জামিন পেলেন সাতক্ষীরা -১ আসনের নব নির্বাচিত এমপি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারনা চালানোর সময় কর্মীদের মাঝে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে নির্বাচন কমিশানের নির্দেশে দায়েরকৃত মামলায় জামিন পেলেন সাতক্ষীরা-১ (তালা- কলারোয়া) আসনের নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ মনোনীত সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন। মঙ্গলবার তিনি আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করলে সাতক্ষীরার আমলী আদালত- ৪ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ আশিকুর রহমান তাকে পাঁচ হাজার টাকা বÐে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।
আসামী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের করিম সরদারের ছেলে।
মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে নিজ নির্বাচনী এলাকা সাতক্ষীরা-১ (তালা- কলারোয়া) আসনের কলারোয়া উপজেলার বাটরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, আগামি ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোন দলের ভোটারগণ ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবে না। তাদের দলের কোন প্রার্থী নেই। তারা যদি ভোট কেন্দ্রে যায় একটা গÐগোল বাঁধবে। আমার কর্মীরা যদি দেখে তারা নৌকায় ভোট দেয়নি , তাহলে অন্য আর একটি ঝামেলা হবে। তার চেয়ে তারা কেন্দ্র যাবে না। আমরা নির্বাচিত হলে কথা দিচ্ছি তাদের কোন ক্ষতি হবে না। এটা হলো বড় ম্যাসেজ। বিষয়টি স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মুজিবর রহমান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন। প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ তৎসহ সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর দফা ১১(ক) এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি মাননীয় নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে অনুযায়ি নির্বাচন কমিশনার ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য জেলা নির্বাচন কমিশনারকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি ভোটের দুই দিন আগে কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ওহিদ মুর্শিদ বাদি হয়ে ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের নাম উল্লেখ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ তৎসহ সংসদ নির্বাচন রাজলৈনতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮, ১৮(১) ধারায় কলারোয়া থানায় ২ নং মামলা দায়ের করেন।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন মঙ্গলবার আমলী আদালত-৪ এ হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আসামীপক্ষে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ অনেকেই শুনানীতে অংশ নেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ আশিকুর রহমান উভয়পক্ষের শুনানী শেষে আসামী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনকে পাঁচ হাজার টাকা বÐে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।
এদিকে তালা ও কলারোয়া আসনের সাধারণ ভোটাররা জানান, মামলা হওয়ার পরও ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ফ্রি স্টাইলে নিজের প্রতীকের পক্ষে স্বদলবলে প্রকাশ্যে প্রচার ও প্রচারনা চালিয়েছেন। এমনকি ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি তার নিজ ভোট কেন্দ্র সিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রশাসনের উপস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে যেয়ে নিজের ভোট দিয়েছেন। ভোটদান শেষে ভোট কেন্দ্রের মাঠে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সামনে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, আনছারসহ আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের সামনে স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন । এ সম্পর্কিত ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা অন্য প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের জন্য হতাশাজনক ছিল। এ দৃশ্য দেখে ও শুনে অনেক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরাও দায়িত্ব পালন না করে ভোট কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। ফলে ভোটের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভোটের আগে নয়, এমপি হিসেবে ভোটে জয়লাভ করার পর আদালত থেকে জামিন পাওয়া সাধারণ মানুষ ভালভাবে মেনে নিতে পারছে না।
এদিকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, আসামীপক্ষের জামিন শুনানীতে জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটরের অংশ নেওয়া আইনসম্মত নয়। আসামী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের পক্ষে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফসহ কয়েকজন অতিরিক্ত পিপি কিভাবে অংশ নিলেন তা তাদের বোধগম্য নয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)