ভোটের দিন কি সরে যাবে জাতীয় পার্টি?
ডেস্ক নিউজ:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর একদিন বাকি। ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবারও ভোটে আসেনি বিএনপি। শরিকদের জন্য ৩২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২৬টি জাতীয় পার্টিকে, ছয়টি আসন ১৪ দলের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টি-জেপিকে ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
এদিকে ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রী প্রার্থীসহ ২৮টি দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। একাত্তর মঞ্চে প্রশ্ন উঠেছে, ২০১৮ সালে বিএনপির মতো ভোটের দিন নির্বাচন থেকে সরে যাবে না তো জাতীয় পার্টি?
ভোটের মাঠে যখন এতো প্রশ্ন তখন দলটির চেয়ারম্যানের মুখ থেকে বের হলো- ‘এই নির্বাচন সরকারের কাছে স্পেশাল ইলেকশান অপারেশন্স’। তিনি আরও বলেন, ‘চাপে পড়ে নির্বাচনে আছি’।
শুক্রবার রাতে এই প্রশ্নকে সামনে রেখে একাত্তর টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর মঞ্চে যুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
একাত্তর টেলিভিশনের হেড অব এডিটরিয়াল ও একাত্তর মঞ্চের সঞ্চালক নুর সাফা জুলহাজ জিএম কাদের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন রাখেন, আপনারা এই চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি না?
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিএম কাদের সাহেব কী বললেন, না বললেন উনার খবর আমি রাখি না। আমি সাদামাটা মানুষ, আমি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তারা কোন বেড়াজালে থাকেন, কোন চালে ঝোলেন সেগুলো আমি জানিনা।
নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, নির্বাচন হবে স্বাভাবিক নিয়মে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে যে ধরনে শাসনতান্ত্রিক নিয়ম সেভাবে ভোট হবে। সময় যখন আসবে তখন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে মনে হচ্ছে একটা যুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন করবে বাঙালিরা, সেখানে দুনিয়ার সব লোক ডেকে এনেছেন; এটা বাজে প্র্যাকটিস বলে মনে হয়, যোগ করেন মোমেন।
তবে কারা বিদেশি লোক ডেকে আনলো, সঞ্চালকের এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিগতভাবে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। যার ফলে অন্যকে দেখানোর জন্য আমাদের সার্টিফিকেট নিতে হয়।
ভোটে সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি, এ প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও আশপাশের দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী সংঘাতের সম্ভাবনা আছে। তবে এবারে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে এবং সংঘাতের পরিমাণ কিছুটা কম হবে বলে মনে হয়।
আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো বড় রকমের সংঘাত আমি দেখিনি, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এখন পর্যন্ত দেশে ঘটে যাওয়া নির্বাচনী সংঘর্ষকে ‘কম হয়েছে’ মন্তব্য করে মোমেন বলেন, এগুলো আমাদের দেশে স্বাভবিক ব্যাপার।
কেন্দ্রে ভোটার আনাকে সব সময়ের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মোমেন বলেন, যখন অনেক দল নির্বাচন করে না, তখন সবার জন্যই ভোটার আনা চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, হিলারির যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস সিনেটরের নির্বাচনে দেড় শতাংশ লোক ভোট দিয়েছে এবং সেটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এখানে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যকে কি নাম্বার দিয়ে নাকি মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণকে দিয়ে করবেন?
মোমেন বলেন, আমার জনগণ যদি স্বস্তস্ফুর্ত উদ্যোগে ভোট দেয়, তাহলে আমি সেটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো।
তিনি বলেন, বিদেশে বিভিন্ন পন্থায় ভোট দেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে লাইন ধরে ভোট দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। অনেক দেশে ভোট না দিলে জরিমানা করে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় ভোট না দিলে ৫০ ডলার জরিমানা করা হয়। এগুলো আমাদের দেশে এখনও হয় নাই। তাই আমাদের দেশে যে ভোট হবে তাতে আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে যখন সব দলের প্রতিদ্বন্দিতা হয় তখন অনেক ভোট পরে। উদাহরণ হিসেবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৮ শতাংশ ভোট পরার উদাহরণ দেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নির্বাচনকে নিয়ে ভেতরে-বাহিরে সহিংসতার আশঙ্কা, বাড়তে পারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক চাপ; এগুলো চ্যালেঞ্জ দেখেন কি না প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, সহিংসতা কিছু হবেই, সেটা আমাদের সংস্কৃতিতেই আছে। আর চাপ, এগুলোতে আমি বিশ্বাস করিনা।
তিনি বলেন, আমরা এখন আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির দেশ। আমাদের সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন তারা দয়াদক্ষিণ্য করেন না। আমরা জিনিস তিনি কেনেন, কেননা আমি তাকে সস্তায় দেই, সময় মতো দেই। অন্য জায়গায় এতো সস্তায় পায় না। তিনি যদি আমার কাছ থেকে না নেন, তাহলে তার কনজিউমাররা সাফার করবে। তাই এগুলো নিয়ে আমি চিন্তিত না, চাপেও নেই।
মোমেন বলেন, এই মুহূর্তে যে চাপ অনুভব করছি তাহলো- সাংবাদিকদের চাপ ও একটি স্বচ্ছ, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনটা আমাদের মনের তাগিদ। জনগণ যদি আমাদের ভালো বলে, তাহলে আমরা ভালো। যদি মন্দ বলে তাহলে তো গেলো। সুতরাং আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই। বিদেশি কে কী করলো তা নিয়ে ভাবি না। আমরা যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তখন বহু বিদেশি আমাদের দেখতে পারে নাই। আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস ছিল। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।