সাতক্ষীরায় সন্তান হত্যা ও নারী শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাক মেইল করায় দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর
রঘুনাথ খাঁ:
নিজের আট বছরের সন্তান আরিফ বিল্লাহকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে বাবা ইয়াছিন আলী এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রীদের ফাঁদে ফেলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে প্রতারণার অভিযোগে কলেজ ছাত্র মারুফ হোসেন বাপ্পিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ জিয়ারুল ইসলাম মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক যথাক্রমে অভিক কুমার বড়ালের তিন দিনের ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানী শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের বর্তমানে ধলবাড়িয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের নুর ইসলামের ছেলে ইয়াছিন আলী ও একই উপজেলা শহরের মুনজিতপুরের মৃত আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে কলেজ ছাত্র মারুফ হোসেন বাপী (২৮)।
মামলার বিবরনে জানা যায়, নির্যাতনের কারণে নানা ধুলিহর গ্রামের ইজ্জত আলীর বাড়িতে অবস্থানকারি স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের কাছ থেকে নিজের আট বছরের সন্তান ধলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আরিফ বিল্লাহকে গত ৪ জানুয়ারি বিকেলে তুলে এনে রাতে ধলবাড়িয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের নিজ বাড়িতে এনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বাবা ইয়াছিন আলী। পরে ছেলের লাশ লেপ ও কম্বল দিয়ে চাপা দিয়ে প্রেটোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে ঘরের দরজায় ছিকল দিয়ে চলে যায় ইয়াছিন। আগরদাড়ি গ্রামের নিজ মামার বাড়ি থেকে জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন সকালে পুলিশ আরিফ বিল্লার পোড়া কঙ্কাল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের মা রোকেয়া খাতুন বাদি হয়ে ইয়াছিন আলীর নাম উল্লেখ করে ৫ জানুয়ারি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অভিক কুমার বড়াল গত ১৩ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে বিচারক জিয়ারুল ইসলাম তাকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অভিক কুমার বড়াল জানান, বুধবার বিকেলে তাকে আদালত থেকে থানায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া ওই শিশুর ডিএনএ টেষ্ট করার জন্য তার মা রোকেয়া খাতুনকে ঢাকায় পাঠানো হবে।
মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, শহরের মুনজিতপুরের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে কলেজ ছাত্র মারুফ হোসেন বাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসক ডা. আরমান হোসেন নিলয় পরিচয় দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে তাদের কাছ থেকে ভিডিও কলে বা হোয়াটসএ্যাপ-ম্যাসেঞ্জার-টেলিগ্রাপে ন্যুড ছবি সংগ্রহ করতেন। সুবিধামতো সময়ে তাদেরকে ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। কখনো কখনো তাদেরকে শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন। সম্প্রতি সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রী তার খপ্পরে পড়েন। গত ২৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়ার ওই ছাত্রীর পিতা সাতক্ষীরা সদর থানায় প্রতিকার চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ১২ জানুয়ারি রাতে টোপ দিয়ে তাকে কাটিয়া লস্করপাড়ার ঈদগাহ মাঠে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে ১৩ জানুয়ারি সদর থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১),/৮(৫)(ক) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান তাকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বুধবার উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাপ্পিকে সুবিধামত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে থানায় আনা হবে।