রেলে নাশকতার ঘটনায় আটক ৯
ডেস্ক নিউজ:
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও র্যাব-১ এর যৌথ অভিযানে নাশকতার অভিযোগে নয়জন আটক করা হয়েছে। তবে রেলের ঠিক কোন কোন ঘটনায় তারা জড়িত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটক ৯ জন হলেন আল আমিন (৩৮), হৃদয় মিয়া (২৮), হানিফ হোসেন (৪০), মো. ইয়াছিন (২০), মনিরুজ্জামান ওরফে সুমন সরদার (২২), মো. রুমান (২০), মো. সজীব (১৮), মো. নীরব (১৮) ও মো. হৃদয় (১৮)।
মোসতাক আহমদ বলেন, ‘আটকরা সামান্য কিছু উৎকোচের বিনিময়ে চলমান হরতাল অবরোধকে কেন্দ্র রেললাইন ও ট্রেনে নাশকতা করতো। সম্প্রতি নেত্রকোনা থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশনে আগত একটি ট্রেনের বগিতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় একজন মা-শিশুসহ ৪ জন নিহত হোন। তারই ধারাবাহিকতায় র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সহযোগিতায় সন্ধ্যা থেকে অভিযান চালিয়ে নয়জনকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি- এরা কোন কুচক্রী মহলের হয়ে স্বল্প টাকার বিনিময়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকে। তারা বিভিন্ন জায়গাতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করবো। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে আমরা রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাবো। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রীরা নিরাপত্তা নিশ্চিত অনুভব না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
ভবিষ্যৎতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা আছে কি না, থাকলে সেক্ষেত্রে বাড়তি কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোসতাক আহমদ বলেন, ‘প্রথমে বাস-ট্রাকে অগ্নি-সন্ত্রাস হতো। কিন্তু অতি সম্প্রতি সময়ে তা রেলের ওপরেও এসেছে। যার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাশকতাকারীরা এ ধরনের কাজ করে কখনো রেহাই পাবে না। বিভিন্ন রেলস্টেশনে আমাদের সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রয়েছে। ট্রেন আসা ও যাওয়ার সময় নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি, নাশকতাকারীরা আর এ ধরনের কাজের সাহস পাবে না।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ঘাটতি ছিল কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেটা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে আমাদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার, তা আমরা করে যাবো।
নাশকতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করেছি। তারা সন্দেহভাজন নাশকতাকারী। এরা বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোসতাক আহমদ বলেন, টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যে সব অপরাধীরা রয়েছে, তাদের ডাটাবেস আমরা সংগ্রহ করেছি। এসব আসামিদের আমরা প্রতিনিয়ত নজরদারি করছি।
ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। সেই সঙ্গে আমাদের অভিযান অব্যাহত। আমরা মূলহোতা কিংবা অগ্নিকাণ্ডে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করলে আপনাদের জানবো।
গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুন চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই রেলের যাত্রী ছিলেন। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসে।