েব ব্রাউজার বা অ্যাপ্লিকেশন। যেমন- গুগল ক্রোম, মজিলা, ফায়ারফক্স ইত্যাদি। আর এই ব্রাউজার ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে পুরা পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে।
শেষে আরো একটি প্রশ্ন হচ্ছে, ইন্টারনেট কী আশীর্বাদ না অভিশাপ?
সঠিক উত্তর হলো- বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহার মানুষের জীবনে এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকে অনেকে দম বন্ধ থাকার সঙ্গেও তুলনা করেন। অনেকে আবার এর ব্যবহারের অধিকারকে রীতিমতো মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করে। ইন্টারনেট নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। মেসেজিং, ভিডিও ও অডিও কলিং ফিচারযুক্ত প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন। শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য থাকে হাতের নাগালে। কিন্তু অনেকেই এর ক্ষতিকর দিকগুলোকেই বড় করে দেখেন। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় আনার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সবার।