বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র ও একজন অলোক স্যার
ইমরান হোসেন:
দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার তালার সীমান্তবর্তী খেশরা ইউনিয়নের অন্তর্গত শাহাজাতপুর গ্রামের পুন্ডরিক পাড়া। অবহেলিত পাড়াটিতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন অলোক রায় নামের এক যুবক। তবে এই শিক্ষার আলো পৌঁছে গেছে ইউনিয়নব্যাপী। ইউনিয়নের ছোট থেকে বৃদ্ধে কাছেই আলোক স্যার যেন এক পরিচিত মুখ।
কখনো গাছের ছায়ায় পাঠদান, কখনো অভিনয়, গান, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা শেখানো, কখনো ছবি আঁকার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের সাথে গভীর সম্পর্ক। গ্রামকে নগরায়ন ভাবনায় সপ্তাহে একদিন করে প্রতিটি রাস্তায় পরিষ্কার পরিছন্নতা, বৃষ্টির সময় মাটির রাস্তা গুলোতে বালি দেওয়া সহ ড্রেনেস ব্যবস্থা করে পানি সরবরাহের কাজ করার ফলে ছোট বড় সকলের হৃদয়ের স্থান করে নিয়েছেন অলক স্যার।
ছোট বেলা থেকেই অদম্য মেধাবী ছিলো নীলমণি রায়ের পুত্র দেবাশীষ রায় অলোক। একপর্যায়ে নিজ গ্রামের বাচ্চাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে চলে আসেন গ্রামে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রামটিকে এগিয়ে নিতে ২০২০ সালে বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সমাজ কর্মে প্রতিষ্ঠা করেছেন সার্বজনিন শিব-দূর্গা-রাম মন্দির।
বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত ভাবে বিনামূল্যে গ্রামের ঝরে যাওয়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, চালু করেন বয়স্ক মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা।
এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিতে প্লে ও নার্সারি বাচ্চাদের পাশাপাশি ক্লাস অন থেকে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, গণিত সহ সকল বিষয়ে বিনামূল্যে পাঠদান করেন। প্রযুক্তির সাথে এগিয়ে নিতে চালু করেছেন কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
গ্রামের অবিভাবরা জানান, আমাদের এখান থেকে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে প্রায় ১কিলোমিটার দুরে। ছোট ছেলেমেয়েদের যেতে খুবই কষ্ট হয়। অলোক স্যার বিনা মূল্যে খুবই যত্ন সহকারে পড়ায়। আমরাও পড়ি।
খেশরার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষক এসএম লিয়াকত হোসেন বলেন, নানামুখী প্রতিভার অধিকারী ছোট ভাই অলোক দক্ষিণ শাহজাদপুর গ্রামের ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন এবং রাস্তাঘাট গুলো নিজহাতে পরিষ্কার পরিছন্নতা,বয়স্কদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা করেছেন। এটি আসলেই অনেক বড় মনের ব্যাপার। এমন আলোকিত মানুষ প্রতি গ্রামে থাকলে আমাদের সমাজ পরিবর্তন হতো।
বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্রের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএম ফজলুল হক জানান, আমাদের পত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানটি করে শিক্ষার ব্যাবস্থা করে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ছোট ভাই অলক। এটি আসলেই মহৎ কাজ। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার। আমরা কোন সরকারি বেসরকারি বরাদ্দ পায় না। আমরা চাই সরকারি, বেসরকারি অথবা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসুক।
শিক্ষক দেবাশীষ রায় অলক জানান, পত্যন্ত অঞ্চল দক্ষিণ শাহজাদপুরের পুন্ডরিক পাড়া খুবই অবহেলিত ছিল। আমাদের গ্রাম অঞ্চলের বাচ্চারা শহরের বাচ্চাদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমি শহরে শিক্ষকতা করেছি, আমি চাই নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে এই অঞ্চলের বাচ্চাদের এগিয়ে নিতে । তাই আমি বন জঙ্গল, ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে আমি এই বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি এখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে থাকি সুদক্ষ শিক্ষক দ্বারা। একটা সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা, একটা সুন্দর প্রজন্ম, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র প্রত্যাশা করে। বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র স্বপ্ন দেখে প্রত্যেক সম্ভাবনামায় বাচ্চাকে আর সঠিক স্বপ্নে পৌঁছে দিতে। বিদ্যা বিকাশ কেন্দ্র কাজ করছে, করবে, করে যাবে সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।